
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ সুবিধা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। তাদের আশঙ্কা, জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশের শর্তসাপেক্ষে করিডোর সুবিধা দেওয়া হলেও এতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বিএনপি বলছে, এই সিদ্ধান্তের আগে সরকারের উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব উদ্বেগ এবং এ বিষয়ে দলটির অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতারা, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরও কয়েকজন ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে করিডোর সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি শুধু একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, এর সঙ্গে দেশের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। এক সদস্য বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আমরা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বোঝা বহন করছি। এখন করিডোর দিলে আরও বড় জটিলতায় পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি। দলের ভাষ্য, সরকার যেহেতু নির্বাচনকালীন, তাদের উচিত ছিল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। তাদের মতে, রাষ্ট্রের ভূখণ্ড তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
বিএনপির দাবি, করিডোরের যে ৬০টি শর্ত রয়েছে, সেগুলো জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। তারা এটিও বলেছে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য আসা দরকার। বিএনপির নেতাদের মতে, রাখাইন নিয়ে আন্তর্জাতিক নানা কৌশল ও পরিকল্পনা বহু পুরোনো। ফলে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অনেক হিসাবনিকাশ করে নিতে হয়।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, এই অঞ্চলে সামরিক ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাখাইন স্পর্শকাতর। সেখানে করিডর সুবিধা দিলে এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঘিরে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এক সদস্যের বক্তব্য ছিল, আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে চাই, আবার রাখাইন রাজ্যে করিডোরও দিচ্ছি— এটি পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিএনপি খুব শিগগির এ বিষয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করবে।
এদিকে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, মানুষকে সাহায্য করার উদ্যোগে আমাদের আপত্তি নেই। জাতিসংঘের মানবিক প্রচেষ্টাও আমরা সমর্থন করি। কিন্তু দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থরক্ষা না করে কোনো সিদ্ধান্ত চলবে না।
তিনি বলেন, আমরা আরেকটি গাজা বা যুদ্ধক্ষেত্র হতে চাই না। রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যেই নতুন করে এই করিডোর ইস্যু ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
এদিকে একই ইস্যুতে ১২ দলীয় জোটও উদ্বেগ জানিয়েছে। মঙ্গলবার জোটের এক জরুরি সভায় বলা হয়, এ ধরনের কৌশলগত সিদ্ধান্তের আগে সর্বদলীয় আলোচনার প্রয়োজন ছিল।