
‘ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান’—বুধবার (২২ মে) ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে এমন মন্তব্যের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরের গুঞ্জন ওঠে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের। তবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই সব গুঞ্জন উড়িয়ে ‘দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য, আগের বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ’ শীর্ষক তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের এক স্ট্যাটাসেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে ফের ঐক্যের সুর লক্ষ্য করা গেছে।
এরপর অনেকেই ঐক্যের কথা বলছেন। পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যে সন্ধ্যার পর ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আর রাতে জরুরি বৈঠকে বসে জামায়াতে আমির ডা. শফিকুর রহমান দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, দ্রুত নির্বাচনের দাবির সঙ্গে বিএনপি নতুন করে সরকারের ভেতরে যে দুজন ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছেন তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলা হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছে বিএনপি। সর্বশেষ এ দাবির সঙ্গে আজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দিতে হবে। আর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার গতকালের বক্তব্য আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাকেও অব্যাহতি দিতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে ইউনূস সরকার। যদিও প্রায় একই সময় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা করিডর নিয়ে আলোচনা করেননি এবং করবেন না। এটা ছিল এক হাস্যকর আওয়াজ। কারণ তিনি একাধিকবার বলেছেন, এ নিয়ে কে, কী বলল-তাতে যায় আসে না। এ ধরনের সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন অনেকে, করছেন প্রতিবাদ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার দুবাইভিত্তিক একটি বিদেশি কোম্পানিকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সেটিই এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে আবার গতি পেয়েছে —এমন খবরে অনেকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। যদিও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে একটি সমীক্ষা এখন চলছে।
এরই মধ্যে গতকাল সেনাপ্রধান আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করার পাশাপাশি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়েও কথা বলেছেন। সেনাপ্রধান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত কেবল নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। যাই করা হোক না কেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে সেটা হতে হবে।’
এদিকে, এ ঘটনার রেশ না কাটতেই আজ দুপুরের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ‘অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করেছেন’— ইংরেজি গণমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারের এমন একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এরপর গুঞ্জন ওঠে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের। কয়েকটি সূত্রের তথ্যের মতে, নানা সমালোচনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। তবে উপদেষ্টা পরিষদ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তির তরুণরা তাকে সেটা করতে দেননি।
ফের ঐক্যের সুর ও জুলাই ঘোষণাপত্র
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে অন্যতম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, ছাত্রশিবির, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশসহ (আপ বাংলাদেশ) একাধিক রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নানা বিষয়ে মতানৈক্য দেখা যায়। সর্বশেষ গত ৮ মে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে একসঙ্গে এসব দল ও প্ল্যাটফর্ম টানা আন্দোলনে নামলে ১০ মে দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তর ইস্যু নিয়ে তাদের মধ্য মতানৈক্য দেখা দেয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনাও করতে দেখা গেছে। ১০ মে রাতে এক পোস্টে যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। পোস্টে তিনি বলেন, ৭১-এর প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। এরপর তার পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত উঠে আসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ওই সময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতেও তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পাশাপাশি ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ১০ জুন এই ডেড লাইন শেষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে অনৈক্য দেখা দিলে সামনে তাদের সবার জন্যই এটি বিপদের কারণ হতে পারে। পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্রও ধামাচাপা পড়তে পারে। এজন্য ফের ঐক্যের সুর উঠেছে তাদের মধ্যে।
তবে সব বির্তকের অবসান ঘটিয়ে আজ বিকেলে উপদেষ্টা মাহফুজ লিখেছেন, ‘দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। আগেকার যে-কোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল—সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সরকারে আর একদিনও থাকলে অভ্যুত্থানের সকল শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই। পুরাতন বন্দোবস্তের বিভেদকামী স্লোগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। দেশপ্রেমিক জনগণ যারা জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, তাদের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ঐক্যের এবং ধৈর্যের। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।’
এরপর একইসুরে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেন, জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল শক্তির প্রতি আহ্বান—যে বিভাজনটা অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের মধ্যে এসেছিল, সেই বিভাজনকে দেশ ও জাতির স্বার্থে মিটিয়ে ফেলতে হবে। এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নগ্ন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তির জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখবেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনে দেশে-বিদেশে অনেকে নাখোশ হয়ে আছে। এই নাখোশ বান্দারা আমাদের বিভাজনের সুযোগ নিতে নিতে আজকের এই অস্থিতিশীল দিন এনেছে।
