
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম হত্যাকাণ্ডে প্রতিবেশী জুনেল মিয়াকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। তল্লাশির সময় আসামির দেখানো বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা ভিকটিমের বোরকা, স্কুলব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করে পুলিশ।
গত ১২ জুন সকাল ৭টায় পাশের সিংগুর গ্রামে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় নাফিছা। এ বিষয়ে কুলাউড়ায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
এর দুই দিন পর ১৪ জুন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ির পাশের ছড়ার পাশে দুর্গন্ধ পেয়ে ভিকটিমের ভাই ও মামা অর্ধগলিত লাশ খুঁজে পান এবং পুলিশকে খবর দেন।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় থানায় ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি হত্যা মামলা করা হয়।
ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের (অতি. দায়িত্বে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার গোলম আপ্সার, পুলিশ পুরিদর্শক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
দ্রুততম সময়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল (অতি. দায়িত্বে কুলাউড়া সার্কেল) নেতৃত্বে কুলাউড়া থানার অফিসারদের নিয়ে কয়েকটি বিশেষ টিম গঠন করে আশপাশে ব্যাপক তল্লাশি করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে একটি ঝোপ থেকে ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ, বই এবং একটি জুতা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশেষ ৬টি টিম গঠন করা হয়। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, আলামত উদ্ধারের জায়গা এবং নারীঘটিত বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা দেখে সন্দেহ হওয়ায় আমরা জুনেল মিয়াকে আটক করেছি।
পরে তার মোবাইল চেক করে পর্নো সাইটে ব্রাউজিংয়ের তথ্য দেখে সন্দেহ আরও বাড়ে। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে দুপুর থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে পুলিশ সুপারের সামনে রাত ১২টার দিকে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে।
সে জানায়, ভিকটিম তার বাড়ির সামনের একটি রাস্তা দিয়ে প্রায়ই স্কুল ও প্রাইভেট পড়তে যাওয়া-আসা করত। সেই সুবাদে জুনেল মিয়া ভিকটিমের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করে। ঘটনার দিন ১২ জুন ভিকটিম পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে আসামির বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে সকাল অনুমান সাড়ে ১০টার দিকে আসামি জুনেল আনজুমের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তার পিছু নেয়। আনজুম এড়িয়ে যেতে চাইলে জুনেল মিয়া ভিকটিমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তখন আনজুম চিৎকার করলে জুনেল মিয়া তার হাত দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরলে ভিকটিম ঘটনাস্থল কিরিম শাহ মাজারের মধ্যের রাস্তায় অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমকে মোকামসংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার পাড়ে ঝোপে ফেলে রাখে।
মোকামের মাঠে পড়ে থাকা ভিকটিমের স্কুলব্যাগ ও একটি জুতা ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ঘন ঝোপে ফেলে দেয়। ভিকটিমের পরা বোরকাটি নিকটবর্তী কিরিম শাহ মাজারের উত্তর পাশে জনৈক রওশন আলী গংয়ের পারিবারিক কবরস্থানের সীমানা বাউন্ডারি পার করে ছুড়ে ফেলে দেয়। পুলিশ আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার দিবাগত রাতে স্থানীয় লোকজন এবং মিডিয়ার উপস্থিতিতে ভিকটিমের সেই বোরকা উদ্ধার করেন।