Image description

রাজশাহীর বাগমারার শ্রীপুর ইউনিয়নের কুখ্যাত রাজাকার ইসমাইল হোসেন গাইন। মুক্তিযুদ্ধে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতনসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন তিনি। গাইনের ছেলে জিল্লুর রহমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্য (এমপি) এনামুল হকের মদদে জিল্লুর এলাকায় হয়ে উঠেছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। প্রতিপক্ষকে নির্যাতন এবং এলাকায় নিজের ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে রাজাকার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বানিয়েছিলেন ‘আয়নাঘর’। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয় ছিল জিল্লুরের ‘আয়নাঘর’। আপন ভাই এবং নিকটাত্মীয়দের নিয়ে গঠন করেছিলেন হেলমেট বাহিনী। এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন সার ও কীটনাশক ব্যবসা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কামিয়েছেন অঢেল টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং মানুষের জায়গা জোরপূর্বক কিনে দুই কোটি টাকা মূল্যের দুটি গুদামঘর নির্মাণ করেছেন। কিনেছেন ২০ বিঘা জমি। বাবার টিনের চালাঘর থেকে হয়েছে পাকা বাড়ি। মাত্র দেড় দশকেই হয়েছেন অঢেল সম্পদ আর বিত্ত-বৈভবের মালিক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জিল্লুরের বাবা ইসমাইল গাইন বাগমারা এবং পার্শ্ববর্তী মোহনপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটে পান বিক্রি করতেন। চার ভাইবোনের মধ্যে জিল্লুর বড়। ২০০৬ সালে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে শ্রীপুর টাওয়ার বাজারে কীটনাশকের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনামুল হক সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সুচতুর জিল্লুর কৌশলে এনামুলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এমপির প্রেস সচিব হিসাবে দায়িত্ব পান। ক্ষমতা, প্রভাব আর সম্পদের দিকে জিল্লুরের নজর পড়ে। হয়ে ওঠেন বেপরোয়া।

জিল্লুর প্রথমেই ক্ষমতার দাপটে শ্রীপুর টাওয়ার বাজারে ভয়ভীতি দেখিয়ে আলমগীর নামের এক ব্যক্তির আত্মীয়র জমি জোরপূর্বক কিনে নেন। সেখানে আলমগীরের দোকান ছিল। সেটি উচ্ছেদ করে কোটি টাকা ব্যয়ে সারের গুদাম তৈরি করেন। পরে বাগমারা থানা সংলগ্ন এলাকায় পাউবো’র জমি দখল করে কোটি টাকা মূল্যের আরেকটি গুদাম ঘর নির্মাণ করেন। স্থানীয় সংসদ-সদস্যের কাছের লোক হওয়ার কারণে পাউবো এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও জমিটি দখলমুক্ত করতে পারেনি। ওই গুদামটি এখনো বিদ্যমান রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জিল্লুর বিসিআইসি’র সারের ডিলার। পাশাপাশি তিনি মোহনপুর উপজেলার ব্যবসায়ী শামীমের বিএডিসি’র লাইসেন্সটিও ছিনিয়ে নেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১৬ বছরে জিল্লুর বাগমারায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন সারের ব্যবসা। কৃষকের কাছে অধিক মূল্যে সার বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে বাগমারায় তিনি ‘সার জিল্লুর’ নামে পরিচিতি পান। এলাকাবাসী জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেই জিল্লুর এবং তার ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বজলুর রহমান মিলে তৈরি করেন হেলমেট বাহিনী। এ বাহিনীর অন্যতম সদস্যরা হলেন জিল্লুরের দুই চাচাত ভাই ফিরোজ আহমেদ ও সালাউদ্দিন এবং নিকটাত্মীয় আলাউদ্দিন। এদের সবাইকেই জিল্লুর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছেন। জিল্লুরের বিরুদ্ধাচরণ করলেই এ বাহিনীর অর্ধশতাধিক সদস্য এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

এদিকে ক্ষমতার দাপটে কুখ্যাত রাজাকার বাবা ইসমাইল গাইনকে জিল্লুর আওয়ামী লীগ আমলে বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এ ঘটনায় বাগমারার বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। তারা জামুকাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রাজাকার গাইনের নাম গেজেট থেকে বাতিলের দাবি জানান।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার ওপর হামলা এবং এক যুবদল নেতার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় করা মামলার আসামি হিসাবে ১৪ মার্চ জিল্লুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। সেগুলোরও তদন্ত চলছে।