তিনি আরও লেখেন, আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলে দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খণ্ড-বিখণ্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশি-বিদেশি দোসরেরা আমাদের তছনছ করার হীন পাঁয়তারা করবে। দেশ ও জাতির প্রতি দায় এবং দরদ আছে বলেই আমরা এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। দেশ ও জাতির জন্যই এবার আমাদেরকে এক হয়ে আমাদের স্বদেশকে বিনির্মাণ করতে হবে। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য এই ঐক্য নয়, বরং আমাদের দেশের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোন বিকল্প নেই।
একইসুরে মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদ লেখেন, নিজ স্বার্থে আপনারাই জুলাইকে ধ্বংস করেছেন। বহুবার বলেছি ঐক্য বিনষ্ট করবেন না, উপরন্তু শুধু দেখেছি স্বেচ্ছাচারিতা আর অহংকার। বারবার অপ্রিয় কথাগুলো বলায় সবক্ষেত্রেই হয়েছি কোণঠাসা। প্রত্যেককেই হিসেব দিতে হবে, জুলাইয়ের হিসাব। মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছি বহুবার, জুলাইয়েও হয়েছি এখনও হচ্ছি।।
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম লেখেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান—সব ধরনের মান, অভিমান ও ক্ষোভ পাশ কাটিয়ে, জাতীয় স্বার্থে এখনই দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন। জুলাইয়ের গাদ্দারদের বলতে চাই— ইতিহাস তোমাদের ক্ষমা করবেনা। জুলাইয়ের প্রধান শক্তিগুলোর বিভাজন সৃষ্টির দায় তোমাদেরই।
তিনি লেখেন, জুলাই বিপ্লবের শক্তিগুলোর পিঠে ছুরি মেরে তোমরা মূলতঃ দেশকে ছুরিকাঘাতে আহত ও রক্তাক্ত করেছো। এই মুহূর্তে বলব, সবাই যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন। দ্বিধা নয়—এই লড়াই দেশ ও জনগণের জন্য। আল্লাহ যেন এই জাতিকে সাহায্য করেন এবং সকল ধরনের ক্ষতি ও ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেন। আমিন।
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম লেখেন, '৩৬ জুলাই' বৃহৎ শক্তি ও স্পিরিটের নাম। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর শিশুসুলভ অপরিপক্ব আচরণের কারণে জুলাই হারিয়ে যেতে পারে না। শহীদ-গাজীদের প্রতি আমাদের দায় আছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে আমরা এক ও অভিন্ন। সকলের মনে রাখা দরকার- প্রকৃতি তার নিজস্ব গতির আলোকেই চলে। যারাই বাড়াবাড়ি করবে, প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে কখনো ভুল করে না। মহান আল্লাহ আমাদের সহায়। হাসবুনাল্লাহ।
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন ও ও আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক করা হয়েছে আলী আহসান জুনায়েদ লেখেন, সবার আগে বাংলাদেশ। দেশ বাঁচাতে আমি ও আমরা জান দিতে রাজি। জুলাইয়ের যোদ্ধারা সারাদেশে ও ঢাকায় জান-জীবন দিয়ে এই দেশকে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করেছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকল দল-মত-শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ ছিলো। ঐক্য বিভাজনের জন্য দায়ীরা সতর্ক হয়ে যান। অসতর্ক কথা বলে ঐক্য নষ্ট করে দেশকে বিপদের মুখে ফেলবেন না। জুলাইয়ের যোদ্ধারা আবারও প্রয়োজনে এক হয়ে দেশ বাঁচাতে লড়বে। বাংলাদেশ জিতবে ইনশাআল্লাহ।
আর যুগ্ম সদস্য সচিব রাফে সালমান রিফাত লেখেন, আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে বাঁচাতে জুলাইয়ের শক্তিগুলোর ঐক্য আবশ্যক।
ঢাবি ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করা মির্জা গালীব লেখেন, দেশে এখন যে অস্থিরতা চলতেছে এর মূল কারণ জুলাইকে কেন্দ্রে রেখে আমরা যে ঐক্যের কথা বার বার বলে আসতেছি, সেই ঐক্য দুর্বল হয়ে গেছে। দুঃখজনক হইল, জুলাইয়ের নায়কদের অনেকেই এই বিভেদ তৈরি করছেন। সাথে আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতারাও। এই পরিস্থিতি দেশের ভবিষ্যতের জন্য মোটেও ভাল না।
রাতে এক স্ট্যাটাসে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া লেখেন, BAL, North & Delhi জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরকেই খাবে। You're not one of them—just co-opted temporarily. আমাদের না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু। একমাত্র আফসোস, গণতান্ত্রিক রুপান্তর আর এদেশের মানুষের ভাগ্য কোনোটাই ইতিবাচক পথে যাবে না আরকি। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধহয় এদেশের ভাগ্য।
ইশরাক ইস্যুতে বিএনপি-এনসিপি বাগ্যুদ্ধ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে রাস্তা আটকে আন্দোলন চলার পর তা ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ দেখে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন ইশরাক। গত কয়েক দিনের মতো আজও ইশরাক হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা মৎস্য ভবন মোড় ও কাকরাইলের মুখে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে আজ বিকেলে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এর আগে আজ সকালে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট খারিজ করেন। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, এই রিট করার এখতিয়ার না থাকায় রিটটি খারিজ করা হলো। একইসঙ্গে নির্বাচনী ফোরামের মামলা অন্য ফোরামে না গিয়ে এখানে আসা ঠিক হয়নি বলেও উল্লেখ করেন আদালত।
এই ইস্যুতে বিএনপি-এনসিপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েকদিন ধরে বাগ্যুদ্ধ দেখা গেছে। সর্বশেষ রিট খারিজের পর এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ফেসবুকে লেখেন, ‘মব তৈরি করে যদি হাইকোর্টের রায় নেওয়া যায় তাহলে এই হাইকোর্টের দরকার কি?’
সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াতে ইসলামীর
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শাফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। এতে আরো বলা হয়, বৈঠকে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক নাহিদের
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গিয়ে তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন নাহিদ ইসলাম। এদিকে সন্ধ্যায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন।