Image description

ডান-বাম উভয় রাজনৈতিক শিবির প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। সব দল প্রায় অভিন্ন সুরে প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ করে বলেছে, আপনার পদত্যাগ কেউ-ই চায় না। আপনি না থাকলে সংস্কার, বিচারসহ সার্বিক বিষয় যতটুকু এগিয়েছে, তার সবই ভেস্তে যাবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। দলগুলো দায়িত্ব পালনে সরকারের পাশে থেকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

স্বস্তিকর পরিবেশ হলেই নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করবেনÑ দলগুলোকে এমন আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রুতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতির প্রতি পুরোপুরি বিশ্বাস রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেন, জুনের পর তিনি (ড. ইউনূস) এক ঘণ্টাও থাকবেন না। এর আগেই তিনি নির্বাচন শেষ করবেন। ওনার সঙ্গে কথা বলে আমাদের ভেতরকার ভয় কেটে গেছে।

বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ব্রিফিংয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ড. ইউনূসকে সমর্থন জানিয়েছেন। তার রিফর্ম, বিচার ও নির্বাচনি কার্যক্রমের জন্য তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। তারা প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ২০টি রাজনৈতিক দলের ২০ জন নেতার সঙ্গে দুই দফায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভারতীয় আধিপাত্যবাদ বাংলাদেশের পরিবর্তনকে স্বীকার করতে চায় না। আমরা অনেক বড় সংকটের মধ্যে আছি। ভারতীয় আধিপাত্যবাদ আমাদের এ পরিবর্তনকে একেবারেই স্বীকার করতে চায় না। পারলে আমাদের একদিনে ধ্বংস করে দিতে চায়। সেজন্য যা যা করা দরকার, তারা সব করছে। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। মান্না জানান, এ সংকট বলতে ড. ইউনূস প্রধানত ভারতীয় আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন।

প্রধান উপদেষ্টাকে বেশ চিন্তিত মনে হয়েছে উল্লেখ করে মান্না বলেন, এজন্য পুরো জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য দরকার। কিন্তু দিন দিন ঐক্যটা দুর্বল হচ্ছে। এজন্য উনি চিন্তিত। তিনি বেশখানিকটা হতাশ। আমাদের ভিন্নতা থাকলেও আমরা সবাই একমত হয়ে বলেছি, এ প্রশ্নে আমরা সবাই এক থাকব।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, আমরা তাকে বুঝিয়েছি আপনার বেশি করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করতে হবে, কথা বলতে হবে, মতবিনিময় করতে হবে। আপনি কেমন করে নির্বাচন করতে চান তা সবার সঙ্গে শেয়ার করবেন। আপনার সেক্ষেত্রে দেখতে হবে কোনটা সংস্কার না করলেই নয়, শুধু সেটিই করবেন। সেক্ষেত্রে যদি সময়ক্ষেপণ হয় তাহলে নির্বাচন বিলম্বিত হবে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, জুনের পর কোনোভাবেই আর সময় গড়াবে না। উনি বলেছেন, আমি কোনোভাবেই আমার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাই না। উনি অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আর বাড়াতে চান না।

মান্না বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাদের স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কম সংস্কার হলে ডিসেম্বরে আর বেশি সংস্কার হলে জুনে নির্বাচন হবে। এ সময় প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগপত্রে লিখে দিতে চেয়েছেনÑ কোনোভাবেই নির্বাচন জুনের পর যাবে না।

সংস্কারের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছেÑ এ বিষয়ে জানতে চাইলে মান্না বলেন, আমরা সংস্কারের বিষয়ে কোনোকিছু চাই না। আমরা শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।

বৈঠকের পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি জুলাই আন্দোলনের স্পিরিট নস্যাৎ করার প্রক্রিয়া চলছে। বলেছি পরিস্থিতির দিকে আমাদের ভালো করে নজর রাখতে হবে। দেশের ভেতরে এবং বাইরে নানারকম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আরো পেকে উঠেছে। সেখান থেকে আমরা যদি দেশকে রক্ষা করতে না পারি, তাহলে রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে। এ কাজ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যেটুকু করণীয়, আমরা নিজেদের উপলব্ধি নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হব। সরকারেরও উচিত হবে এ সহযোগিতাকে আরো ফলপ্রসূ করা, যাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যওায়ার পথ রচনা করতে পারি।

