Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার (১৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের নিয়মিত সভায় এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এদিন সকালেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ককটেল উদ্ধার ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এ অবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক তৈরি হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আজকের সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে থাকবে। পাশাপাশি পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের বাজেট নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। এর আগেই নির্বাচনের কমিশন ও তফসিল ঘোষণার দাবিতে রবিবার (১৫ জুন) থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এমন সময়ে ক্যাম্পাসে ককটেল উদ্ধার ও বিস্ফোরণ ঘটানো হলো।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা এবং ক্যাম্পাসে নিয়মিত চলাচল করা একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে পুনঃসংগঠিত হচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীরা। গত রবিবার রাতে অ্যানেক্স এলাকায় আইন ভবন চত্বরে তাদের একটি গ্রুপ মিটিং করে ককটেল বিস্ফোরণের স্পট নির্ধারণ করে।

আজকের সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে থাকবে। পাশাপাশি পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের বাজেট নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। এর আগেই নির্বাচনের কমিশন ও তফসিল ঘোষণার দাবিতে রবিবার (১৫ জুন) থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এমন সময়ে ক্যাম্পাসে ককটেল উদ্ধার ও বিস্ফোরণ ঘটানো হলো।

এর আগে শুক্রবার রাতে কার্জন হল এলাকায় মিটিং করে তাদের কয়েকজন। এতে শহীদুল্লাহ হল, এফএইচ হল, অমর একুশে হল ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনের দিন-তারিখ নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের কয়েকজনের সক্রিয় হয়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে পারে।

তানভীর আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আগস্ট পরবর্তী সময়ে এখনো আমরা দেখছি, ছাত্রলীগ তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। আজকে আমরা দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। আবার শেখ মুজিবুর রহমান হলের পকেট গেটে‌ও তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা নিষিদ্ধ সংগঠন কীভাবে এমন উন্মত্তভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, আমি বুঝতে পারি না। এখানে অবশ্য‌ই প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে‌। তাছাড়া ছাত্রলীগ ডাকসু নির্বাচনকে বিভিন্ন উপায়ে বানচালের পাঁয়তারা করছে।’

নিষিদ্ধ করার পর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হাজার হাজার কর্মী পুনরায় আত্মপ্রকাশের জন্য দেশে যে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে, তারই অংশ হিসেবে এ মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণ বলে মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর আল হাদী মায়েদের। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আজকের মিছিল ডাকসু ও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অনিরাপদ পরিবেশ তৈরির চেষ্টাও হতে পারে। তবে স্পষ্টত আজকের ককটেল বিস্ফোরণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেছে।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বলে আসছি। কিন্তু প্রশাসন তা করতে পারেনি। আজকে ডাকসু নিয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনা করার কথা। ঠিক এ সময় ককটেল উদ্ধার, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ অবশ্যই ডাকসু বানচালের একটা অপচেষ্টা। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় যেসব গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে, তারা পুরোপুরি ব্যর্থ।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যে ছাত্ররা গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছে, তাদেরকে এ ককটেল বিস্ফোরণ করে ভয় দেখানো সম্ভব না। বরং যে বা যারা ডাকসু বানচালের চেষ্টা করছে, আমরাই তাদের বানচাল করে দেব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আজকে ছাত্রলীগের কর্মীরা যে মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণ করেছে, এ ব্যাপার নিয়ে আজকের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে আলোচনা করা যেতে পারে‌।’

কারা ককটেলগুলো রেখে গেছে, তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানান প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘অবিস্ফোরিত অবস্থান ককটেল পাওয়া পাওয়া যায়। আমরা খবর পেয়ে সেখানে যাই। বোম ডিসপোজাল ইউনিট সেগুলো উদ্ধার করে। সেখানে প্লাস্টিকের দুটি ব্যাগে মোট সাতটি ছিল। শেখ মুজিবুর রহমান হলের পকেট গেটে দুইটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয় এবং কয়েকজন ঝটিকা মিছিল করে। তাদের মধ্যে থেকে পুলিশ একজনকে আটক করেছে।’

হাইকোর্ট এলাকায় তিনি ককটেল পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানকার একটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এসব ককটেল থাকার খবর পেয়েই পুলিশকে জানানো হয়েছে। তাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এগুলো নিয়ে গেছে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখছে। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কিছু পাওয়া যায় কিনা, দেখা হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ডাকসু কমিটি, কমিশনের সদস্য কারা কারা, গঠনতন্ত্রে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। সিন্ডিকেট মিটিংয়ে মূল বিষয় ডাকসুই থাকবে। সার্বিক বিষয় নিয়েই মোটামুটি আলাপ হবে। পাশাপাশি সিন্ডিকেট সদস্যদের অন্যান্য সুপারিশগুলো থাকছে।’