Image description

‘খোকা ফিরবে, নাকি ফিরবে না’ এই ধোঁয়াশায় ১৩ বছর পার হয়ে গেল গুম হওয়া শিবির নেতা ওয়ালিউল্লাহর মা-বাবার। এখনো সন্তানের ফিরে আসার অপেক্ষায় মমতাময়ী মা আফিফা রহমান।

তবে বাবা ফজলুর রহমান বুঝে গেছেন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া তার ছেলে আর হয়তো জীবিত নেই। আর কোনোদিন ফিরে আসবে না সে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ওয়ালিউল্লাহর বাড়ি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার পশ্চিম শৌলজালিয়া গ্রামে। সে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র এবং ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন। ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় ওয়ালিউল্লাহকে। তার সঙ্গে থাকা আরেক শিবির নেতা একই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল-মুকাদ্দাসকেও তুলে নেওয়া হয়। মুকাদ্দাসের বাড়ি পিরোজপুর জেলার খানা কুনিয়ারী গ্রামে।

সেই থেকে ওই দুই শিবির নেতার সন্ধান পাওয়া যায়নি। বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন তাও জানে না পরিবার। ছেলেকে হারিয়ে ওয়ালিউল্লাহর বৃদ্ধ বাবা-মা পাগলপ্রায়।

ওয়ালিউল্লাহর বাবা মাওলানা ফজলুর রহমান ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার বলতলা কৈখালী সিনিয়র মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ। তার দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে পঞ্চম সন্তান মো. ওয়ালিউল্লাহ। ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী ওয়ালিউল্লাহ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় ভর্তি হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে।

সর্বশেষ অনার্স সম্পন্ন করে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

ওয়ালিউল্লাহর বাবা মাওলানা ফজলুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে গাড়িতে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে সাভারের নবীনগর এলাকায় হানিফ পরিবহনের গাড়ি থেকে র‌্যাব ও ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় ওয়ালিউল্লাহ ও তার সঙ্গে থাকা শিবির নেতা আল-মুকাদ্দাসকে।

এ ঘটনার পর ৮ ফেব্রুয়ারি আল-মুকাদ্দাসের চাচা দারুস সালাম থানায় এবং ওয়ালিউল্লাহর ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় পৃথক জিডি করেন। পরে তাদের সন্ধান চেয়ে বিভিন্ন সময় পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করা হয়। কিন্তু ওয়ালিউল্লাহসহ দুই শিবির নেতার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ওয়ালিউল্লাহর শোকাহত বাবা জানান, প্রতিবারই ঈদ আসে; কিন্তু তাদের পরিবারে আর ঈদের খুশি আসে না। সরকারের কাছে ওয়ালিউল্লাহর শোকাহত বাবার দাবি জীবিত থাকলে তার সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক আর মারা গেলে লাশের সন্ধান চান তিনি। পাশাপাশি এই গুমের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার চান ওয়ালিউল্লাহর পরিবার।

এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান আমার দেশকে বলেন, সাংগঠনিকভাবে মেধাবী হওয়ায় ক্যাম্পাসকে নেতৃত্বশূন্য করে তা দখলে নেওয়ার জন্য গুম করা হয় মো. ওয়ালিউল্লাহকে। এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।