
সংবাদপত্রশিল্পের কালো দিবস আজ সোমবার। দিবসটি উপলক্ষে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার ফেসবুক পোস্টের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সারজিস আলম।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারেক রহমান লিখেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো দিবস। এদিনে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী সব দল বাতিল করে চরম কর্তৃত্ববাদী একদলীয় বাকশাল কায়েম করে তাদের অনুগত ৪টি সংবাদপত্র রেখে গোটা জাতিকে নির্বাক করে দিয়েছিল। ফলে বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত অসংখ্য সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়েছিল। তাদের রুজি-রোজগার ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ চরম নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।’
তিনি লেখেন, ‘চিরায়ত গণতন্ত্রে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় এবং যার মূল শর্ত হচ্ছে বাক, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকায় রাষ্ট্র ও সমাজ জবাবদিহিতার আওতায় আসে এবং দেশের সরকার গঠনে নাগরিক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলাকে স্তব্ধ করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করে। পরবর্তীকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এদেশের কাঙ্খিত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। বাকশাল সরকারের সকল প্রকার অগণতান্ত্রিক কালাকানুন বাতিল করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।’
পোস্টে তারেক রহমান আরও লেখেছে, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ মূলত চিন্তা ও বিবেককে বন্দী রাখা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তার মেয়ে শেখ হাসিনাও একই পথ ধরে তাদের প্রকৃত দর্শণ একদলীয় ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করেছিল নতুন আঙ্গিকে। নানা কালাকানুন প্রণয়ন করে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ওপর অব্যাহত জুলুম চালিয়েছে তারা। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। সত্য উচ্চারণ করলেই নেমে আসত নির্যাতনের খড়গ। বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীসহ সকল পর্যায়ের মানুষকে সার্বক্ষণিক শংকিত থাকতে হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি এ্যাক্টের মতো একের পর এক ‘ড্রাকোনিয়ান আইন’ প্রণয়ন করে সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভয়াল দূর্গে বন্দী করা হয়েছিল। বিগত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর গণমাধ্যম কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করলেও এখনও ফ্যাসিবাদ শক্তির হাত থেকে গণমাধ্যম পুরোপুরি মুক্ত নয়।’
‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বহুদলীয় গণতন্ত্রের মৌলিক উপাদান। গণতন্ত্রের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব দিতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) মো. সারজিস আলম তারেক রহমানের ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট বক্সে লিখেছেন, ‘আপনার এই বক্তব্যের সাথে একমত। একটি দেশের গণতন্ত্রের অগ্রগতির পথে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই কয়েক মাসে এটাও প্রত্যক্ষ করেছি যে, অনেক ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া হাউজ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিংবা টিআরপি পাওয়ার আশায় কিংবা অজানা কোন মদদে অসংখ্য প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে।’
‘কিছু সাংবাদিক কিংবা সংবাদপত্র ভিত্তিহীন কিছু তথ্য কয়েক মিনিটের জন্য প্রকাশ করে। অতঃপর তার কোন সত্যতা না থাকার কারণে কিছুক্ষণ পর সংবাদটি মুছে ফেলে। কিন্তু এর মধ্যে ওই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের যতটুকু ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার সেটা হয়ে যায়। এসব করে অনেকেই পার পেয়ে যায়। অনলাইন ফটো কার্ডে বিব্রতকর শিরোনাম দেওয়া হয়। কিন্তু ভিতরে ডিটেইলস এ গিয়ে কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না।’
সারজিস আলম কমেন্টে লেখেন, ‘বর্তমান সাংবাদিকদের মধ্যে এমন সংখ্যাও নেহাত কম নয় যারা ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগকে প্রকাশ্যে সার্ভ করে এসেছে। তারা এখনও নিজেকে শুধরে না নিয়ে সুযোগ-সন্ধানী আচরণ করছে। আবার কিছু হাউজ ক্ষমতার পার্থক্যভেদে শিরোনামের পার্থক্য করে। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার স্বাধীনতা যেমন প্রয়োজন তেমনি এই স্বাধীনতার অপব্যবহার করলে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করে সে অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও প্রয়োজন।’