Image description
আজ বুধবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতাবিরোধী বলা অনেকের বাবাও রাজাকার ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, 'যারা জামায়াতকে স্বাধীনতাবিরোধী বলেন তাদের অনেকের বাবাও রাজাকার ছিলেন। কোন দলের কোন নেতা স্বাধীনতাবিরোধী, জনগণ জানে। যারা আজ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলে, তারাও স্বাধীনতাবিরোধীদের এমপি-মন্ত্রী; এমনকি রাষ্ট্রপতিও বানিয়েছে।'

আজ বুধবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, 'জামায়াতে ইসলামীর অপ্রতিরোধ্য ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা, জনপ্রিয়তা, গণজাগরণ প্রতিরোধ করতে সব সময় একটা শক্তি, একটা মহল, স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধকে জামায়াতে ইসলামীর বিপক্ষে দাঁড় করানোর একটা অপপ্রয়াস ও অপচেষ্টা করে থাকে। আওয়ামী লীগ এ কাজে সিদ্ধহস্ত। তারা তো বিদায় নিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়াও ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে আমরা যারা রাজপথে ছিলাম, দূর্ভাগ্যজনকভাবে সেইসব সংগ্রামী নেতাদের মধ্য থেকেও কিছু লোকের জামায়াত বিরোধিতার কথাগুলো, ভাষাগুলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভাষার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।'

গোলাম পরওয়ার বলেন, 'কিন্তু তারা ভুলে যান- জামায়াতে ইসলামী যখন স্বৈরাচারবিরোধী, ফ্যাসিবাদবিরোধী, ভোটাধিকারের আন্দোলনে তাদের সঙ্গে থাকে, তখন বলে আমাদের সঙ্গী। তদের সঙ্গে না থাকলে বলে এরা জঙ্গি। সঙ্গে থাকলে আমাদের সব গুনাহ মাফ। নাম আর বলতে চাই না, জনগণ তাদের চেনে।'

বিরোধিতা করার আগে জামায়াতে অবদানের কথা স্মরণ করতে হবেউল্লেখ করে বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, 'জামায়াতের সমর্থন ছাড়া সরকার গঠন করতে পারেননি। রাজপথে আন্দোলন করতে পারেননি। আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে জামায়াতের কত নেতা-কর্মী মার খেয়েছে, রক্ত দিয়েছে, তাদের কতজন মার খেয়েছে?'

তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধকে সবসময়ই ধারণ করে। আমাদের সংবিধানের ভূমিকাতে ঘোষণা দিয়ে আমরা বলেছি। বাংলাদেশের জনগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেছে। আমরা সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমাদের গঠনতন্ত্রের ভূমিকায় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য গর্ববোধ করেছি, তার ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রদান করেছি।'

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামের সদস্য হতে গেলে আমাদের গঠনতন্ত্রের ধারা ৯-এ পরিষ্কার করে বলা আছে, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য একজন সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তূত থাকবে।'

বিএনপি চব্বিশের অভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলতে রাজি না হলেও গোলাম পরওয়ার বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, এর চেতনার ফেরি করে বেড়াচ্ছেন; তাদেরকে বলব, আপনারা কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে, ক্ষমতার স্বার্থে দিল্লির কাছে দেশ বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সেদিন বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। যে কারণেই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বলেছে, এটাই আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা।'

জামায়াতের কার্ড নিয়ে খেললে 'শেখ হাসিনার মত' নির্মমভাবে বিদায় নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, মতের দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু দেশ ও জাতির সঙ্গে আমাদের এক হতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কয়েকটি প্রশ্ন এখনও নিষ্পত্তি হয়নি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, 'কয়েকটি প্রশ্নের নিষ্পত্তি হয়নি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা দেশের মানুষের ওপর হামলে পড়ল, গুলি চালাল। ২৬ মার্চ সকালে শেখ মুজিব কি গ্রেপ্তার হলো, নাকি আত্মসমর্পণ করল তা নিয়ে ইতিহাসের বিতর্ক এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা আপনি (শেখ মুজিব) দিয়ে দিয়েছেন। ৭ মার্চের পর কেন পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। জাতির কাছে সেই ইতিহাস এখনও অপ্রকাশিত।'

গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, 'আপনি যদি দেশের স্বাধীনতাই চাইবেন, তাহলে আবার মিটিংয়ে বসলেন কেন। জাতি বুঝতে পেরেছে, আলোচনা সমঝোতা করে আপনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। স্বাধীনতাই যদি চাইতেন, তাহলে পাকিস্তানি প্রেতাত্মা হায়েনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন না। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো নেতা তার প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে ধরা দেয়নি। লাখ লাখ মানুষকে গুলির মুখে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়নি।'

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী আদর্শিক কারণেই দেশ ও স্বাধীনতাকে ভালোবাসে।
একাত্তরের মীমাংসিত বিষয় সামনে এনে জামায়াতকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এসময় ভারতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছে, গুজব ছড়াচ্ছে। সংস্কার শেষে সরকার নির্বাচন দেবে, তখনই জামায়াত ভোটের জন্য প্রস্তুত। 

মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন  কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান, আব্দুল হালিম প্রমুখ।