
ইসরাইল ও ইরানের মধ্যকার সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক বিমান চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে ৬,০০০-এরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণ সংস্থা ও রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা।
সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল ও আশেপাশের দেশগুলোর বিমানবন্দর যেমন—তেলআবিব, তেহরান, দামেস্ক, বাগদাদ, বৈরুত ও আম্মান—আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ইসরাইল, ইরান ও ইরাকের আকাশসীমা টানা দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়ার ওপর দিয়ে সীমিত মাত্রায় ট্রানজিট অনুমতি দেওয়া হলেও কঠোর শর্তে তা কার্যকর রয়েছে।
ফ্লাইটরাডার২৪ জানায়, প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে কনফ্লিক্ট জোনের বিমানবন্দর থেকে। যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রুটে ব্যাপক ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
তেলআবিবের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রগুলোর একটি। ইসরাইলি বিমান সংস্থা এল আল ও আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স যেমন—এয়ার ফ্রান্স, উইজ এয়ার, রায়ানএয়ার ও ডেল্টা এয়ারলাইন্স—ইসরাইলগামী ও সেখান থেকে ছাড়ার সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে।
ডেল্টা জানিয়েছে, তাদের স্থগিতাদেশ আগস্ট পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
এ উত্তেজনা আরও বেড়েছে, যখন ইসরাইল শুক্রবার ঘোষণা দেয় যে তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের হুমকি দেয় ও বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়।
এছাড়া ইরান, ইরাক ও জর্ডান তাদের আকাশসীমা সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেছে।
ইরাকের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, শুক্রবার সকাল থেকে তাদের আকাশসীমায় সবধরনের বিমান চলাচল বন্ধ। পূর্ব ইরাক, যেটি ইউরোপ ও উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম ব্যস্ত আকাশপথ, এখন একেবারে ফাঁকা। জর্ডানও ইসরাইলি হামলার পরপরই তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।
লেবানন, সিরিয়া ও সৌদি আরবের কিছু অংশ আংশিকভাবে ওভারফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যেখানে কেবল পূর্বানুমতি নিয়ে সীমিত ফ্লাইট চলাচল করতে পারছে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন বড় এয়ারলাইনসও ব্যাপকভাবে ফ্লাইট বাতিল করেছে। যেমন-
• এমিরেটস ইরাক, জর্ডান, লেবানন ও ইরানে সব ফ্লাইট বন্ধ করেছে।
• কাতার এয়ারওয়েজ ইরান, ইরাক ও সিরিয়াগামী ফ্লাইট বাতিল করেছে।
• এয়ার ইন্ডিয়া নিউ ইয়র্ক, ভ্যাঙ্কুভার, শিকাগো ও লন্ডন থেকে ইরান হয়ে চলাচলকারী ফ্লাইটগুলো ফেরত পাঠিয়েছে বা বিকল্প পথে চালনা করছে।
জার্মানির লুফথানসা বলেছে, তারা তেহরানগামী সব ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং ‘পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত’ তারা ইরান, ইরাক ও ইসরাইলের আকাশসীমা এড়িয়ে চলবে।
ইসরাইলি বিমান সংস্থা ইসরায়ার ও আরকিয়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের বিমানগুলো দেশ থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (Rosaviatsia) ২৬ জুন পর্যন্ত ইরান, ইরাক, ইসরাইল ও জর্ডানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলতে তাদের সব এয়ারলাইনকে নির্দেশ দিয়েছে। সেইসঙ্গে রুশ বেসামরিক বিমানের ইরান ও ইসরায়েলে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মূলত মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্বব্যাপী বিমান পরিবহণ ও অর্থনৈতিক খাতে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
শুক্রবার আন্তর্জাতিক বড় বড় এয়ারলাইনের শেয়ারের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে পড়ে যায়:
• ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মূল প্রতিষ্ঠান IAG ৪.৬% কমেছে;
• ডেল্টা ৪%;
• রায়ানএয়ার ৩.৫% কমেছে।
সংঘাতের প্রভাব পড়েছে তেলের বাজারেও। এর ফলে জ্বালানি ব্যয়ের আশঙ্কাও বেড়েছে।
উল্লেখ্য, এ ঘটনার আগে গত ৪ মে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর একটি ক্ষেপণাস্ত্র তেলআবিব বিমানবন্দরের কাছে আঘাত হানে। যার ফলে বহু এয়ারলাইনস তখনই ইসরাইলে ফ্লাইট স্থগিত করে। সূত্র: দ্য নিউজ