
১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালুর গত ৩ দশকের বেশি সময় ধরে কোনো ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর দৃশ্যত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আইন দ্বারাও কোথাও কোথাও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেসরকারি এসব উচ্চশিক্ষালয়ের অভ্যন্তরীণ আইন না মেনে কয়েকটি ক্যাম্পাসে কমিটি দেওয়া শুরু করেছে ছাত্রদল। এরপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
শুধু ছাত্রদল নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আলাদা করে কমিটি না থাকলেও সম্মিলিতভাবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে ছাত্রশিবির। একই কৌশলে ছাত্ররাজনীতি পরিচালনা করে আসছে একাধিক বাম ছাত্রসংগঠনও। যদিও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করছে না কোনো ছাত্রসংগঠন। তবে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা দাবি করেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে তারা কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। তবে রাজনীতি করার সাংবিধানিক অধিকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও আছে। তাই সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ছাত্রদলের কমিটি রয়েছে প্রায় ৩৮টিতে। অন্যদিকে ছাত্রশিবিরের নির্দিষ্ট করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি না থাকলেও সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত কমিটি আছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি ছাত্রদলের ঘোষিত কমিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কমিটি নয়। ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি শুরু হয় মূলত ২০০৯ সালে ছাত্রদলের মাধ্যমে। ২০১১ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নামে একটি ইউনিট গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্ররাজনীতি শুরু হয়। তখন ৪৯ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় তাদের দেখাদেখি ২০১২ সালের ২৫ নভেম্বর প্রথম সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠন করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। ছাত্রদল ২০১৩ সাল পর্যন্ত নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি দেয়। ওই বছর (২০১৩ সাল) থেকে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি দেওয়া শুরু করে ছাত্রলীগও। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আপত্তির মুখে কোনো দলই খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। সর্বশেষ ২০২৩ ও ২০২৪ সালেও একাধিক ক্যাম্পাসে কমিটি করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ।
ছাত্রদল নেতারা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা হয় ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে। ৫১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা মর্যাদায় ইউনিট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তৃতীয় কমিটি চলমান। প্রায় ৯০টি মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। তবে সম্মেলনেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পরিচালিত হয়নি।
অন্যদিকে ছাত্রশিবির নেতারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাস্ট্রি বোর্ড চাই না রাজনীতি হোক। আবার আইন বা সিন্ডিকেট দ্বারাও কোথাও কোথাও রাজনীতি নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আবার শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই রাজনীতি বিমুখ। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কোনো কমিটি দেওয়া হয় না। তবে বেসরকারিতে যারা আমাদের সাথে যুক্ত হতে চায়, তাদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করে যাচ্ছে ছাত্রশিবির। প্রতিমাসে কয়েকটি সাংগঠনিক কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে করা হয়ে থাকে। আর আমাদের মাসে কয়েকটি কার্যক্রম হয়ে থাকে। আমাদের কার্যক্রমগুলো শিক্ষাকেন্দ্রিক। ফলে আমাদের মিছিল-মিটিংয়ের মতো কার্যক্রমগুলোর চাইলে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমগুলোতে বেশি নজর দিয়ে থাকি। বিশেষ করে কোরআন শিক্ষা, হাদিস শিক্ষা, পাঠচক্র, মাসিক সভা ও বিভিন্ন বৈঠকই আমাদের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের (উদ্যোক্তা) সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ (এপিইউবি) এর চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সবুর খান বলেন, মনে রাখতে হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণ কি? তখন অন্যতম কারণ ছিল লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি থাকার কারণে পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলো অস্থিরতা থাকবো। মাসের পর মাস বন্ধ থাকতো। যার ফলে আমিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় কথায় কথায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আমাদের তিন বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে হয়েছিল। তখন একটা ব্যাবসায়িক গোষ্ঠী উদ্যোগে নেয় যে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির