Image description

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছেন। বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে ভার্চুয়ালি বৈঠক করে নেতাকর্মীদের একের পর এক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এবার টেলিগ্রাম অ্যাপে ‘ধানমন্ডি-৩২’ গ্রুপে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ ও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান রজত ভরদ্বাজ মুখার্জি। গত ২০ এপ্রিল রাতে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরবে বীরদর্পে।’ তবে দিনক্ষণ না জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ফিরবে, কবে ফিরবে বা কোন পোশাকে ফিরবে এমনকি কোন রঙের শাড়ি পরে ফিরবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে একান্ত আলাপচারিতা হয়েছে শেখ হাসিনার। তারা কী আলোচনা করেছেন, তা বলেননি।’ তবে ভেতরের খবর হলো, ‘শিগগিরই কিছু একটা হতে যাচ্ছে।’

রজত ভরদ্বাজ মুখার্জি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ঘরের ভেতরে দরজা আটকিয়ে স্বামী-স্ত্রী কথা হলে সে কথা বাইরে জানার কথা না।’ এর সূত্র ধরে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ঘরে কী কথা হয়েছে তা আমরাও জানি না।’ তবে ভেতরের কথা পুরোটা না জানলেও একজন দায়িত্বশীল থেকে তিনি জানতে পেরেছেন সামনে বাংলাদেশের জন্য, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য ভালো কিছু আসছে।

বাংলাদেশের সাথে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সাথে পররাষ্ট্র যে চুক্তি তাতে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেয়া হবে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিক চিঠি পাঠানো হলেও সেই চিঠির কোনো জবাব এখনো ভারত দেয়নি। এমনকি চিঠি পড়েও দেখেনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’

তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার চিঠির জবাবের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে ভারত থেকে একটি বক্তব্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাগজে-কলমে কোনো জবাব কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। সুতরাং শেখ হাসিনা ফিরবে ভারতের পরিকল্পনা অনুযায়ী। আলোচনায় রজত ভরদ্বাজ আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যেসব নেতা বিদেশে আছেন সবাই ফিরে যান। বিদেশে বসে থেকে আন্দোলন সফল করতে পারবেন না।’

এ দিকে আওয়ামী লীগকে রাজপথে নামাতে এক ভয়ঙ্কর ছক তৈরি করেছেন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়পুরহাটের মনছুর রহমান সুমন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, আগামী মে ও জুন মাসকে টার্গেট করে রাজপথ দখলে নিতে হবে।

এ জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রাথমিকভাবে দেশব্যাপী ঝটিকা মিছিল বের করতে হবে। ধানমন্ডি-৩২ নম্বর বাড়ি ও গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুনঃউদ্ধারে অন্তত ১৫ লাখ লোকের সমাগম নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে।

এ দিকে গতকাল একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, গত শনিবার রাতে প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী ‘ধানমন্ডি-৩২’ টেলিগ্রাম গ্রুপে গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও থানার নেতাকর্মীদের সাথে জুম মিটিং করেন। তিনি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপাতত ফান্ডের সমস্যা। বিদেশ থেকে কেউ টাকা পাঠাতে পারছে না। তাই প্রতি জেলায় ঝটিকা মিছিল দিয়ে শুরু করতে হবে। এই মিছিলে থাকবে স্থানীয় ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মীরা। এ ছাড়াও রিকশা, অটোচালক ও বাসের হেলপারের ছদ্মবেশে ঝটিকা মিছিলে অংশ নিতে হবে। প্রয়োজনে আত্মরক্ষার্থে ইলেকট্রিক শক ডিভাইস ও ক্ষুদ্র জিনিসপত্র সাথে রাখতে হবে।’

নির্দেশনায় আরো বলা হয়, নিম্নপর্যায়ের নেতাকর্মীরা যারা বিদেশে আছে তাদের দেশে পাঠানো হবে। যদি এক হাজার নেতাকর্মী আসে প্রয়োজনে ২০০ গ্রেফতার হলেও রিজার্ভে থাকবে ৮০০ জন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ৬৩ জেলায় অন্তত ১৫ লাখ লোকের জমায়েতের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। মে ও জুন মাসের মধ্যেই তারা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। যেখানে ব্যাপক রক্তক্ষয় হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এর মধ্যে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ঝটিকা মিছিল বের করার ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশত ঝটিকা মিছিল হয়েছে। সারা দেশে জেলা, থানা ও ওয়ার্ডপর্যায়ে নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করছে। এসব মিছিলের ফটোসেশন করা হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় ছদ্মনামের আইডিতে সেগুলো পোস্ট করছেন। মিছিলের ভিডিওফুটেজ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের বাইরে পলাতক আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে। তবে মিছিলের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও বেড়ে গেছে।

গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর আলম এ বিষয়ে ফোনে নয়া দিগন্তকে বলেন, মে মাসেই তারা বড় পরিসরে রাজপথ দখলের পরিকল্পনা করেছেন। ঈদের আগেই তারা পুরোদমে আন্দোলনে নামতে চান।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতি করতে হলে মামলা থাকবেই। নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে জেল খাটবে। তবুও তারা আন্দোলন সফল করবেন।

অন্য দিকে গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসের একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়। সেখানে নেতাকর্মীদের এখনই রাজপথে না নামতে পরামর্শ দিয়ে এই নেতা বলেন, আপাতত সংগঠিত হয়ে এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দেশনা মেনে মাঠে নামতে হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছেন দলটির পলাতক নেতাকর্মীরা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও তাদের সমভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠনের ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, ‘মিছিলকারীদের তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে ছবি ও ভিডিওফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন ও বেআইনি এসব সংগঠনের অপতৎপরতা রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’ এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো: তালেবুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ সংগঠন, তাই তারা মিছিল করলেই গ্রেফতার করা হবে।’

আওয়ামী লীগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অ্যাক্ট অনুযায়ী কেউ সমাবেশ করতে চাইলে পূর্বানুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিলে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে। সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা দিলে বা যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মিছিল করলে ডিএমপি অ্যাক্টে তাদের গ্রেফতার করা হবে। এরই মধ্যে প্রতিদিনই ঝটিকা মিছিলে অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে ডিএমপি।