Image description

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে সেনা প্রশাসন ‘চাপ দিচ্ছে’ বলে জাতীয় নাগরিক পার্টির এক নেতা দাবি তোলার পর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা পদে আনার ঘটনাক্রম তুলে ধরেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

শুক্রবার নিজের ফেইসবুক পেইজে প্রকাশ করা এক ভিডিও বার্তায় সে ঘটনাক্রমের বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অভিযোগ করেছেন, রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে এক বৈঠকে ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করার ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের ‘বিরোধিতার মুখে’ পড়েছিলেন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা।

কিন্তু ছাত্রদের ‘অনড় অবস্থানের’ কারণে শেষ পর্যন্ত ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত হয় বলে আসিফ মাহমুদের ভাষ্য।

প্রায় ১৭ মিনিটের ওই ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলন চলার মধ্যে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন প্রক্রিয়ার বর্ণনাও তুলে ধরেছেন তিনি।

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের আন্দোলনে সহিংসতার জেরে গড়ে ওঠা গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনদিন পর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের হাল ধরে।

সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া সেনা সদর থেকে আসেনি। আইএসপিআরও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

৬ অগাস্ট বঙ্গভবনে বৈঠক

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবউদ্দিন এবং তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। সে বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয় তার একটি বর্ণনা দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ।

তিনি বলেন, প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা ওই বৈঠকে নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম ও নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীও ছিলেন। অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান এবং আরও ১০-১২ জন সমন্বয়ক সভাকক্ষের বাইরে ছিলেন।

আলোচনার বর্ণনা দিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, “৬ তারিখ আর্মির সাথে আমাদের একটা বৈঠক হয়, তিন বাহিনীর প্রধান, তারপর রাষ্ট্রপতি; প্রায় চার ঘণ্টার একটা বৈঠক হয়। যেটার মূল কথাটা ছিল যে, সেনাপ্রধানের দিক থেকে মূল ভেটোটা ছিল, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন? হোয়াই নট অ্যানি আদার পার্সন’?

“আমরা আমাদের জায়গায় অ্যাডামেন্ট ছিলাম, কারণ আমরাতো ৫ তারিখ রাতেই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি ড. মুহাম্মদ ইউনূস হবেন পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এটা এক ধরনের বৈপ্লবিক কায়দায় ভিডিও বার্তা দিয়ে আমরা ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি। আমরা কোনো নিয়মের কিংবা সংবিধানের তোয়াক্কা সেই সময়টাই করি নাই।”

আসিফ বলেন, “কিন্তু উনি (সেনাপ্রধান) বারবার বলার চেষ্টা করতেছিলেন যে, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে মামলা আছে, তিনি একজন কনভিক্টেড পার্সন, একজন কনভিক্টেড পার্সন কীভাবে একটি দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারে’?”

“আমরা যখন কথাগুলোকে ডিবাঙ্ক করতেছিলাম যে, ‘এগুলোতো আওয়ামী লীগের সময়ে পলিকিটিক্যালি মোটিভেটেড মামলা, এই মামলাতো সবার নামে পাওয়া যাবে, আমাদের নামেও পাওয়া যাবে, আমার নামেও আছে’।”

 

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের শপথ গ্রহণ।

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের শপথ গ্রহণ।

 

এর পরের আলোচনা আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে এগিয়ে চলার বর্ণনা দিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, “এটা বলার পর উনারা আরেকটা কথা বললেন যে, ‘সোসাইটির একটা বড় অংশতো উনাকে হেইট করে’। বড় অংশ বলতে উনি সরাসরি বলেছেন যে, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারটাকেতো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, আওয়ামী লীগতো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দুচক্ষে দেখতে পারে না, একদম অপছন্দ করে। তো, আওয়ামী লীগ একটা লোককে একেবারে দেখতে পারছে না, বাংলাদেশেতো আলটিমেটলি ৩০-৪০ শতাংশ মানুষতো আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট করে। এই ৩০-৪০ শতাংশ মানুষের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা লোককে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত’?”