বাইরে রাখতে চায়। তবে এটা সত্য যে ছাত্রদের রাজনীতি সচেতন হতে হবে। রাজনীতি সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তাহলে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করতে পারবেন। তাদের রাজনীতিতে গণতন্ত্র, সিলেকশন পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ছাত্ররা ডিবেট করবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা জানে না তারা আসলে চাকরিজীবী হবে নাকি উদ্যোক্তা হবে। সেই হতাশা থেকে তারা মনে করে আমরা যদি একটা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করি তাহলে এই সংগঠন যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে আমি একটা বেনিফিট পেয়ে যাব। তার মানে তার যে নিজস্ব একটা প্রতিভা আছে, সেটি সে মূল্যায়ন করছে না। সে প্রাধান্য দিচ্ছে তার লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিটাকে। সেই জায়গা থেকে আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছি অবশ্যই আমরা লিডারশিপ চাই, অবশ্যই আমরা রাজনৈতিক চর্চা চাই। কিন্তু সেই রাজনৈতিক চর্চাটা হতে হবে সুস্থ। এখন একদল মিছিল দিবে, আরেক দল পাল্টা মিছিল দিবে, হাতাহাতি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবে। তখন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের টাকা দিয়ে পড়াশোনা করায়। তারা বিপদের মুখে পড়ে যাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা হতে পারে। কারণ পাবলিকের তারা বিনে পয়সায় পড়ে।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারিতে যদি এমন হয় যে আমার হুকুমে বিশ্ববিদ্যালয় চলবে, আমি যা হুকুম করি আমার হুকুমের চাকর হতে হবে, এই মানসিকতা নিয়ে যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়, তাহলে একটা সময় এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর চলবে না। কারণ এখনই ট্যাক্সের কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালানো সম্ভব না।
ড. মুহাম্মদ সবুর খান বলেন, ছাত্ররাজনীতি থাকলে শিক্ষার্থীরা মনে করবে আমি এ দলে না গেলে আমাকে এই সমস্যায় পড়তে হবে। ওই দলে না গেলে আমাকে হল থেকে বের করে দিবে। এমন হলে আমাদের প্রতিভা কখনোই বিকশিত হবে না। এমন হলে আমাদের কাছে এখন যেমন আফ্রিকার ছেলেরা পড়তে আসে, একসময় আমাদের আফ্রিকাতে পড়তে যেতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কিনা, সেটা নির্ধারণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সেখানকার শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের তাদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে কণ্ঠস্বর তুলে ধরার স্বাধীনতা থাকতে হবে—তা হোক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি কোনো ইতিবাচক অর্থ বহন করে না। রাজনীতি যেখানে অধিকার নিয়ে কথা বলার কথা ছিল, সেখানে এখন এক ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমি কোনো কিছু অন্ধভাবে সমর্থন করতে চাই না।
সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আবু হোরায়রা বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করি না। ক্যাম্পাসের বাহিরেই আমাদের অধিকাংশ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে নিয়ে নেগেটিভ ধারণা না পোষণ করেন। তবে ৫ আগস্টের পর প্রেক্ষাপট চেঞ্জ হওয়ার পর দেখছি সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে খুব বেশি আগ্রহী। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা অনেক ভূমিকা রেখেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ চাচ্ছে ছাত্ররাজনীতি থাকুক, কিন্তু সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি থাকুক।
তিনি আরও বলেন, যাদেরকে আমরা গোপন সংগঠন বলি এবং ছাত্রলীগের তারা বৈষম্যবিরোধী আছে, তারা একটা বেশ ধরে ক্যাম্পাস ঘোলাটে করার চেষ্টা করে। ক্যাম্পাসে কোনো রাজনীতি থাকবে না এরকম আরকি। আর মালিকপক্ষরাও চাচ্ছেন না যে ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকুক। কারণ ইচ্ছামতো টিউশন ফি বাড়িয়ে দেয়, ইচ্ছামতো তারা পলিসি রেডি করে। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যদি সেখানে সক্রিয় থাকে তাদের কাজগুলোতে হয়ত বাধার সৃষ্টি হতে পারে। তাই তারা চাচ্ছেন না রাজনীতি থাকুক।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের কমিটি আছে। কিন্তু আমরা জানি না। কিন্তু তারা এটা গোপন রাখে। বামেদেরও কমিটি থাকতে পারে। কিন্তু প্রকাশ্যে আনে নাই। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি। ইউডার তাহমীদ নামের যে ছেলেটা শহীদ হয়েছে, তার পরিবার জানিয়েছে সে বাম ছাত্রসংগঠনের কর্মী ছিল।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারের সাথে ছাত্ররাজনীতি সাংঘর্ষিক কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনুমোদিত ১১৬ বেসরকারি ইউনিভার্সিটি রয়েছে। এখানে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তাদেরকে যদি আপনি দেশের প্রয়োজনে রাজনৈতিক সচেতন করে না তুলেন, তাহলে বিশাল জনগোষ্ঠীকে অন্ধকার থেকে যাবে। যেখানে বাংলাদেশের সংবিধান আমাকে রাজনীতির অধিকার দিয়েছে সেখানে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় যদি রাজনীতি থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখে একটা নিজস্ব আইন বা চিন্তাভাবনা থেকে এই বিষয়টা বন্ধ রাখে তাহলে এটাও তো সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।
