
পাবনায় নির্মাণাধীন বাড়ির মালিকের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রথমে ২০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে পরে আরও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন তারা। চাঁদা না দিলে নির্মাণকাজ বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের কালীবাড়ি মহল্লায় ঘটেছে এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে ভুক্তভোগী আশরাফুল আলম আরিফের স্ত্রী মাকসুদা পারভীন মুন মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে স্থানীয় বিএনপির ছয় নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন ভাঙ্গুড়া পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম (৪৫), পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোতালেব হোসেন (৫০), ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলিমুদ্দিন (৪৫), ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মানিক হোসেন (৩৫), আকতার হোসেন (৪৫) ও সরপু আলী (৪৫)। তারা সবাই ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের বাসিন্দা।
মাকসুদা পারভীন লিখিত অভিযোগ করেন, তিনি সম্প্রতি তাদের বসতবাড়িতে নতুন ঘর নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। কাজ শুরুর পর থেকে পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের নির্দেশে অন্য অভিযুক্তরা বিভিন্ন সময় তার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে অভিযুক্তরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
মাকসুদা পারভীন দাবি করেন, ‘গত ৫ মে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে তারা ২০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মানিক হোসেন আমার স্বামীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে তার কাছ থেকে ওই টাকা নেন। যার প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজে সংরক্ষিত আছে।’
ভুক্তভোগী গৃহবধূর অভিযোগ, “২০ হাজার টাকা নিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি। পরবর্তী সময়ে গত ১৯ মে সকালে আরিফের দোকানে গিয়ে পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের কথা বলে আবারও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলিমুদ্দিন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা ভুক্তভোগীদের মান-সম্মান নিয়ে আজেবাজে কথাবার্তা বলতে থাকে। একপর্যায়ে ‘তুই যদি আমাদের ৫০ হাজার টাকা না দিস, তাহলে তোকে ঘর নির্মাণ করিতে দেব না’ বলে হুমকি দেন আলিমুদ্দিন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মানিক হোসেন বলেন, ‘আরিফ আমার চাচা। তার বোনদের সঙ্গে বাড়ির জমির অংশ নিয়ে ঝামেলা হওয়ার পর পৌরসভা থেকে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন আমাকে ডেকে তার বোনদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি আপস-মীমাংসার অনুরোধ করা হয়। তার বোনদের জন্য কিছু বাজার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে ১০ হাজার টাকা দেয় আরিফ চাচা। আমি এসব বিষয় বিএনপি নেতা রফিকুল ও মোতালেব ভাইকে জানিয়েছি। এখন সেই টাকা নেওয়ার সিসিটিভির ফুটেজ দিয়ে আমাকেই ফাঁসানোর চেষ্টা করছে তারা। চাঁদা দাবির অভিযোগ বানোয়াট।’
পৌর বিএনপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলিমুদ্দিন বলেন, ‘মোতালেব ভাই বলল যে ওখানে একটু সমস্যা হইছে। তুমি আরিফকে বলো যেহেতেু কথা হচ্ছে, সে কারণে আলোচনা করে কাজ করুক। আমি ওই বাড়িতে যাওয়ার পর আরিফের স্ত্রী আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। তখন বলেছিলাম, আপনারা যেহেতু ওপরে আলোচনা করেছেন, তখন আলোচনা শেষ করে কাজটা ধরেন। ডাউরেক্ট কাজ বন্ধ করার কথা বলি নাই। মানিক যে টাকা নিছে, সেটা আমি জানি না।’
অভিযোগের বিষয়ে ভাঙ্গুড়া পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ির জমি নিয়ে আরিফের সঙ্গে তার বোনদের মধ্যে ঝামেলা চলছে। আরিফ বাড়ির কাজ শুরু করলে গত ৫ মে আরিফের বোনরা পৌরসভায় লিখিত দরখাস্ত দেয় কাজ বন্ধ করার জন্য। পরে দুই পক্ষ আমার কাছে আসে সমাধানের জন্য। আমি তাদের বলেছি, নিজেদের মধ্যে বসে আলোচনা করে সমাধান করে নাও। এটা নিয়ে বসারও কথা ছিল। কিন্তু আরিফ বোনদের সঙ্গে না বসে বাড়ির কাজ চালাতে থাকে। এরপর গত ২০ মে পৌরসভার লোকজন গিয়ে বাড়ি নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। এখন আরিফ ও তার স্ত্রী ভাবছে, আমি কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। চাঁদা দাবির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরিফের ভাতিজা হলো মানিক। তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। এখন মানিক কী জন্য টাকা নিয়েছে আর ওরাই-বা কিসের জন্য টাকা দিয়েছে, এটা আমার জানা নেই। এখানে আমার নাম জড়ানো অমূলক।’
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’