
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ বছরে এ পর্যন্ত উপাচার্যের ( ভিসি ) দায়িত্ব পালন করেছেন পাঁচজন । তাঁদের মধ্যে তিনজনকেই আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিতে হয়েছে । তাঁরা হলেন অধ্যাপক ড . এস এম ইমামুল হক , অধ্যাপক ড . বদরুজ্জামান ভূঁইয়া এবং সর্বশেষ অধ্যাপক ড . শুচিতা শরমিন । তিনজনকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি পক্ষকে সুবিধা দেওয়া এবং নিয়োগ-বাণিজ্য ও দলীয়করণের খেসারত দিতে হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ।
তবে এবারের রদবদলে উপাচার্য শুচিতার সঙ্গে উপ - উপাচার্য এবং ট্রেজারারকে অপসারণে বিস্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র - শিক্ষকেরা । আন্দোলনের ২৯ দিন গত মঙ্গলবার দুপুরেও প্রশাসনের কোনো আশ্বাস না পেয়ে হতাশ হয়ে মহাসড়ক অবরোধে নামেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা । সন্ধ্যায় খবর আসে , সরিয়ে দেওয়া হয়েছে উপাচার্য শুচিতা শরমিনকে । এরপর শিক্ষার্থীরা যখন ক্যাম্পাসে আনন্দমিছিল করছিলেন , তখন নতুন খবর আসে , উপ - উপাচার্য অধ্যাপক ড . গোলাম রব্বানী এবং ট্রেজারারকেও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে । অপ্রত্যাশিত এমন খবরে হতাশ ছাত্র - শিক্ষকেরা ।
আন্দোলনে ১৫ বছরে শেষ পৃষ্ঠার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন , তাঁরা কেবল উপাচার্যের অপসারণ চেয়েছিলেন । কারণ , উপাচার্য শুচিতা আট মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কোনো কাজ করেননি । উপাচার্য শুচিতার সঙ্গে উপ - উপাচার্য এবং ট্রেজারারকে অপসারণ প্রত্যাশিত ছিল না বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড . হাফিজ আশরাফুল হক ।
তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন , বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক , কর্মকর্তা , কর্মচারী বিরক্তিকর । তাঁদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে । তাঁদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । বিদায়ী উপাচার্যের বিষয়ে মুহসিন উদ্দীন বলেন , ‘ ড . শুচিতা কয়েকজনকে নির্দিষ্ট সুবিধা দিয়েছেন । যাকে যখন খুশি চেয়ার থেকে সরিয়ে দিয়েছেন ।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সদ্য সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছু শিক্ষক , কর্মকর্তা, কর্মচারী আছেন, যাঁরা উপাচার্যকে নিজেদের বলয়ে নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করে উপাচার্যকেই বিতর্কিত করেন । যে তিনজন উপাচার্য এ পর্যন্ত আন্দোলনে অপসারিত হয়েছেন , তাঁরা একই গ্রুপের কারণে বিতর্কিত হয়েছেন । এই তিনজন উপাচার্যকে বিতর্কিত করার পেছনে দায়ী সাবেক একজন প্রক্টর । সাবেক উপাচার্য এস এম ইমামুল হকও আন্দোলনের মুখে বিদায় নেন । তাঁকে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল সরকার ছুটিতে পাঠায় । ইমামুলের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন সেই প্রক্টর । নিয়োগ - বাণিজ্য , স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মে জড়ান ড . ইমামুল । সাবেক আরেক উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়া আন্দোলনের মুখে বিদায় নেন ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট । সাবেক স্বৈরাচারের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ার পর বেশি দিন টিকতে পারেননি তিনি । বদরুজ্জামানেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন সেই প্রক্টর । নতুন উপাচার্য যোগ দেবেন আজ : বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য ড . মোহাম্মদ তৌফিক আলম আজ বৃহস্পতিবার যোগদান করবেন । তিনি বলেছেন , “ আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ ।”