রাজনীতি ফিরলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা দেখা দিবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আন্দোলনের পর কোথাও দেখবেন না তারা কোনো বিষয় নিয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে। কোনো ধান্ধা করেছে। দেশের প্রয়োজনে তারা আন্দোলন করেছে, আবার ক্যাম্পাসে তারা ফিরে গেছে। তারা সমাজের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ও সবচেয়ে সভ্য পরিবারের সন্তান। এরা জন্মগতভাবেই শিখেছে দেশের জন্য যে মায়া কাজ করা, এটা পরিবার থেকে শিখে আসছে। তাই তাদের এমন কোনো চাহিদা নেই ডে রাজনীতি করে তাদের এখান থেকে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে হবে।
এ বিষয়ে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল হাসান সাদ্দাম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো ক্যাম্পাসে আমাদের কমিটি নেই। তবে যারা সেখানে পড়াশোনা করেন তাদের নিয়ে আমাদের কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত একটি কমিটি আমাদের রয়েছে।
তিনি বলেন, বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে রাখছে প্রশাসন। তাই প্রশাসন বা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা কমিটি দিই না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু বড় একটা অংশ রাজনীতি বিমুখ, প্রশাসন চাই না রাজনীতি চলুক, তাই আমরা ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক কমিটি দিই না। তবে বেসরকারিতে যারা রাজনীতি করতে চাই, আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে চায়, তাদের নিয়ে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি করেছি। আমাদের পাঠচক্র, মাসিক সভা, বিভিন্ন বৈঠক ক্যাম্পাসের বাইরে আমরা করে থাকি।
বামপন্থী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশের) কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আমাদের একটি কমিটি রয়েছে, যা জেলা মানের। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থানা শাখা হিসেবে কাজ করে থাকে। আমাদের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। এছাড়াও আহ্বায়কসহ কমিটি আছে প্রায় ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যন্তরে কার্যক্রম চালানো নিষেধ। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আমরা নাম দিয়ে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করি না। আমরা বিভিন্ন স্যোশাল অর্গানাইজেশনের নাম ব্যবহার করে আমরা কাজ করে থাকি, বেনামে কাজ করে থাকি। আর ক্যাম্পাসের বাইরে আমাদের যে প্রোগ্রামগুলো হয়ে থাকে সেগুলো ছাত্র ইউনিয়নের নামেই হয়ে থাকে।
রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় যে অলাভজনক এবং রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে এটি সম্পূর্ণরূপে ভাওতাবাজি। বিশ্বের সকল বড় বড় যেসব বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেখানে প্রত্যেকটির উইং সেখানে কাজ করে থাকে। আগে আমরা ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখেছি। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায় সামগ্রিক ছাত্ররাজনীতির ঘাড়ে চাপিয়ে সেটিকে বন্ধ করতে চাওয়ার যে প্রচেষ্টা সেটাকে আমরা সমীচীন মনে করি না। আমরা চাই তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পান। কারণ এটা সাংবিধানিক অধিকারও।
বেসরকারি এসব ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দীর্ঘদিন বন্ধ, উত্তেজনার সংস্কৃতি ফিরে আসবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মালিকপক্ষ রাজনীতি চায় না। কারণ তাদের যে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে যেন আওয়াজ না উঠে, তারা যে নিপীড়ন করে, চাপ প্রয়োগ করে যে অর্থ আদায় করে সেটির বিরুদ্ধে যেন মুখ খোলা না হয় সেজন্য তারা রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে রেখেছে। মানের দিকে তাকিয়ে দেখেন তাদের কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মানের পড়াশোনা দিয়ে থাকে। মানের দোহায় দিয়ে যে রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা সেটাকে আমরা নিন্দা জানাই। তবে আমরা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বাদ দিয়ে ছাত্রদের নিজস্ব দাবি দাওয়া নিয়ে, জাতীয় ইস্যুতে তারা কথা বলুক।
লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য যদি কোনো কাজ করে থাকে তাহলে সেটি চলতে দেওয়া হবে না। সেটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হোক আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হোক।
এদিকে রাজনীতি নিষিদ্ধ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে থাকা শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি। তবে স্টামফোর্ড, এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্টওয়েস্ট, শান্তা মরিয়ম, ব্র্যাক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কমিটি রয়েছ বলে জানান তিনি।