
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় বর্তমানে কারাগারে আওয়ামী লীগের আমলের বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তা। কয়েক মাস আগেও যাদের আঙুলের ইশারায় যাতে-তাকে ধরে জেলে পুরে দেওয়া হতো, আজ তাদেরই দিন কাটছে চার দেয়ালের মাঝে। ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী নয়, তারা বোধহয় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
গত বছরের এই দিনে কারাবন্দি ওইসব ভিআইপিদের বাড়িভর্তি মানুষ ছিল। কেউ আসতেন ঈদ সেলামি দিতে, কেউ বা নিতে। কেউ আবার আসতেন ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে।
এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে বন্দিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের পরদিন বাসা থেকে রান্না করা খাবারও দিতে পারবে। এছাড়া পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রত্যেক কয়েদি পাঁচ মিনিট করে কথা বলতে পারবেন। ভিভিশন পাওয়া বা সাধারণ কয়েদি সবার জন্য একই ব্যবস্থা রয়েছে।’
তিনি জানান, ‘বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা স্বজনদের জন্য রিসিভশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বাচ্চাদের জন্য ড্রিংস, চকলেট ও চিপসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে বন্দিদের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে তিন দিনে একবার সাক্ষাৎ ও পাঁচ মিনিট করে মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে ডিভিশন প্রাপ্তদের কথা বলার ক্ষেত্রে কারা অধিদপ্তর অনেক সতর্ক আছে। তারা যে নম্বরটিতে কথা বলতে চাচ্ছে, সেটি যাচাইয়ের মাধ্যমে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে।’
ভিআইপি বন্দিদের খাবারের বিষয়ে মো. জান্নাত-উল ফরহাদ জানান, ‘ঈদের দিন সকালে ভিআইপি বন্দিদের পায়েশ ও মুড়ি দেওয়া হয়েছে। দুপুরে পোলাও এবং গরুর মাংস খাওয়ানো হয়েছে। যারা গরু খান না, তাদের জন্য খাসির মাংসের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি আছে সালাদ, মিষ্টি, পান-সুপারি ও কোমল পানীয়র ব্যবস্থাও।
তিনি আরও জানান, ঈদের দিন কারাগারে সাধারণ বন্দি, ডিভিশনপ্রাপ্ত ও ফাঁসির আসামিদের জন্য আলাদা জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও
ঈদ উৎসবে কারাবন্দিদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় কারারক্ষী ব্যারাকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যার পর কারাগারের স্টাফদের সন্তানদের অংশগ্রহণে কবিতা আবৃত্তি ও গানের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
কোন কারাগারে কাটছে কোন ভিআইপির ঈদ
কারা অধিদপ্তর ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মাধ্যমে জানা গেছে, কাশিমপুর কারাগারে আছেন ৬১ জন ডিভিশনপ্রাপ্ত কয়েদি। তাদের মধ্যে আছেন- সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ মালেক, আব্দুর রহমান বদি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আহমদ হোসেন, সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, সাংবাদিক মোজ্জাম্মেল হক বাবু, শ্যামল দত্ত, শাকিল আহমেদ ও দেশ টিভির এমডি আরিফ হোসেনসহ অনেকে।
কাশিমপুর কারাগারে নারীদের ভবনে আছেন- সাবেক শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক এমপি ও হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি, সাবেক এমপি মাসুদা সিদ্দীক রোজী ও সাংবাদিক ফারজানা রুপা।
ঢাকার কেরাণীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন— সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক এমপি সাদেক খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শহীদুল হক, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ অনেকে।
কারা অধিদপ্তরের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশের কারাগারগুলোতে ৪২ হাজার ৪৫০ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে বর্তমানে বন্দি আছেন মোট ৬০ হাজার ৯১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি ৫৮ হাজার ৮৯০ ও নারী রয়েছেন ২ হাজার ২৪ জন। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫৭ জন, কাশিমপুরে চারটি কারাগারে ৬২ জনসহ ঢাকা বিভাগের অন্যান্য কারাগার মিলিয়ে মোট ১২৫ জন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছেন।