Image description
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)-এর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৩ মে) ঘোষিত এই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষকদের পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছে। এই কমিটিতে ৯টি পদের বিপরীতে ১৫ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদের মধ্যে অন্তত ৬ জন শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী সমর্থিত হিসেবে পরিচিত এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য হিসেবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন কয়েকজন।

এই কমিটি প্রকাশের পর ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র আলোচনার জন্ম দেয়। তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, তারা বিএনপিপন্থী। আওয়ামী পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই।’

জানা গেছে, ঘোষিত এই কমিটিতে কুবি ইউট্যাবের সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী প্রভাষক মাহিন উদ্দিন ২০২১ সালের শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে নীল দল তথা আওয়ামীপন্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিভিন্ন সভায়ও তাকে নিয়মিত দেখা গেছে।

কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কার্যকরী সদস্য ছিলেন। একই বছর নীল দলের প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি পদেও নির্বাচিত হন। অপর সহ-সভাপতি মো. জুলহাস উদ্দিন বঙ্গবন্ধু পরিষদের ‘স্বপন-এমদাদ’ অংশের নির্বাচন কমিশনার ছিলেন এবং আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত শিক্ষক নেতা ড. মো. আবু তাহেরের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ ড. মো. আশিকুর রহমান এবং যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান—এদের প্রত্যেককেই পূর্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকতে দেখা গেছে।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি যদি আদর্শ নির্ভর হতো, তাহলে একসময় আওয়ামীপন্থী এবং পরে বিএনপিপন্থী সংগঠনে একই ব্যক্তি নেতৃত্বে থাকতে পারতেন না। বরং এটি একটি গভীর সংকেত, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আদর্শ নয়, ‘অবস্থান’ নির্ধারিত হচ্ছে সুবিধার ভিত্তিতে। এই ধরনের দ্বিচারিতা কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশকে কলুষিত করছে।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সক্রিয় সদস্য হয়েও ভিন্ন আদর্শের সংগঠনে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘আমি ২০২২ সালের বঙ্গবন্ধু পরিষদের কমিটিতে ছিলাম। তবে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আচরণের প্রতিবাদে পদত্যাগ করি। যদিও লিখিত পদত্যাগপত্র দিইনি, তবে সমস্ত অনলাইন গ্রুপ থেকে সরে যাই।’

এ বিষয়ে ইউট্যাবের সদস্য ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম বলেন, ‘শাহাদত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য ছিল এটা জানি। তবে পারিবারিকভাবে বিএনপি ব্যাকগ্রাউন্ডের এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল।’

আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিএনপি রাজনীতিতে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কেন্দ্র থেকে সব কমিটি তদারকি করতে পারি না। স্থানীয় নেতাদের সুপারিশেই কুবি শাখার কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে কুবির বিএনপিপন্থী শিক্ষক ও ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার জানান, ‘যাদের পদায়ন করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির লোকদের সাথে কথা বলেছি। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আমরা কেন্দ্রে সুপারিশ করেছি।’

তিনি আরও জানান, ‘অনেকেই ছাত্র অবস্থায় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল করতো। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে এবং তাদের ভয়ের কারণে সেখানে তারা যেতো। একটা নিয়োগের জন্য কতকিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেগুলা আপনারা জানেন। কেউ চাকরি বাঁচানোর জন্য, কেউ প্রমোশনের জন্য সেখানে যেতে বাধ্য হয়েছে।’