
মোহাম্মদ রফিকুল আমীন, ডেসটিনি গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। কখনও পাহাড়ে গাছ বিক্রির নামে, কখনও বহুতল ভবনের মালিকানার শেয়ার বিক্রির কথা বলে মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। যদিও একসময় বিনিয়োগকারী মানুষের মোহ কাটে। টাকা আদায়ে তারা রাস্তায় নেমে আসেন।
মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের নামে ২০ লাখের বেশি মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ১২ বছরের কারাদণ্ড পান রফিকুল আমীন। আরও একাধিক মামলায় সাজা হয় তার। সাজাপ্রাপ্ত রফিকুল আমীন জামিন পেতে বিভিন্ন সময় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন।
২০১৬ সালের শেষের দিকে আপিল বিভাগ রায়ে বলেন, ‘ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের গাছ বিক্রি করে ২৮০০ কোটি টাকা গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিলে জামিন পাবেন রফিকুল আমীন।’ কিন্তু তিনি আপিল বিভাগের সেই আদেশ মানেননি।
সম্প্রতি সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কারামুক্ত হয়েছেন রফিকুল আমীন। কারামুক্ত হয়েই ‘আ-আম জনতা পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। একসময় ডেসটিনির নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা রফিকুল আমীন এখন রাজনৈতিক দল খুলে আসলে কি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান— তা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রফিকুল আমীন নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ করেছেন। তিনি কোনো আদালত কর্তৃক খালাসপ্রাপ্ত হননি, নির্দোষ প্রমাণিত হননি। এ কারণে তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করলেও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। যেহেতু দল গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচন করা। সেহেতু সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হবার কিংবা সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে, “কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি- (ঘ) ‘কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষীসাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।” অর্থাৎ রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারলেও তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যতটুকু আমি জানি, ডেসটিনির রফিকুল আমীনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ এসেছিল। সেখানে তিনি নিম্ন আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। উচ্চ আদালতে তিনি খালাস পাননি। কিন্তু তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ কারণে তিনি জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু এ মুহূর্তে তিনি সাজা থেকে খালাস পাননি। ফলে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের কারণে আমাদের সংবিধানে যে বাধা বা নিষেধ আছে তার মধ্যে তিনি পড়বেন। অর্থাৎ তিনি নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি নন।’
‘অনেক সময় ডেসটিনিকে কেন্দ্র করে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে, সেটি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের মধ্যে পড়ে। ফলে আমি মনে করি রফিকুল আমীন নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং তিনি নির্বাচনে উপযুক্ত হতে পারবেন না। কারণ, তিনি আপিলে খালাস পাননি। ফলশ্রুতিতে মানুষকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার যে আহ্বান তিনি জানাচ্ছেন সেটি প্রশ্নবিদ্ধ এবং নৈতিকভাবে তিনি তা পারেন না। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের চিন্তাভাবনা করা উচিত।’

গত ১৭ এপ্রিল ডেসটিনির মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দল ‘আ-আম জনতা পার্টি’। ঢাকার বনানীতে একটি হোটেলে দলটি আত্মপ্রকাশ হয়। ওই সময় রফিকুল আমীন দলটির পক্ষ থেকে নয় দফা কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের আপামর জনতা বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি) নামে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছে।’
বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টির স্লোগান হলো— ‘শিক্ষা-সমতা সু-বিচার যেখানে, আ-আম জনতা হাঁটবে সেখানে।’
এদিকে, ডেসটিনিতে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হওয়া একাধিক গ্রাহক ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, কথার ফুলঝুরি আর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে রফিকুল আমীন হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়েছেন। তিনি আবার রাজনৈতিক দল গঠনের নামে নতুন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন।