তিনি বলেন, আমরা বলেছি রাজনৈতিক ঐক্য ইউনিফর্মিটি আর ইউনিটি এক বিষয় না। আমরা এটাও বলেছি, জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে যদি আমরা সংস্কারকাজ এগিয়ে নিয়ে যাই, তাহলে সেটাই হবে আসল সংস্কার। আমরা যেসব সংস্কার করতে পারব না, এরকম ধারণা আমাদের মধ্যে না থাকাই উচিত। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মতের তারমত্যে ভীত হওয়া উচিত নয়। মতপার্থক্য থাকবে, সেটাকে উৎসাহিত করা উচিত। কিন্তু কোনটা কার্যকরী হবে সেটা নির্ধারণের দায়িত্ব জনগণের। জনগণের মতামত সঠিকভাবে যাতে প্রতিফলিত হয়, সেজন্য প্রতিনিধি নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে।

সেলিম বলেন, নির্বাচন ও সংস্কারের আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি সংস্কার ঠিকভাবে অর্থবহ করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মতামত নিয়ে সেটা করতে হবে। আমরা যতই তাত্ত্বিক কাগজপত্র লিখি না কেন, জনমত ছাড়া কায়েমি স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে কোনোকিছু বাস্তবায়ন করতে পারব না। সে কারণে জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামত নেওয়ার জন্য অবাধ ও নিরপেক্ষ পদ্ধতি হচ্ছে নির্বাচন। আর ওই নির্বাচনের জন্য যে সংস্কারগুলোর প্রয়োজন, তা করে জনগণের অংশগ্রহণে সংস্কারকাজ এগিয়ে নিয়ে গেলেই তা হবে সার্থকতা। একচোটে সব কাজ আমরা করে ফেলতে পারব, এরকম ভুল ধারণা না নিয়ে আমাদের উচিত হবে সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলো জনগণের হাতে ছেড়ে দেওয়া। তারা সিদ্ধান্ত নিক। অন্তর্বর্তী সরকারকে সব করতে হবে, তার কোনো মানে নেই।

এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে আমরা বুঝতে পেরেছিÑ নির্বাচন দেওয়ার জন্য যেসব প্রস্তুতি অথবা যা প্রয়োজন, তা এখনো হয়নি। এজন্য অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের কারণে উনি পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। আমরা বলেছি, আপনার বিকল্প কেউ নেই। আপনি না থাকলে সংস্কার ও বিচারসহ সার্বিক বিষয় যতটুকু এগিয়েছে তার পুরোটাই ভেস্তে যাবে।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে মঞ্জু বলেন, নির্বাচন এত সহসাই ঘোষণা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ হচ্ছে প্রশাসনসহ বিভিন্ন যে যন্ত্রগুলো আছে সেগুলো এখনো পরিপূর্ণভাবে কার্যকর নয়। এবি পার্টির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করেছিÑ নির্বাচনকে একটি কমফোর্টেবল জায়গায় নিতে হবে আর যথাসম্ভব নির্বাচন নিয়ে একটি রোডম্যাপ দেওয়ার জন্য। একটি কমফোর্টেবল পজিশনে গেলে উনি রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। তবে উনি কিছুটা হতাশ ছিলেন। আমরা সিনিয়র রাজনীতিবিদরা ওনাকে বুঝিয়েছি, আপনি হতাশ হবেন না।

তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য একটি টিম করে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু ওনারা তা করেননি। এজন্য দলগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে আপনার টানাপোড়েন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে টানাপোড়েনের বিষয়টিও জাতির কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আমরা সমঝোতার মাধ্যমে এটাকে একটি স্বস্তিকর জায়গায় আনতে বলেছি। আমরা বলেছি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনটা করা গেলে ভালো হয়। আমরা এও বলেছি, এ বিষয়ে আমরা রিজিট নই। বলেছি ‍উনার জন্য যেটা সুবিধা হয়।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনায় ওনার মন খারাপ ছিল, কিছুটা বিব্রতবোধ করেছেন। আমরা সবাই স্পষ্ট করে বলেছি, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টার পদত্যাগ আমরা কেউ-ই চাই না। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা বলেছি এক সরকারের মধ্যে একাধিক সরকার দেখতে চাই না। আমরা আপনার নেতৃত্বে শুধু একটি সরকার দেখতে চাই। তবে আপনাদের মধ্যে বিরাট সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। আমরা এটাও বলেছি, মানবিক করিডোর বন্ধসহ জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে খুব গুরুত্বসহকারে আপনাদের বিবেচনা করা উচিত। আপনাদের তিনটি কাজÑ বর্তমানে যে বিচারটা চলছে সেটাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান করুন, সংস্কারের যে তৎপরতা চলছে সেখানে যে বৃহত্তর ঐকমত্যগুলো আছে সেগুলো আলোচনা করে যেগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন সেগুলো করে ফেলবেন। চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। তবে উনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা বলেছি হত্যাকারীদের বিচার এবং জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করার জন্য যে গণতান্ত্রিক সংস্কারে যাওয়া প্রয়োজন, এ দায়িত্ব আপনার সরকারকেই নিতে হবে। অন্যথায় আর কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, বলেছি, জনগণ যেহেতু ভরসার জায়গা রেখেছে সে কারণে তাকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আপনার ওপর যত চাপই থাকুক না কেন, ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যাতে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে। বিচারব্যবস্থা যেন দীর্ঘ না হয় এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকে সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

সাকি বলেন, ঐকমত্য কমিশন ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময় নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ঐকমত্যের বিষয়গুলোর আলোকে জাতীয় সনদ আকারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি অনেক আশা ভরসা নিয়ে জাতি আপনাকে এখানে বসিয়েছে। আপনি সব চক্রান্ত রুখে দিয়ে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। আপনি ধৈর্যহারা হবেন না। আমরা সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিচ্ছি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেন, একটি সুন্দর দেশ গড়ার জন্য আমরা দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে আপনাকে নিয়ে এসেছি। আপনার ওপর বিভিন্ন রকমের যে মানসিক নির্যাতন চলছে, তা আমরা অনুভব করছি। আপনাকে যে সহজভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না, তাও বুঝতে পারছি। আমরা বলেছি, আপনি যদি পরাজিত হন তাহলে আমরাও পরাজিত হব। তবে মাঝপথে আপনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। এটা আপনি মাথায় আনবেন না। প্রয়োজনীয় সংস্কার না হলে নির্বাচনে কালো টাকাসহ পেশিশক্তি প্রভাব বিস্তার করবে বলে আমরা আশঙ্কার কথা জানিয়েছি। এজন্য আমরা সংস্কার করার কথা বলেছি।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জুনের মধ্যে যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দিয়েছেন, ওনার সঙ্গে কথা বলে আমাদের ভেতর যে ভয়টা ছিল তা কেটে গেছে। পাশাপাশি আমরা বলেছি, যে বিষয়গুলোয় বিতর্ক সৃষ্টি হয় সে বিষয়ে আপনারা সতর্ক হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ ছিল সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে ফ্যাসিবাদ আমাদের কিছুই করতে পারবে না। বিপদ এলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়, ধৈর্য ধরতে হয়। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, কোরআন-সুন্নাহর বাইরে কোনো প্রস্তাবনা বাংলাদেশে পাস হবে না।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেনÑ সবাই সহযোগিতা করলে উনি দেশ ও জাতিকে একটি গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে ওনার দায়িত্ব শেষ করবেন। তিনি দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলের সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চান। উনি আমাদের কঠিনভাবে ব্যক্ত করেছেন, ২০২৬ সালের জুনের ৩০ তারিখের পর এক ঘণ্টাও উনি ক্ষমতায় থাকবেন না। এর আগেই তিনি নির্বাচন শেষ করবেন।

তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা এখনো কাঙ্ক্ষিত কোনো লক্ষণ দেখতে পাইনি। এরকম অনিশ্চিত লক্ষ্যের দিকে হাঁটা ঠিক নয়। কোন কোন সংস্কার করতে চান তা আমরা নির্দিষ্ট করতে বলেছি। শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে জুলাই বিপ্লব পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে সেখানে হাসিনাসহ তার প্রধান সহযোগীদের বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান চেয়েছি। উনিও আমাদের এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। অতিদ্রুত আমরা এ বিষয়ে একটু সুসংবাদ পাব। আশা করছি অতিদ্রুত কার্যক্রমের ভেতর দুয়েকটা হলেও বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বা মানুষের সামনে দৃশ্যমান হবে। করিডোরের বিষয়ে উনি বলেছেন, দেশবিরোধী কোনো কার্যক্রম তার দ্বারা সংঘটিত হবে না। উনি এ বিষয়ে তার ওপর বিশ্বাস রাখতে বলেছেন। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই তা করা হবে।

ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না বলে প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন বলে মামুনুল হক দাবি করেন।

গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি ছাত্র আন্দোলন থেকে যেসব উপদেষ্টা সরকারে রয়েছেন, তারা যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাদের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরিয়ে দিলে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে।

তিনি বলেন, একটি মহল সামরিক বাহিনীসহ প্রশাসনকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। সামরিক বাহিনীসহ প্রশাসনকে আস্থায় নিয়ে কাজ করতে বলেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন, আগামীতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক হবে।

নুর বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি কোনো কথা বলেননি। এটা বলার সুযোগও নেই। তবে তিনি এটা স্বীকার করেছেন, সে সময় অনেক নতুন উপদেষ্টা ছিলেন যাদের এখন পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে যোগ্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

ভোট জুলাই মাসের ১ তারিখে যাবে না

প্রধান উপদেষ্টা গত দুদিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ২৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জানিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ড. ইউনূসকে সমর্থন জানিয়েছেন। তার রিফর্ম, বিচার ও নির্বাচনের কার্যক্রমের জন্য তাদের সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা বলেছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকবেন। এটা ছিল মূল বার্তা। নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আবারও জানিয়েছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে করবেন। নির্বাচন ৩০ জুনের পর যাবে না। এতে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

শফিকুল আলম বলেন, স্যার তার ভাষণে বলেছেন, আমরা বড় যুদ্ধাবস্থার ভেতরে আছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য যতরকম পারে চেষ্টা করছে। এটা থেকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। বিভাজন থেকে আমাদের উদ্ধার পেতে হবে, এক থাকতে হবে। আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে আমরা যতটুকু দাঁড়াতে পেরেছি, সেটা যেন সামনের দিকে যায়। সবাইকে একসঙ্গে দেখে আমি মনে সাহস পেলাম। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলে আমি অপরাধী অনুভব করব।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, অভ্যুত্থানের কারণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশকে টেনে আনার মহাসুযোগ পেয়েছি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ভেতরে ও বাইরে আরেকটি যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে, যাতে আমরা এগোতে না পারি। যাতে সবকিছু কলাপস হয়ে যায়। আবার যাতে গোলামিতে ফিরে যাই। তিনি যতদিন আছেন, দেশের অনিষ্ট হবে এমন কোনো কাজ তাকে দিয়ে হবে না বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিত থাকতে বলেছেন।

বিএনপির দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) এককথার মানুষ। উনি বারবার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হবে। জুলাই মাসের ১ তারিখ যাবে না।

রোডম্যাপের বিষয়ে তিনি বলেন, যখন সময় আসবে উনি রোডম্যাপ বা সিডিউল ঘোষণা করবেন। ড. ইউনুস জানিয়েছেন, ৩০ জুনের পর একদিনও থাকবেন না।

প্রশাসনের ওপর কি সরকার পূর্ণ আস্থা পাচ্ছে না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের তিনটি বড় কাজ। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। সংস্কারের কাজগুলো হোক। পূর্ণ সংস্কার হোক। দেখতে পাবেন নির্বাচনের বিষয়ে মানুষের আস্থা পাব।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানামতে আজ (রোববার) কেউ কোনো উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি করেছেন বলে শুনিনি। কেউ কেউ রদবদলের কথা বলেছেন কিন্তু পদত্যাগের কথা বলেননি।