
যুদ্ধ হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের। তবে এর পেছনের কূটনৈতিক ও সামরিক খেলায় মূল ভূমিকায় ছিল চীন-তুরস্ক বনাম ফ্রান্স-ইসরায়েল।
আর হবেই না কেন? ভারত যেখানে ব্যবহার করেছে হেরোন, হেরোপ, রাফালের মতো ড্রোন ও যুদ্ধবিমান, সেখানে পাকিস্তানের শক্তির মূলভিত্তি ছিল বাইরাক্তার, সোনগার, ও জে-১০সি—তুরস্ক ও চীনের তৈরি প্রযুক্তি।
আর এখানেই বাজিমাত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করে বলা যায়, তুরস্কের ড্রোনই এ যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ফারাক গড়ে দেয়। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধবিমানের চেয়েও কার্যকর হয়ে উঠেছে তুর্কি ড্রোন।
বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা বাইরাক্তার ড্রোনের দাম মাত্র পাঁচ মিলিয়ন ডলারের মতো, যা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনের দাম থেকে প্রায় ছয় গুণ কম। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা সেই তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন এবং আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সংঘাতে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এই ড্রোন এখন বিশ্বের বহু দেশের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
এমনকি ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশের হাতেও রয়েছে এই ড্রোন। তুরস্কের এই আধিপত্যের মূল কারিগর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে ‘বায়রাক্তার’। বিশ্ব যখন যুদ্ধবিমানের যুগ পার করছে, তখন ড্রোনই হয়ে উঠছে আধুনিক যুদ্ধের মূল অস্ত্র।
সম্প্রতি শেষ হওয়া ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ড্রোন যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেক বিশ্লেষক। ভারতের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের হেরোপ ড্রোন ছোড়া হলেও, পাকিস্তানের দাবি—তারা অর্ধশতাধিক ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এর জবাবে পাকিস্তান পাঠিয়েছে তুরস্কের তৈরি ৩০০ থেকে ৪০০ সোনগার ড্রোন, যা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিন্নভিন্ন করে দেয়। গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেয় এসব ড্রোন।
এই শক্তিশালী হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়ে ভারত। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধবিমান নয়—যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে মনুষ্যবিহীন এসব ড্রোন। দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় এই যন্ত্রগুলো বহন করতে পারে কয়েকশো কেজি বিস্ফোরক, ফাঁকি দিতে পারে আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাও। নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আঘাতের পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির তথ্যও পাঠাতে সক্ষম এই ড্রোনগুলোকে শনাক্ত করাও প্রায় অসম্ভব।
এক সময় ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’ হিসেবে পরিচিত তুরস্ক এখন বিশ্ব ড্রোন বাজারের শীর্ষ খেলোয়াড়। পশ্চিমা দেশগুলো অস্ত্র বিক্রিতে গড়িমসি করায় নিজেদের প্রযুক্তিতেই উন্নত অস্ত্র তৈরি শুরু করে দেশটি। এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক এখন বিশ্বের অন্যতম প্রধান সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে বৈশ্বিক ড্রোন বাজারের প্রায় ৬৫ শতাংশ দখলে রেখেছে তুরস্ক।