ছাত্রজীবনে ডেসটিনিতে টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হন ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান। তিনি রফিকুল আমীনের রাজনৈতিক দল গঠনের ঘটনায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, ‘প্রতারণার দায়ে রফিকুল আমীনের সাজা হয়েছিল। উনি সাজা ভোগ করে বের হয়েছেন। উনার মতো ব্যক্তিরা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করে যখন নির্বাচনের কথা বলেন, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। উনি যেহেতু সাজাপ্রাপ্ত, এ কারণে নির্বাচন করতে পারবেন না। সবচেয়ে বড় কথা, উনি লাখ লাখ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমি মনে করি, এ ধরনের ব্যক্তিরা নির্বাচনটাকে ব্যবসা হিসেবে ব্যবহার করতে চান। যেন কেউ তাদের ছুঁতে না পারে।’
‘উনি (রফিকুল আমীন) মনে করেছেন, আমাকে তো আদালত বিচার করে সাজা দিয়েছেন। আমি যদি নিজেই সরকারের একটা অংশ হয়ে যায়, তাহলে তো আমার বিচার করার কেউ থাকবে না। আমার মনে হয় এ ধরনের মোটিভ থেকে তিনি রাজনীতিতে আসতে চাচ্ছেন। অথচ তিনি একজন চিহ্নিত প্রতারক। মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করা ব্যক্তিকে আমরা রাজনীতিতে দেখতে চাই না। রাজনীতি করবেন ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিরা।’
‘হাজার হাজার মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করা ব্যক্তিটি এখন জনগণের সেবক হতে চায়, নির্বাচন করতে চায়। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। এটা জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছু নয়। রাষ্ট্রকে তাকে থামাতে হবে। এর বিকল্প নেই।’
একই সুরে কথা বলেন দেশের আইনজ্ঞরা। ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এইচ এই সানজিদ সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ডেসটিনি গ্রুপের রফিকুল আমীন সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। সাংবিধানিকভাবে রাজনৈতিক দল গঠন করার অধিকার সবার রয়েছে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। রফিকুল আমীন কয়েকটি মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। উনাকে আপিল বিভাগ জামিনের শর্ত হিসেবে ২৮০০ কোটি টাকা জমার নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। এসব প্রেক্ষাপট যদি আমরা দেখি তাহলে উনি যেহেতু একজন দণ্ডিত ব্যক্তি তাই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং সংবিধান অনুযায়ী তিনি কোনো নির্বাচনের যোগ্য নন। তিনি ডিস-কোয়ালিফায়েড।’
‘আমরা যেটা মনে করি, মানুষের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটা রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। উনার যে মামলাগুলোতে সাজা হয়েছে সবগুলোই দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের দায়ে। সেই প্রেক্ষাপটে রফিকুল আমীন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। উনি যে পর্যন্ত আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত না হবেন ততদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দল গঠন করা বা রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা, যা কোনোভাবেই নৈতিকতার দিক থেকে সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ। উনাকে আগে ক্লিয়ার করতে হবে যে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সত্য নয়। আদালত কর্তৃক সেটা প্রমাণিত হতে হবে। তারপর যদি উনি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, জনগণ উনাকে সাধুবাদ জানাবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’
প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এস এম শাহজাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে কেউ যদি দুই বছর বা তার বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং সেই সাজা ভোগ করার পর যদি পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয় তাহলে তিনি কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। এটা আইনে আছে। এখন কোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি আদালত থেকে খালাস না পান তাহলে তার জন্য এই আইন প্রযোজ্য।’
গাছ বিক্রি করে ২৮০০ কোটি টাকা দেওয়ার আদেশ মানেননি রফিকুল আমীন
২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এক রায়ে বলেন, ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের গাছ বিক্রি করে ২৮০০ কোটি টাকা অথবা অন্য কোনোভাবে ২৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিশোধ করতে পারলে জামিনে মুক্তি মিলবে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের।