জবাবে ছাত্র নেতারা যা বলেছেন তা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “তো, আমরা তখন বললাম, আওয়ামী লীগ এখন এমন কিছু না, যেটা নিয়ে আমাদের কনসার্ন হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেই আমরা এই প্ল্যাটফর্মে আসছি, এখানে আমরা বসছি। আওয়ামী লীগ কী চাইল, না চাইল এটা এখন আর ম্যাটার করে না, কোনোভাবেই।

“কিন্তু উনি (সেনা প্রধান) বারবার এই কথাটা ঘুরেফিরে বলতেছিলেন যে, এই সরকারতো একটা নির্বাচনের আয়োজন করবে, এজন্য বিএনপি-আওয়ামী লীগ সবার কাছে এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা থাকা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগতো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একেবারে দেখতে পারে না। আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না উনি আসলে।

“কিন্তু আমাদের কথা ছিল যে, এই মুহূর্তে ডিসিশন মেকিংয়ে আওয়ামী লীগ ম্যাটার করে না। একটা গণহত্যা ঘটানোর পরে সে কী ভাবল, বা তার কী পজিশন, দ্যাট ডাজনট ম্যাটার। এর পরও উনারা নানা ধরনের যুক্তি দিতে থাকেন।”

আসিফ মাহমুদ বলেন, চার ঘণ্টার প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টাই অধ্যাপক ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা বানানোর প্রশ্নে আলোচনা হয়েছে। মাত্র আধা ঘণ্টা ছিল অন্যান্য বিষয়ের আলোচনা।

বৈঠকে দুই দফা বিরতির কথা তুলে ধরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, “তারা দুইবার বিরতি দিয়ে আমাদেরকে ভাবতে বলে চলে যেত। আবার এসে একই জায়গা থেকে কথা শুরু করত। আমরা বুঝতে পারছিলাম ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এখানকার এস্টাবলিশমেন্ট কোনোভাবে চাচ্ছে না।

“আমাদের কথা ছিল যে, আমরা ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি। আমরা এক ধরনের হুমকির সুরে সেখানে বলি যে, যদি এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে না হয়, যদি রাষ্ট্রপতি ঘোষণা না দেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে, তাহলেও আমাদের কিছু যায় আসে না। কারণ, আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি, আমরা আমাদের তৈরি করা উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ নিব।”

আসিফ মাহমুদ বলেন, “এই হুমকিটা দেওয়ার পরে তারা একটু নড়েচড়ে বসে এবং তারা গিয়ে রাষ্ট্রপতির সাথে ডিসকাস করে আসে।

“সেনাপ্রধান লাস্ট, আমার মনে পড়ে আমাদের বলেছিলেন, ‘আমি বুকে পাথর চাপা দিয়ে এই সিদ্ধান্তটা মেনে নিচ্ছি’।”

তরুণ এই উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের জায়গাটা ছিল খুবই রিজিড যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে না আনতে পারলে এখানে একটা শক্ত সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না। আর্মির মোটিভেশন ছিল এক-এগারোর মত একটা সরকার গঠন করা, যখন তারা নামগুলো দেয়, ৬টা-৭টা উপদেষ্টার নাম দেয়, তখন এটা বুঝা যায়, ডিকটেইট করা এক ধরনের।

“সুতরাং আমরা যদি এমন কাউকে নিই, যার ব্যক্তিত্ব অত শক্তিশালী না, তাহলে আমরা অন্য কারও দ্বারাই পরিচালিত হব, এই সরকারটা আত্মনির্ভরশীল স্বতন্ত্র সরকার হতে পারবে না।”

এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ৬ অগাস্ট রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে মুহাম্মদ ইউনূসের নাম ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে ভিডিও বার্তায় তুলে ধরেছেন আসিফ।

তার আগে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দূল্লাহ বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফেইসবুক পেইজে দেওয়া পোস্টে দাবি করেছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে সেনা প্রশাসন ‘চাপ দিচ্ছে’। এরপর শুক্রবার রাতে এনসিপি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ‘হস্তক্ষেপের এখতিয়ার’ নেই বলে মন্তব্য করে।

ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা শুরু ‘৫ অগাস্টের আগেই’

