Image description

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি অঙ্গন। গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের মন্ত্রী-এমপিসহ বিচার শুরু হয় নানা পর্যায়ের নেতাদের। এরই ধারাবাহিকতায় সামনে আসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি।

তবে গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। কোনো দাবিতেই পেছাবে না নির্বাচন।’ তার এই বক্তব্যের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

একই প্রশ্নে বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারাও তাদের মতামত জানান। তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ গত ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকে যে অপরাধ করেছে এবং সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে গণহত্যা চালিয়েছে তার জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সাথে এমন আইনে দলটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে যাতে তারা আর কোনোভাবেই এ দেশের রাজনীতি করতে না পারে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত গণহত্যাকারী। তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতিতে মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগের রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য আত্মঘাতী। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সরকারের এখতিয়ারে রয়েছে। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে চাইলে বিচারিক প্রক্রিয়ায় বা সংসদীয় প্রক্রিয়ায় করা উচিত।

তিনি বলেন, আমরা বিগত ১৬ বছর ধরে গুম, খুন, ক্রসফায়ারসহ অসংখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধের সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হওয়ার কারণে আমরা চাই  মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবেও আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের যেকোনো ধরনের পুনর্বাসন এবং পুনরুত্থান রুখে দিতে হবে।

নাছির উদ্দীন নাছির

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে জনরোষের শিকার। তারা রাজনীতিতে ফিরতে চাইলেও জনগণের প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যাবে। গণশত্রু  আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখছি না। আওয়ামী লীগের খুনিরা যদি রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে,  তাহলে জনগণ আত্মরক্ষার স্বার্থে তাদেরকে রুখে দিবে।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, আওয়ামী লীগে যে গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিচারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নেই। বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার জন্য সাত মাস সময় পেয়েছে, কিন্তু তেমন কোন অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিচারের মুখোমুখি করতে না পারা এই সরকারের দুর্বলতা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রাগীব নাঈম

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে এখন জুলাই আন্দোলনের আহত-নিহতদের রক্তের দাগ লেগেই আছে। তাই বিচার প্রক্রিয়া চলার সময় তাদের রাজনীতি বন্ধ রাখতে হবে। বিচার হওয়ার পর আলাদত নির্ধারণ করবে তারা রাজনীতি করতে পারবে কী পারবেন। যারা তাদের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করতে কাজ করতে তাদেরকেও আওয়ামী লীগের দোসর হিসাবে ধরে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রাগীব নাঈম বলেন, গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ শাপলা গণহত্যা, বিডিআর গণহত্যা ও সর্বশেষ জুলাই গণহত্যা ঘটিয়েছে। এই তিনটি ঘটনার জন্যই তাদের বিচারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা উচিত।

আবু বাকের মজুমদার

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (একাংশ) কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অর্থপাচার, হত্যা-গুম ও অবশেষ জুলাই গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা চাই আওয়ামী লীগের এ সব অপরাধের জন্য বিচার করা উচিত। 

তবে রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেছেন, দেশে কে রাজনীতি করবে আর কে করবে না, এটার জনগণই বিচার করবে।

ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ড. ইউনূস যা বলেছেন তা দেশবাসীকে হতাশ করেছে। মাত্র ৭ মাস আগে যে রাজনৈতিক দল এদেশের জনগণের উপর সংগঠিতভাবে গণহত্যা চালিয়েছে তাদের আগে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এমনকি গণহত্যায় যাতে সংগঠনের বিচার করা যায় সেই বিধান যুক্ত করতে হবে এবং বিচার সম্পূর্ণ করতে হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সামি আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় যেসব অপরাধ করেছে, সেগুলোসহ জুলাই গণহত্যার জন্য তাদের বিচারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগ অপরাধের সাথে যেসব দল ও বাহিনী সহযোগিতা করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিত।

মুক্তা বাড়ৈ

ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল কে এম ইমরান হুসাইন বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৬ বছর যে অপরাধ করেছে এবং গত জুলাই আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার ওপরে হামলা করেছে, তার জন্য তাদেরকে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কিনা এটা নির্ধারণ করবে জনগণ।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আমাদের আন্দোলন আগে থেকেই চলছে। জাতিসংঘের রির্পোট দ্বারা প্রমাণিত আওয়ামী লীগ দেশের জুলাই গণহত্যা চালিয়েছে, এ জন্য আর দেরি না করে তাদের দ্রুত নিষিদ্ধ করা উচিত। একই সাথে এমন আইনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে যাতে তারা আর কোনোভাবেই এ দেশের রাজনীতি করতে না পারে। 

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগসহ তাদের যারা দোসর আছে, তাদেরকেও রাজনীতিতে দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে। যাতে করে আগামী নির্বাচনে কোনোভাবেই অংশগ্রহণ করতে না পারে। এছাড়া যারা আওয়ামী লীগকে রাজনীতি ফেরাতে চায়, তাদেরও প্রতিহত করা হবে বলেও তিনি জানান। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, গত জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ যে গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক সকল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা উচিত। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ গত ১৭ বছর যে অপরাধ করেছে তার জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এছাড়া যারা আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে তাদেরও বিচার করা উচিত। 

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, আওয়ামী নিষিদ্ধের দাবিতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের ৩৬ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি। আওয়ামী লীগকে যদিও কিন্তু ছাড়া নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়া যারা আওয়ামী লীগের সহযোগী তাদের বিচার করতে হবে। যদি আওয়ামী লীগকে ফেরানো চেষ্টা করা হয় তাহলে আরেকটা বিল্পব হবে।

নুরুল ইসলাম সাদ্দাম

ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক তাসনিম মাহফুজ বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।পাশাপাশি আওয়ামী লীগ যাতে কোনোভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।  যারা আওয়ামী লীগের অপরাধ করেছে এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান আদর্শ নিয়ে ভবিষ্যতে যদি ভবিষ্যতে যাতে রাজনীতিতে না ফিরতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।