নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী আত্মগোপনে থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সরব। দলের পক্ষে যেকোনো পোস্ট নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করছেন। এমনকি দলীয় কর্মীদের ওপর হামলা-মামলার বিষয়ে পোস্ট করছেন নিয়মিত। তবে তিনি দেশে না বিদেশে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
আওয়ামী সরকার পতনের পর এই প্রথম মোবাইলফোনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমকালের সঙ্গে ২৭ মিনিট ২০ সেকেন্ড কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এ সংসদ সদস্য।
সমকাল: ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর কীভাবে, কোথায় আত্মগোপনে যান?
ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী: ৫ আগস্ট সকাল ১১টায় আমি খবর পাই সেনাপ্রধান বক্তব্য দেবেন। আমি আমার নির্বাচনী দুই উপজেলার দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে সেনাপ্রধানের ভাষণ শোনার জন্য বলি। একটা দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সেনাপ্রধানের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। আমি তখন ধারনা করেছিলাম দেশে মনে হয় ক্ষমতার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর পাই, দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন। এর পরই বিভিন্ন এলাকায়, সড়ক-মহাসড়কে মিছিল বের করে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। বিকেল ৪টার দিকে আমার বেসরকারি হাসপাতাল, রাজনৈতিক কার্যালয়ে আগুন, ভাঙচুর, লুটপাট শুরু হয়। বৃষ্টির কারণে কিছুটা সময় পেলে আমি তৎকালীন নাটোরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলি। জেলা প্রশাসক আমাকে উদ্ধার করার দায়িত্ব নেয়। ইতিমধ্যেই হাজার হাজার বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীরা সড়ক-মহাসড়কে চলে এসেছিলেন। পরবর্তীতে বিকেল সাড়ে ৫টার সময় সেনাবাহিনী দিয়ে বনপাড়া থেকে আমাকে উদ্ধার করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমি আমার মতো করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই।’
সমকাল: কতদিন আত্মগোপনে থাকবেন এবং এলাকায় আসলে কি ধরনের সমস্যা হবে বলে মনে করছেন?
ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী: ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি এলাকায় আসলে আমার তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আমি দু’বার এমপি হিসেবে বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুরে দায়িত্ব পালন করেছি। সব সময় দল মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করেছি। তারপরেও যেহেতু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ, আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হয়েছে। হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, গুম করলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। ৫ আগস্টের পরে আমার নামেও ৪টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে নিরাপত্তা না থাকায় আপাতত এলাকায় ফিরছি না। তবে আমি যেখানেই থাকি ভালো নেই। মনে হচ্ছে, জেলখানায় বন্দি আছি। আমি একজন চিকিৎসক। হাজার হাজার অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছি। সংসদ সদস্য থাকাকালীনও আমি প্রতিদিন ১০-১৫ টা করে অপারেশন করেছি। আমি আমার চিকিৎসা পেশায় ফিরতে চাই। যদি কখনও দেশের জন্য কাজ করতে পারি তাহলে করব, না পারলে করব না।
সমকাল: আওয়ামী লীগ কবে স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে পারে এবং দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত এসেছে কি-না?
ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী: আওয়ামী লীগ কোনো ব্যক্তিকে ভয় পায় না, কোনো দেশবিরোধী শক্তিকে ভয় পায় না। দলীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি অবশ্যই। দলের পক্ষে থেকে নির্দেশনা হলো, এখন যেহেতু দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারের ভালো না, কোনো সাধারণ মানুষের জীবনও নিরাপদ না, আজকে যদি ঢাকায় একজন মানুষ যায়, তাকে যদি বলা হয় সে আওয়ামী লীগের দোসর, সঙ্গে সঙ্গে তাকে মারধর শুরু করা হচ্ছে, পুলিশে সোপর্দ করা হচ্ছে। এ কারণে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করেই চলাফেরা করতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ অবশ্যই ফিরে আসবে।
সমকাল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রামেও সারাদেশের মত হামলা চালানো হয়েছিল। হামলা, আন্দোলন বন্ধ করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা পেয়েছিলেন কি না?
ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী: কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে আওয়ামী সরকার সব সময় ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা আমি কখনও পাইনি বরং আমাকে কেন্দ্র থেকে আরও বলা হয়েছিল, আন্দোলনকারী কোনো শিক্ষার্থীদের ওপর যেন হামলা না করা হয়। এ কারণে আমার নির্বাচনী দুই উপজেলায় সব নেতা-কর্মীদের এ সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। যদি কোথাও হামলার ঘটনা ঘটে থাকে সেটা আমার জানার বাইরে।
সমকাল: বিএনপি’র অভিযোগ গত সাড়ে ১৫ বছর বিরোধীপক্ষকে প্রকাশ্যে কোনো সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হয়নি এবং তিনটি ভোটার বিহীন নির্বাচন রাতের অন্ধকারেই করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী: বিষয়টা হলো আমি তো দলের পলিসি মেকার না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলছি, আমি দশ মাসের এমপি থাকাকালিন কোনো জুলুম নির্যাতন আমার নির্বাচনী এলাকায় করতে দেইনি। বনপাড়া পৌর বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল, আমি কোনো বাধা দেইনি বরং প্রশাসনকে বলেছিলাম শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বিএনপি করতে চাইলে করুক। কোনো রকম লুটপাট, চাঁদাবাজি আমি করতে দেইনি। বিএনপি- জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মী কখনো বলতে পারবেন না যে, আমার পক্ষ থেকে বা আমাদের দলের কোনো নেতা-কর্মী কারও কাছে চাঁদা দাবি করেছেন। এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা দু-একটা ঘটলেও সঙ্গে সঙ্গে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সমকাল: সরকার পতনের পর থেকে বিএনপি’র কোনা নেতা-কর্মীকে চাঁদা দিতে হয়েছে কি না?
ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী: চাঁদা তো দিতেই হয়েছে। কিন্তু কারো নাম বলব না, কারণ সময় খারাপ। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চাঁদা ছাড়া চালু করা সম্ভব হয়নি। তাই বলব, চাঁদা দিয়েই আওয়ামী লীগের অনেক সমর্থকরা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।