আন্দোলন চলার মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লীগ সরকার পতন পরবর্তী সরকার নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। সে সরকারের প্রধান হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূসের কথাও ভাবা হয় তখন। সে সময় ফ্রান্সে থাকা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ কীভাবে হল তা উঠে এসেছে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ভিডিও বার্তায়।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের বিষয়টি গত ৭ অগাস্ট জানান সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের বিষয়টি গত ৭ অগাস্ট জানান সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান

 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে কীভাবে রাজি করানো হল, তার বর্ণনা দিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, আন্দোলনের সময় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কয়েক কর্মকর্তার পাশাপাশি শামীম নামে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। শামীম মিরপুরে আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ‘বড় ভূমিকা’ রেখেছিলেন। তার মাধ্যমে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী, অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।

আসিফ মাহমুদ বলেন, “তাদের সঙ্গে আলোচনায় সবার একটা কমন কথা ছিল উনি আসবেন না। আলী রীয়াজ স্যারও বললেন, বদিউল আলম মজুমদার স্যারও বললেন, ‘উনি আসবেন না’। আরও যাদের সাথে কথা হচ্ছিল, ‘উনি রাজি হবেন না’- এই রকম একটা কথা হচ্ছিল।

তিনি বলেন, তখন মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তিনি সরাসরি কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ইউনূসের সঙ্গে কাজ করা শাব্বীর আহমদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তার কাছ থেকে ইউনূসের পিএস মঈন চৌধুরীর নম্বর পান।

“মঈন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করি, ২ বা ৩ তারিখ হবে। উনি তখন বলছিলেন যে, স্যারের একটা ছোটো সার্জারি আছে। ফ্রান্সে ছিলেন। তাকে বার্তাগুলো জানানো হয়।”

শাব্বীর আহমদ এখন প্রধান উপদেষ্টা সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মঈন চৌধুরীর সঙ্গে আলাপের কথা তুলে ধরে আসিফ মাহমুদ বলেন, “উনি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন, স্যার বার্তা পাঠালেন, তোমরা যেটা করতেছো, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। এটা, ২ তারিখের দিকে একটা মেসেজ আমাদেরকে পাঠান, মঈন চৌধুরীর মাধ্যমে। উনার সঙ্গে তখনও কথা হয়নি।

“আমার একটা চিন্তা ছিল যে, আমাদের অর্থনীতির যে ভঙ্গুর পরিস্থিতি, একটা বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সরকার গঠন করলে সেটার জাতীয় আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতির ব্যাপার আছে, এটা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া পসিবল হবে না।”

আসিফের ভাষ্যে, পরে মঈন চৌধুরী তাকে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। ‘সম্ভবত’ মঈন চৌধুরীর নম্বর থেকে প্রথম কথা বলা হয়।

“স্যারকে অ্যাপ্রোচ করার পর স্যার বললেন যে, তোমরা অন্য কাউকে ভাবো। এটা সম্ভবত ৩ তারিখ এবং স্যার কয়েকজনের নামও বললেন যে, তোমরা উনাদেরকে ভাবতে পারো। এর মধ্যে দুয়েকজন আমাদের উপদেষ্টা পরিষদেও আছেন। তখন স্যার বললেন যে, আমি ভেবে দেখি, তোমরাও ভাবো, যদি অন্য কোনো ভালো অপশন পাওয়া যায়।”

আসিফ মাহমুদ বলেন, “৩ অগাস্টতো অনেক কিছু অনিশ্চিত ছিল, এক দফা কেবল ঘোষণা হয়েছে। কবে পতন হবে, কবে আসবে- এটা অনিশ্চিত ছিল। এটাও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা ছিল সে সময়।

“আমার মনে হয়েছে, উনি নারাজ হলেও উনি কিছুটা ইতিবাচক। সেটা বাকিদের থেকে যেমন খবর আসতেছিল যে, আসবে না। কিন্তু আমরা ইনসিস্ট করি।”

ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয় নাহিদ ইসলাম ও মাহফুজ আলমদের জানিয়ে রাখার কথা তুলে ধরে আসিফ বলেন, এটা সম্মিলিত কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। কেননা, ৫ অগাস্ট যে সরকার পতন হবে তা নিশ্চিত ছিল না। আন্দোলন আরও দীর্ঘ হতে পারত, গৃহযুদ্ধের দিকেও যেতে পারত।

৫ অগাস্ট রাতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে থাকা অবস্থায় মঈন চৌধুরীর মাধ্যমে ইউনূসের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করার কথা বলেন আসিফ। যেখানে লাউড স্পিকারে ইউনূসের সঙ্গে কথা হয় নাহিদ ও আসিফের।

আসিফ বলেন, ওই আলাপে ইউনূস সরকারে আসার বিষয়ে ‘এক ধরনের মৌন সম্মতি’ দেন। তিনি আসবেন। এর মধ্যে অন্যদের সঙ্গেও তিনি আলাপ করেছেন।

“বলেছেন, আমি আসব, কিন্তু বিস্তারিত অ্যানাউন্স করার আগে তোমরা কোথাও বইল না আর কি। এ আলোচনাটা হওয়ার পরে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অফিসেই আমরা ব্রিফিংটা করি। সরকারের রূপরেখাসহ অনেক বিষয় ছিল ঘোষণা করার। একটা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলি।”

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজসহ অন্যদের নিয়ে সরকারের গঠনের কথা ওই ব্রিফিংয়ে বলা হলেও ইউনূসের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এরপর রাত দুইটা-আড়াইটায় ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন তিনি ও নাহিদ।

‘এক-এগারোর মত অন্যদের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার’ হবে কি না, সেই উদ্বেগ ইউনূসের ছিল মন্তব্য করে আসিফ বলেন, “স্যার বলেছেন, ‘আমাকে স্বাধীনতাটা দিতে হবে। আর্মি রান করবে, বা পেছন থেকে কেউ রান করবে, সেটা হলে আমি আসব না’।

“আমরা বলি, আমাদের অবস্থানও এটাই যে, সরকার যদি আমরা গঠন করি, স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। এখানে সেনাবাহিনী বা অন্য কোনো অথরিটি যদি হস্তক্ষেপ করতে চায়, সেটাকে মাঠ থেকে আমরা চ্যালেঞ্জ করব আর কি। এ ধরনের নিশ্চয়তা আমরা স্যারকে দিই।”

আসিফ বলেন, ইউনূসের দিক থেকে ২৩-২৪টা নাম আসে। যেগুলোর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েক নেতার নামও ‘কমন’ ছিল। এরপর একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়, যারা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করবে।

“মাহফুজের নেতৃত্বে ওই লিয়াজোঁ কমিটি জামায়াত, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দেয়। কিছু নাম ছিল সবার দিক থেকে কমন। যেমন- সালেহউদ্দিন আহমেদ স্যার, উনার নামটা সব দিক থেকে আসে।”

তিনি বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৮ অগাস্ট দুপুরে ঢাকায় নামার পর সেনাবাহিনী থেকে কিছু নাম প্রস্তাব করা হয়, ৫-৬টি নাম। অভ্যুত্থানের নেতারা ঘেঁটে দেখেন, এই ব্যক্তিরা ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না’। তাদের মধ্যে ‘সফট আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের সিভিল সোসাইটি হিসেবে পরিচিত’ ব্যক্তিরাও ছিলেন।

সেখানে নাম থাকা একজন সেনা কর্মকর্তা চার বছর ভারতে ছিলেন এবং সেখান থেকে তিনটি কোর্স করেন, এ তথ্য পাওয়ার কথা তুলে ধরে আসিফ মাহমুদ বলেন, “উনার ব্যাপারে জনমত হল যে, ‘র’ কানেক্টিভিটি আছে। ওই নামগুলো আমরা কেটে দিই। সেটাতে আর্মি কিছুটা নাখোশ হয়; এই নামগুলো কেটে দেওয়ার পরে।”

‘এক-এগারোর মত সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার যেন না হয়’, সেজন্য নামগুলো কেটে দেওয়ার কথা বলেন আসিফ মাহমুদ। সেখান থেকে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার নাম রাখার কথা বলেছেন তিনি।