Image description

অ্যাকাডেমিক পরীক্ষা দিতে এসে আটক হয়েছেন নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবিপ্রবি) শাখার এক নেতা। সোমবার (৫ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে এলে তাকে আটক করা হয়। পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে একটি অটোতে উঠিয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিয়ে আটক করে পুলিশে দেন। 

ক্লাস না করলেও তাকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আটক ছাত্রলীগ নেতার নাম মাসুদ রানা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের একমাত্র ছাত্র হল শাখার সহ-সভাপতি ও সমাজকর্ম বিভাগের আহবায়ক।

জানা গেছে, মাসুদের পরীক্ষা দিতে আসার খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হল রুমের সামনে যান। তাকে দেখে ডিউটিতে থাকা শিক্ষক ড. মাহবুবুর রহমানকে বের করে দিতে বললে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ্ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তখন তারা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললে তিনি নিয়ম মেনেই পরিক্ষা চলছে বলে জানান।

পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা আবার পরীক্ষার হলরুমে সামনে যান এবং ছাত্রলীগ নেতাকে বের করে দিতে বলেন। কিছু সময় পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান ও সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান যান। সেখানে গিয়ে তারা ‘আজকের মত পরীক্ষা দিক, পরবর্তীতে আর দিতে পারবে না’- এভাবে বোঝালেও শিক্ষার্থীরা রাজী হননি। কিছুক্ষণ পর ছাত্র কল্যাণ ও পরামর্শ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম আসেন। 

এভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর শিক্ষার্থীরা তাদের কোনও কথা না শুনে তাকে পরীক্ষার হল থকে বের করে নিয়ে আসতে চান। তাখন ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এবং প্রক্টরের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকে বেরিয়ে আসতে দেন বিভাগের শিক্ষকেরা। তারা ছাত্রলীগ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসলে শিক্ষার্থীরাও আসেন।

তাকে নিয়ে অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবাসে উঠিয়ে দিতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সমনে এনে একটি অটোবাইকে উঠিয়ে দেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিয়ে অটোবাইকটি থামিয়ে তাকে আটক করেন। সন্ধ্যার দিকে মেলান্দহ থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ও জাবিপ্রবি শাখার আহবায়ক স্বাধীন এবং যুগ্ম আহবায়ক পলাশের হয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করত। তার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়াসহ আন্দলোনের বিপক্ষে গিয়ে স্বৈরাচারী সরকার ঠেকাতে নানান কর্মসূচি নিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, তাকে ক্যাম্পাসে আসতেই দেখেননি। সে কীভাবে পরীক্ষা দেয়? ৬০ শতাংশের নিচে উপস্থিতি থাকলে পরীক্ষা দেওয়ার নিয়ম নেই। অবশ্যই তার বিভাগের শিক্ষকদের এতে হাত আছে।

এ বিষয়ে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ্ চৌধুরী বলেন, ‘তার বিষয়ে আমাদের প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং হয়। বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছে, তার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরীক্ষা নিতে অনুমতি দিয়েছিল। পরবর্তীতে তারা দোষী সাব্যস্ত হলে এ সব পরীক্ষা বাতিল হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাকে পরীক্ষা না দিতে দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি অটোয় উঠিয়ে দিই। পরবর্তীতে অটো বাইকটি থেকে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে পুলিশের সোপর্দ করে। এর কিছু সময় পর পরীক্ষা শেষে তার ক্লাসমেটরা তার বিষয়ে সুপারিশ করতে আসে। তাকে পুলিশ থেকে ছাড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেন। 

মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানা থানাতেই আছে। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। তাকে আদালতে চালান দেওয়া হবে।