
দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামীকাল মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। সব ঠিক থাকলে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে শাশুড়ি ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছাবেন তিনি। দেশে ফিরে জোবাইদা রাজধানীর ধানমন্ডিতে তার বাবার বাসা ‘মাহবুব ভবনে’ উঠবেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে বাসার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন থেকে শুরু করে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে এ বাসায় পুলিশ পাহারা, আর্চওয়ে বসানোর জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার। তবে নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন মাহবুব ভবনের পুরো কাজ-কর্ম তদারকি করছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাহবুব ভবন এমনিতেই পরিপাটি একটি বাসা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তারপরও আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের স্ত্রী জুবাইদা রহমানের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাসার ভেতরে এবং বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক করেছি। বাসার চারপাশে দেয়ালের উপরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।’
এই বাসার চারপাশে দেয়াল রয়েছে। বাসার আঙিনায় সামনের দিকে রয়েছে ফুলের বাগান। আছে নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য গার্ড রুম।
রুমন বলেন, ‘বাসভবনের তিন দিকে বিভিন্ন জনের বাসা-অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন নিরাপত্তার নামে এমন কিছু করতে যেয়েও না যাতে প্রতিবেশীদের কোনো অসুবিধা হয়, যাতে মানুষজনকে ডিস্টার্ভ না করা হয়। যেমন পেছনের দিকে দেয়ালের পাশে ওই ভবনের বারান্দাটা দেখা যাচ্ছে একেবারেই দেয়াল ঘেষে। উনারা (প্রতিবেশীরা) ১৭ বছর কিছু করেননি, এখনো তারা কিছু করবেন না… তাদের ডিস্টার্ভ করে আমাদের যেন আরাম করা না হয়। চেয়ারম্যান সাহেব যেমনটি চান এই বাসার পরিবারের সদস্যরা ঠিক সেটাই আমাদের বলেছেন। সব দিক বিবেচনায় রেখে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি।’
জুবাইদা রহমানের জন্য আলাদা গাড়ি ও তার নিরাপত্তার সঙ্গে নিয়োজিত সদস্যদেরও গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ৩০ মে পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে দেওয়া চিঠির বিষয়ে রুমন জানান, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তায় থাকা নিয়োজিত কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে এই বাসভবন দেখে করণীয় ঠিক করে গেছেন।
জোবাইদা রহমানের বাবা নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান। ধানমন্ডির ৫নং সড়কে মাহবুব আলী খানের বাসাটিই ‘মাহবুব ভবন’ নামে পরিচিত। এখানে এখন তার সহধর্মিণী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু এবং বড় মেয়ে শাহীনা জামান ও তার পরিবার বসবাস করেন। সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু গত কয়েকদিন আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
১-১১ সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনার সরকারের রোষাণলে পড়েছিলেন স্বামীর সঙ্গে জোবাইদাও। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তার সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান ও জোবাইদা রহমানের মা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই মামলায় জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের ওই সাজা স্থগিত হয়ে যায়।