
চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে প্রার্থী বাছাইসহ অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এককভাবে, নাকি জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে— এসব বিষয় এখনো ঠিক না হলেও নিজেদের মতো করে এরই মধ্যে প্রায় সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলনসহ অন্য ধর্মীয় দলগুলোও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনি এলাকায় তৎপরতাও চালানো শুরু করেছেন। বিশেষ করে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রায় সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে বেশ আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
পবিত্র রমজানের শুরু থেকেই ইফতার মাহফিল, ইফতারসামগ্রী বিতরণ, নানা উপহার ও সহায়তা দিয়ে আসছেন ইসলামি দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন ঈদুল ফিতর ঘিরে এই তৎপরতা আরো জোরদার হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর এবার সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নে ও উন্মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপনের সুযোগ পাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তাই আসন্ন নির্বাচনের আগে এবার দেশের সব এলাকায় ঈদের ভিন্ন আবহ সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের নামাজ ও পরে এলাকাবাসীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রার্থীরা।
নির্বাচনি এলাকায় তৎপর জামায়াত প্রার্থীরা
আসন্ন নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দীর্ঘদিন কোনঠাসা থাকার পর মুক্ত পরিবেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ পেয়ে সারা দেশে তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে দলটি। এরই মধ্যে প্রায় সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। বেশ আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় নানাভাবে জনসংযোগ বাড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। সমাজসেবামূলক নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন তারা। রমজান ও ঈদুল ফিতর ঘিরে এই তৎপরতা আরো জোরদার হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, রোজার শুরু থেকেই নানা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন জামায়াত প্রার্থী ও দলীয় নেতারা। ঈদের আগে বিতরণ করা হচ্ছে ঈদ উপহার। এ সময় জাকাত বিতরণসহ নানাভাবে সহায়তা করা হচ্ছে তৃণমূল মানুষকে। অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েও সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দেওয়া হচ্ছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে ঈদকার্ড বিতরণ করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, ঢাকার দুটি বাদে সবকটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা-৪ ও ৯ আসনে শিগগিরই প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দলটি। নির্বাচনি তৎপরতা প্রসঙ্গে ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মান্নান বলেন, জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগে থেকেই যার যার সুবিধা অনুযায়ী নির্বাচনি এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। ঈদের সময়টাকেও তারা কাজে লাগাবেন— এটাই স্বাভাবিক। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে আলাদা কোনো নির্দেশনা নেই। প্রার্থীরা নিজেদের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী এলাকায় যাচ্ছেন।
ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে
আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত করেনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আসনপ্রতি তিনজন করে প্রার্থী বাছাই করা রয়েছে দলটির। ঈদের পর একজন করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তবে এর আগে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন এবং আগামীতেও যাদের প্রার্থিতা মোটামুটি নিশ্চিত— এরকম শতাধিক নেতা এরই মধ্যে নির্বাচনি এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব ও কুমিল্লা-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, নির্বাচনি এলাকায় সাংগঠনিক নানা কার্যক্রম এবং অসহায় মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জোটগতভাবে নির্বাচনে সম্ভাবনা থাকায় সব আসনে এখনই প্রার্থী ঘোষণা করবে না দলটি।
নিজের নির্বাচনি তৎপরতা প্রসঙ্গে আহমদ আব্দুল কাইয়ুম জানান, পবিত্র রমজানে এরই মধ্যে একাধিক ইফতার মাহফিল করা হয়েছে। অসহায়দের মাঝে ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হবে। ঈদ মৌসুমে তিনি ৮ থেকে ১০ দিন এলাকার অবস্থান করে সব ইউনিয়নে গণসংযোগ করবেন। একইভাবে অন্যান্য নেতাও ঈদ মৌসুমে নিজ নিজ এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
আগামী নির্বাচনের জন্য জেলা কমিটি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা এসেছে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। ঈদের পর প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ করবে দলটি। তবে এরই মধ্যে অন্তত অর্ধশত আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে নির্বাচনি এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব ও শরীয়তপুর-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিনি নিজেও এলাকায় একাধিক ইফতার মাহফিল করেছেন। ঈদের আগে গরিবদের মাঝে ঈদসামগ্রী, লুঙ্গি-শাড়ি এবং নগদ অর্থ বিতরণ করবেন তিনি। এলাকার বিভিন্ন বাজার ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ করছেন। ঈদের সময় এই গণসংযোগ আরো বাড়বে। এছাড়া ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে এলাকায় তোরণ, ফেস্টুন ও পোস্টারিং করা হয়েছে। দলের সব শীর্ষনেতা একইভাবে নির্বাচনি গণসংযোগ চালাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
খেলাফত মজলিস
দুই শতাধিক আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে খেলাফত মজলিস। সম্ভাব্য প্রার্থীরা আসনভিত্তিক ইউনিয়ন পর্যায়ে ইফতার মাহফিল করছেন। ঈদের আগে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার-পোস্টার টাঙানো হচ্ছে। ঈদের পর পুনর্মিলনী করা হবে। বেশ আগে থেকেই সমাজসেবামূলক নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচনি এলাকায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন জোটগতভাবে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে সম্ভাবনা ধরে নিয়েই তারা প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একইভাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোটসহ অন্যান্য ইসলামি দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।