Image description
 

পাঠ্যবই ছাপার কাজে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। গত সোমবার (২১ এপ্রিল) জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে পাঠানো হয়।এনসিপির এই নেতার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক নিয়োগে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর পাঠ্যবই ছাপার কাগজে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের নিকট ৭ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে যথাযথ ব্যাখ্যা প্ৰদান করতে এবং তাকে কেন দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না জানতে চাওয়া হয়।

 

এসব অভিযোগ আর দল থেকে সাময়িক অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে গাজী সালাউদ্দিন তানভীর জাগো নিউজকে বলেন, ৫ আগস্টের আগে সচিবালয়ে আমার একবার যাওয়া হয়েছে। আমি একটি কোম্পানির চাকরি করতাম, কোম্পানির কাজে একবার যাওয়া হয়েছিল। আর পরে চারবার। সব মিলিয়ে আমি জীবনে পাঁচবার সচিবালয়ে গিয়েছি।তিনি বলেন, এনসিপিতে পদ ফিরে না পাওয়া মানে হলো অভিযুক্ত হওয়া। এই মুহূর্ত পর্যন্ত আমি আমার জায়গা থেকে স্পষ্ট বলছি, আমি অভিযুক্ত না। নিজেকে এজন্যই আইনের হাতে সোপর্দ করবো যাতে এর পরিপূর্ণ তদন্ত হয়। পদ ফিরে না পেলে স্বেচ্ছায় জেলে যাবো এবং সরকারের কাছে পরিপূর্ণ তদন্ত চাইবো।

 
 

'তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্যারের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করি। স্যারকে পাঠ্যবই ছাপানোর বাস্তব অবস্থা জানাই। আমার সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিল। স্যারই আমাদের বলেন, আমরা কোনো হেল্প করতে পারি কি না! কেননা তখনও ছাপাখানার সিন্ডিকেটে আওয়ামী দোসররা ছিল। তবে আমি যখন এনসিটিবিতে যাই আমার সঙ্গে প্রথম সারিতে দেখা যায় এরকম কোনো সমন্বয়ক ছিল না। তবে সেখানে আমাদের শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে কোনো কাজ করা হয় নাই। বই ছাপানোর কাজে অগ্রগতির জন্য গিয়েছিলাম। আমরা বই ছাপানো বা এর অগ্রগতি সরকারকে জানাতাম। এর বেশি কিছু না।

সচিবালয়ে ডিসি নিয়োগে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষেরও সচিবালয়ে এন্ট্রি থাকা উচিত। উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সচিবালয়ের সব কর্মকর্তার নম্বর ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকে। সেখানে যাওয়া যদি অপরাধ হতো তাহলে নম্বরগুলো ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকত না। আমি সোখানে চারবার গিয়েছি এবং দায়িত্বের জায়গা থেকেই গিয়েছি। তার মানে এই না যে আমাকে কেউ পাঠিয়েছে।

 

'ডিসি নিয়োগের সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী দোসর একজন সচিব, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। আমরা জানি ডিসি নিয়োগ একটি স্বচ্ছ এবং কঠিন একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। আমাদের কাছে মনে হয়েছে উনি (মেজবাহ উদ্দিন) আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করতে পারেন। উনার সঙ্গে একদিন ফোনে কথা হয় এবং উনার এপিএস'র মাধ্যমে আমাকে সচিবালায় প্রবেশের পাস দেওয়া হয়। উনাকে বলে আসি আওয়ামী লীগের কোনো দোসর ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেতে পারবে না এবং আন্দোলনের সময় কর্মকর্তাদের ফেসবুক অ্যাক্টিভিটি দেখতে হবে। দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো শক্তভাবে দেখতে হবে। কারণ ৫ আগস্টের আগে যা করছে পরে তা করতে পারবে না। 

একজন নাগরিক হিসেবে আমার এটা করার অধিকার আছে বলে আমি করেছি। কয়েকদিন পরে উনাকে পরিবর্তন করে ড. মোখলেসুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। তো মনে করলাম যে, নতুন এসেছেন। উনাকে কথাগুলো বলে আসা দরকার। অনেকগুলো লিস্ট আগের সচিব করে গেছিলেন, তো সেই লিস্টের ওপর যদি মোখলেসুর রহমান সাহেব কাজ করেন তাহলে তো ভুল হয়ে যেতে পারে।তিনি বলেন, একজন যুগ্ম সচিব ছিলেন আলী আজম সাহেব। উনার সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। ওখানকার কোনো একটা ছবি একজন বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি নিয়মিত সচিবালয়ে যাইনি। আমার বিরুদ্ধে যে এত অভিযোগ তার প্রমাণ কই? কেউ প্রমাণ করুক। একটা নাস্তা করার ছবি দিয়ে তো প্রমাণ করা যায় না।

ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচল করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি একটি গাড়িতে চলাচল করি, পাজেরো। পরিচিত একজনের গাড়ি এটি। আমি মাঝেমধ্যে প্রয়োজনে ব্যবহার করি।তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জুলাইয়ে যে লড়াইটা হয়েছিল সেই নেতৃত্বের উপরেই এনসিপি প্রতিষ্ঠিত। ৫ আগস্টের আগের কালচারে চলবে তা নয়। যেমন আগে জঙ্গি নাটক সাজানো হতো, অযথা মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হতো। এখন মানুষকে অযথা হয়রানি করা হবে, মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হবে, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড না জেনেই তার সম্পর্কে মন্তব্য করবে, তার লেবাস নিয়ে সমালোচনা করবে, এনসিপি সেগুলো কখনোই মেনে নেবে না। আমি আশা করি আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে আসবে।