
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে এসে গোপন বৈঠক করা জাতীয় পার্টির আড়ালে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধীরা জিএম কাদেরের গোপন বৈঠকের প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল করলে সেখানে তাদের ওপর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে।’
শনিবার (৩১ মে) দিবাগত মধ্যরাতে রংপুরের পায়রা চত্বর মোড়ে সাংবাদিকদের এসব বলেন।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সেনাবাহিনী। খবর পেয়ে ওই সময় সেখানে ছুটে যান এনসিপির নেতা সারজিস আলম। তিনি সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সারজিস আলমকে বলেন, ‘শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে, উই আর নট গোয়িং টু প্রমোট এনিওয়ান যে দেশের বিরুদ্ধে করে। আপাতত স্ট্যান্ডিং হলো, যে জনগণের অসুবিধা করে, ভ্যান্ডালিজম (নাশকতা) করে, মবের নামে যে আগুন লাগায়, ঘরদোর ভাঙচুর করে, এই পার্টিটাকে বার্তা দেওয়া যে, না, এইটা করার সুযোগ নেই এখন।’
সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলাপ শেষে সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার খবর শোনে এখানে আসি। আপনারা জানেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের এখানে আসা এবং জাতীয় পার্টির সাবেক মেয়রকে আবার মেয়র পদে বসানোর বিষয়ে বিক্ষোভ করা নিয়ে এখানে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যেটা রংপুরে এর আগে আমরা দেখিনি। আগামীতেও প্রত্যাশা করি না।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারী সরকারে পরিণত হতে সমর্থন দিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগের বি টিম জাতীয় পার্টি। তারা শান্তিপূর্ণ রংপুরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদের মিটিং-মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছে। জি এম কাদেরের রংপুরে এসে গোপন বৈঠক করা জাতীয় পার্টির আড়ালে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার প্রক্রিয়া। বৈষম্যবিরোধীরা এর প্রতিবাদ করে মিছিল করলে সেখানে তাদের ওপর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তদন্তের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হোক, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির যে কাউকে হোক জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা মনে করি রাত ১টা, ২টা, ওই সময়টাই দৃষ্টিকটু দেখায়। আমরা প্রত্যাশা করি, তাঁদের যেকোনো টাইমে দিনের বেলা অফিস আওয়ারে ডেকে নেওয়া হয়। সবাই প্রস্তুত থাকবে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য।’
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুর সেনপাড়া ‘দ্য স্কাই ভিউ’ বাসভবনে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরপরই পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ঘটনার সময় জিএম কাদের বাড়িতেই ছিলেন।
এ ঘটনায় শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর পায়রা চত্বর মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম।
খবর পেয়ে বৃষ্টির মধ্যেই সেখানে ছুটে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। পরে রাত ২টার দিকে তাঁরা সেখানে থেকে চলে যান। এ সময় স্থানীয় বিএনপির নেতাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে সেনাবাহিনী।
শীর্ষনিউজ