
স্নাতকে ভর্তির সময় সেফটি মানি তথা জামানত হিসেবে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা জমা নেয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)। স্নাতক পাস করলে উক্ত অর্থ শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ছাত্রলীগ র্যাগ কমিটি গঠন করে নামমাত্র প্রোগ্রাম আয়োজন করে আত্মসাৎ করত। এদিকে দুই ব্যাচের ক্ষেত্রে কোনো র্যাগ প্রোগ্রাম আয়োজন ছাড়াই পুরো অর্থ আত্মসাৎ করে নিষিদ্ধ এ ছাত্রসংগঠনটি।
জানা গেছে, ৪১তম ও ৪২তম ব্যাচের জামানতের পুরো ৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা ছাত্রলীগ সরাসরি আত্মসাৎ করে। ৪১তম ব্যাচের ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা তোলেন শাখা সভাপতি তরিকুল ইসলাম টিপু এবং ৪২তম ব্যাচের ৪ লাখ ২ হাজার টাকা তোলেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ জয়। দুজন ২০২৩ সালের ৭ জুন অর্থ উত্তোলন করেন। একাউন্ট সেকশন থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
অর্থ উত্তোলনের জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদনপত্রে যেসব ছাত্রলীগ নেতার স্বাক্ষর আছে তারা হলেন, ৪১তম ব্যাচের আশিক বিন বাশার, মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম টিপু, তাহসীন আহমেদ তন্ময় এবং ৪২তম ব্যাচের নাজমুস সালেহীন, দীপ্ত সূর, প্রয়াত আসিফ করিম ও আবদুল্লাহ জয়।
৪১তম ও ৪২তম ব্যাচের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা জানা নেই উক্ত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনায় সাবেক শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের র্যাগ ডে উদযাপন হয়নি। পরিকল্পনা করছিলাম পাঁচ বছর পর এসে নতুন করে র্যাগ ডে উদযাপন করব। জামানতের টাকা যে ছাত্রলীগ তুলে নিয়েছে তা আমাদের ব্যাচের জানা ছিল না। জড়িত প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
৪২তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের ব্যাচের জামানতের অর্থ ছাত্রলীগ তুলে নিয়েছে, এ বিষয়ে আমাদের ব্যাচের কেউই অবগত ছিল না। আমরা জানতাম যেহেতু র্যাগ ডে হয়নি এই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই রয়েছে। এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক।
একই ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ইলিয়াস বলেন, করোনার কারণে আমরা হল ফেস্ট, র্যাগ ডে না করেই জবফিল্ডে প্রবেশ করি। আমাদেরকে কিছু না জানিয়ে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীর সাথে মিলে জামানতের সব টাকা হাতিয়ে ফেলে। বিষয়টা খুবই দু:খজনক। কয়েকজন শিক্ষার্থী তৎকালীন উপাচার্যের সাথে মিলে পুরো ব্যাচের টাকা মেরে দেয় কিভাবে? এটা সুস্পষ্ট তদন্তের দাবী রাখে। উপাচার্যও বা কিভাবে তদন্ত না করে গুটি কয়জনের হাতে টাকা তুলে দেয়!
জামানতের টাকা উত্তোলন সংক্রান্ত আবেদনপত্রে স্বাক্ষরকারীর অনেকে স্বাক্ষর দেননি জানান। ৪১তম ব্যাচের মোশাররফ হোসেন জানান, আবেদনপত্রে আমাদের স্বাক্ষর ব্যবহারের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আমার ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও এতে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। আমরা চাকরিরত হওয়ায় ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময়ও হয় না। অথচ আমাদের অনুপস্থিতিতে এই টাকা তোলা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
স্বাক্ষরকারী ৪২তম ব্যাচের দীপ্ত সুর বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না এবং আমি টাকা তুলতে যাইও নাই। আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। আমি চাকরি করি ২০২২ সাল থেকে। এ টাকা তোলার বিষয়ে আমি জড়িত না।
জামানতের টাকা উত্তোলন বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি তরিকুল ইসলাম টিপু ও আব্দুল্লাহ জয়ের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
এ নিয়ে তৎকালীন রেজিস্ট্রার কাবেরী মজুমদার বলেন, আমার স্পষ্ট মনে নেই তখন কী ঘটেছিল। তবে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার প্রেক্ষিতে এ টাকার অনুমোদন দেয়া হয়।
তৎকালীন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. মুহাম্মদ আলী বলেন, এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করতে রাজি না, তখন আমাকে উপাচার্য যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন আমি সেই অনুযায়ী কাজ করেছি।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে তৎক্ষণাৎ কোনো মন্তব্য করেননি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তিনি প্রতিবেদককে শনিবার অফিসে দেখা করতে বলেন।