তাদের দুজনকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুদকের আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, ছয় সপ্তাহের মধ্যে ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের ৩৫ লাখ গাছ বিক্রি করে ২৮০০ কোটি টাকা জমা দিতে হবে সরকারি কোষাগারে। ওই অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছেছে কি না, তা আদালতকে জানাবে দুদক।

দুদকের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসেন জামিনে মুক্তি পাবেন। গাছ বিক্রি করে তারা যদি ২৮০০ কোটি টাকা নাও পান, জামিনের জন্য ২৫০০ কোটি তাদের দিতেই হবে— বলেন সর্বোচ্চ আদালত। দুই আসামি যেন কারাগারে বসেই গাছ বিক্রির জন্য স্বাক্ষর দেওয়া এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারতে পারেন, সেজন্য কারা কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে বলা হয়। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের ওই আদেশ মানেননি রফিকুল আমীন। এরপর যখনই রফিকুল আমীনের জামিনের আবেদন করা হয় তখন আপিল বিভাগ ২৮০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা তার আইনজীবীদের স্মরণ করিয়ে দেন।
২০১৭ সালের ১০ জুলাই আপিল বিভাগ রফিকুল আমীনের জামিন শুনানিতে তার আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে বলেছিলেন, ‘ডেসটিনির চেয়ারম্যান ও এমডি জামিনে একবার কারাগারের বাইরে গেলে তারা এক টাকাও জমা দেবেন না, উল্টো তারা আরও অর্থ বাইরে পাচার করবেন। এমনকি জামিনে একবার বের হয়ে গেলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
খালাস নয়, সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় মুক্তি পান রফিকুল আমীন
গত ১৬ জানুয়ারি অর্থপাচারের মামলায় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কারাগার থেকে মুক্তি পান বিতর্কিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন।
রফিকুল আমীনের আইনজীবী এহসানুল মাহবুব সমাজী সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘১২ বছর পূর্ণ হওয়ায় রফিকুল আমীন মুক্তিলাভ করেছেন। তবে, তার স্ত্রী ফারহা দিবার সাজা ১২ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তিনি কারাগারেই আছেন।’
প্রসঙ্গত, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রফিকুল আমীনসহ কোম্পানির ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ডের রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদেরকে চার হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। মানি লন্ডারিংয়ের দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ টাকার দ্বিগুণ অর্থাৎ চার হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকার যে অর্থদণ্ড করা হয়েছে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে রায়ে উল্লেখ করার হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- ডেসটিনির পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুনুর রশিদ, প্রধান কার্যালয়ের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মো. সাইদ-উর রহমান, মেজবাহ উদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস, পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, ফারহা দিবা ও জামসেদ আরা চৌধুরী, প্রফিট শেয়ারিং ডিস্ট্রিবিউটর মো. জসিম উদ্দীন ভূঁইয়া, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ও সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ এস এম আহসানুল কবির বিপ্লব, জোবায়ের সোহেল ও আব্দুল মান্নান এবং ক্রাউন এক্সিকিউটিভ মোসাদ্দেক আলী খান।
১৯ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা রফিকুল আমীন, তার স্ত্রী ফারহা দিবা ও মোহাম্মদ হোসেনকে সেদিন আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা হারুনুর রশিদও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক বাকি ১৫ আসামির বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল মাহবুব সমাজী ওই সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তিনজন ১২ বছর ধরে কারাগারে আছেন। রায়ে আদালত বলেছেন, কারাগারে থাকার বয়স সাজা থেকে বাদ যাবে। সেক্ষেত্রে তাদের সাজা হয়ে গেছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা আছে কি না, তা যাচাই করা হবে। আমার জানামতে রফিকুল আমীনের বিরুদ্ধে মোট দুটি মামলা ছিল। এখন ওই দুটি থেকেও তিনি মুক্ত।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা দুটি দায়ের করে। ২০১৪ সালের ৪ মে একটি মামলায় ১৯ জনের এবং অপর মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০২২ সালের ১২ মে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে অর্থপাচারের অভিযোগে রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া হারুনুর রশিদসহ ৪৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।