Image description

ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র হচ্ছে মতবিরোধ। হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে এক ছাতার নিতে দাঁড়ানো দলগুলোর মধ্যে চলছে টানাপোড়েন। যেখানে দায়িত্বহীন আচরণ ও অশ্রদ্ধাই বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অবস্থান না পাল্টালে সামনে আরও বড় খেসারত দিতে হবে বাংলাদেশকে। যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয় বলে মনে করছেন তারা। 

স্বৈরাচার ঠেকাতে মত-পথের ভিন্নতা ভুলে ৫ আগস্ট এক মোহনায় ভিড়েছিল যে জনপদ সেখানেই এখন উল্টো সুর। রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা আর স্বার্থের দ্বন্দ্ব এখন অনেকটাই প্রকাশ্যে। ফ্যাসিবাদবিরোধী প্লাটফর্মগুলোও যেন ছন্নছাড়া অবস্থা। যার প্রভাব স্পষ্ট রাজনীতির মাঠে। সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে দূরত্ব বেড়েছ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও। যা নতুন বাংলাদেশের আকাশে ফেলছে কালো মেঘের ছায়া।

মাত্র ১০ মাসে কেন এমন পরিস্থিতির তৈরি হলো বিশ্লেষক ও গবেষকদের মতে এর পুরো দায় নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেই। দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে অভ্যুত্থান পরবর্তী নেতৃত্ব। এক্ষেত্রে বড় দলগুলোকে আরও পরিণত রাজনীতি আচরণের পরামর্শ দেন বিশ্লেষকরা।

লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদরুদ্দিন ওমর বলেন, একটা দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন বিরোধী দলগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করার একধরণের ক্ষমতা সে দলের থাকতে হয়। ড. ইউনূসের পক্ষে অনির্বাচিত সরকার হিসেবে সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কাজেই দেশে একটা সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 

রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, পুরো পরিস্থিতির জন্য আমি দায়ী করি বিএনপিকে। বাংলাদেশের আগামীতে পরিস্থিতি যদি খারাপের দিকে যায় এবং খোদা না করুক যদি গৃহযুদ্ধের দিকে যায় তার জন্য শতভাগ দায়ী থাকবে বিএনপি। 

বিশ্লেষকরা বলছে, রাজনৈতিক ব্যর্থতায় গণতন্ত্রের জন্য ৯০‘র পরবর্তী বাংলাদেশ যে বিশ্বাসঘাতকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, ২৪ এর অভ্যুত্থানের পর সেই আকাঙ্খার বাস্তবায়ন না হলে, পরিণতি হবে একই।

রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির যে নির্বাচনী ব্যবস্থা, এর সমস্ত কিছু যেমন আছে তেমনি রেখে দলগুলো চাচ্ছে আমাকে নির্বাচন দাও। তারা নির্বাচন দাওয়ের মধ্যদিয়ে তো ক্ষ্যান্ত থাকলো না, তারা ক্রমাগতই সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকলো। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, একজন একজন করে ডাকা না, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে বসা। এটা অনেক জরুরী। সবার সঙ্গে বসে সমস্যাগুলো শুনে সরকার যেটা ভাবছে ও তারা যেটা ভাবছে তার ফারাক কোথায় সেটা তো দেখতে হবে। 

অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠন ও তাদের পথ চলায় ত্রুটি দেখছেন কেউ কেউ। যার সুযোগ নিতে মরিয়া পুরনো ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সাব্বির আহমেদ আরও বলেন, একটা সদ্য জন্ম নেয়া দল যার বয়স মাত্র তিন মাস কিন্তু দলটার যে আচার আচরণ সে এমনভাব দেখাচ্ছে যে সে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল। যাকে ইচ্ছা তাকে হুমকি দিচ্ছে। এখনও ক্ষেত্র বিশেষে মব করছে। 

লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদরুদ্দিন ওমর আরও বলেন, এদের কিছু কিছু কথাবার্তা প্রতিক্রিয়াশীলও বটে। এটা খুবই হতাশাব্যঞ্জক ব্যাপার। কারণ যারা মনে করেছিল যে ছাত্ররা বেরিয়ে এসে এদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একটা বড় ভূমিকা রাখবে। গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা রাখবে, সেখানে দেখা গেল তারা উল্টো কাজ করছে। 

রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার আরও বলেন, গণ অভুত্থ্যানকে পূর্ণ বিজয়ের দিকে না নিয়ে গিয়ে তাদের নির্বাচনী পথে আসাকে আমি সমর্থন করি না। আপনি ড. ইউনূসকে অরক্ষিত রেখে একটা সেনা সমর্থিত সরকার বানিয়ে আপনারা রাস্তায় নির্বাচনের জন্য হৈ চৈ করছেন। এটা তো হবে না গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 

সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আর নানা দাবিতে টানা আন্দোলন ঘিরে ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগের ইচ্ছার কথা জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে আরো জটিল হয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।