Image description

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিলেটে অতীতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে রণজিৎ সরকার। টিলাগড়ের এক সময়ের ক্যাডার ছিলেন তিনি। সর্বশেষ নির্বাচনে এমপি পর্যন্ত হয়েছিলেন। তার নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সিলেট আওয়ামী লীগ ছিল দিশাহারা। আলোচিত টিলাগড়ে লাশের পর লাশ, অস্ত্রের ঝনঝনানি, টর্চারসেলের নির্যাতন এখনো মানুষের মুখে মুখে। রণজিৎ ও তার বাহিনীর সেসব কাহিনী এখন অনেকটা রূপ কথার মতোই। এভাবে কেউ অপরাধের জাল বিস্তার করতে পারে- সেটি মানুষের কল্পনারও বাইরে। ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় নিজ এলাকা সুনামগঞ্জেই ছিলেন রণজিৎ সরকার। প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকেই আত্মগোপনে যান। ওদিকে সিলেটে রণজিতের গোপালটিলাস্থ বাসা ও তার আস্থানা একাধিকবার বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে আগুনও ধরিয়ে দেয়। ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন- কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকার পর রণজিৎ সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের শিলংয়ে পাড়ি জমান। শিলং থেকে কলকাতায়ও যান। ১১ মাস হতে চললো। 

সিলেটের পূর্বাঞ্চলে রণজিতের দাপট নেই। তার বাহিনীও লাপাত্তা। তবে ভারত হয়ে সেপ্টেম্বরেই লন্ডনে পাড়ি জমান রণজিৎ। কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও পরবর্তীতে নিজস্ব বলয় ছাড়া আর কোথায়ও বের হননি। সেই রণজিৎ সরকার ১১ মাস পর এবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়ে প্রকাশ্যে এলেন। পাশে বিধান কুমার সাহাকে রেখে হাঁটছেন লন্ডনের রাস্তায়। চিরায়ত ভঙ্গিমায় তার সেই হাঁটা। সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীও। বিধান কুমার সাহা সিলেট নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। তিনিও এক সময়ে দুর্ধর্ষ ক্যাডার। ছাত্রলীগের কাশ্মীর গ্রুপের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। টিলাগড়ের আগে সিলেটে ছাত্রলীগের যে গ্রুপটি বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল সেটি ছিল কাশ্মীর গ্রুপ। সিলেটের টপটেররের তালিকায় বারবারই উঠে আসে বিধানের নাম। ৫ই আগস্টের পূর্বে সিলেটের রাজপথে যেসব অস্ত্রবাজরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখে তার মধ্যে বিধান গ্রুপের নেতারা ছিল উল্লেখযোগ্য। ওই গ্রুপের নেতাদের হাতে ছিল অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। গণ-অভ্যুত্থানের সময় সিলেট নগরেই ছিলেন বিধান কুমার সাহা। জীবন বাঁচাতে আত্মগোপনেও চলে যান তিনি। পরবর্তীতে সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে যান। সেখান থেকে কলকাতায় ঢোকেন। কলকাতায় দেখা হয় রণজিৎ ও বিধানের। 

সিলেট নগরে দু’নেতার অবস্থান দু’পাশে। ফলে তাদের মধ্যে কখনো বিরোধ তৈরি হয়নি। দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- নগরের রাজনীতিতে রণজিৎ ও বিধানের সম্পর্ক মধুর ছিল। প্রায় সময় তারা একে অপরের সহায়ক হিসেবেও থেকেছেন। এ কারণে পূর্ব অংশে রণজিৎ ও পশ্চিম অংশে বিধান রাজত্ব গড়ে তোলেন। কলকাতায় দেখা হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের ভিসা থাকায় একসঙ্গে লন্ডনে চলে যান রণজিৎ ও বিধান। বর্তমানে তারা ইস্ট লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত একটি এলাকায় বসবাস করছেন। লন্ডনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- পলাতক হওয়ার প্রথম দিকে রণজিৎ মানসিকভাবে স্থির ছিলেন না। ফলে ওই সময় তার ব্যক্তিগত ব্যবহারে কলকাতা ও লন্ডনে থাকা নেতাকর্মীরা নানাভাবে আহত হয়েছেন। তবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছেন তিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। সোমবার যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে ইউনূসবিরোধী কর্মসূচি পালন করেন। সেই কর্মসূচি দিয়ে ১১ মাস পর লন্ডনের রাস্তায় প্রকাশ্যে দেখা গেল রণজিৎ ও বিধানকে। সঙ্গে ১০-১২ জন নেতাকর্মী। পাশাপাশি হাঁটছিলেন তারা।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- রণজিৎ ও বিধান একসঙ্গে লন্ডনের হাইট পার্কে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে যোগ দেন। কর্মসূচিতে তাদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় লন্ডনের সাংবাদিক কামরুল আই রাসেলের সঙ্গে একটি ভিউজ্যুয়াল সাক্ষাৎকারে কথাও বলেন রণজিৎ। তিনি কীভাবে লন্ডনে গেলেন সেসব বিষয়ে কিছু না বললেও নিজেকে সাবেক এমপি মানতে নারাজ। জানান- আমি এখনো বর্তমান, সাবেক নই। বলেন- আজ এখানে আওয়ামী লীগের ব্যানারে প্রতিবাদ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখানে বৃটেন প্রবাসী লোকজনের উদ্যোগেই কর্মসূচি হচ্ছে। একজন বাংলাদেশি হিসেবে তিনি আয়োজকদের সমর্থন দিতে এসেছেন বলে জানান। তিনি কতোদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন সেই প্রশ্নের জবাবে রণজিৎ জানান- তিনি অনেকদিন ধরেই লন্ডনে। ইউনূস ক্ষমতা নেয়ার পর দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অচিরেই তিনিসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দেশে ফিরবেন বলে জানান তিনি। দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- রণজিৎ ও বিধান লন্ডনে একসঙ্গেই রয়েছেন। সিলেটের সাবেক মেয়র ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সহযোগিতায় তারা সেখানে অস্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন।