
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না যাতে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাচিত হওয়ার সুযোগ পায়।’
শুক্রবার রাজধানীর ইস্কাটনে ঢাকা লেডিস ক্লাবে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি।
মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গৌণ ইস্যুকে মুখ্য ইস্যু বানাতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেইত স্বৈরাচারবিরোধী জাতীয় ঐক্যের মধ্যে সংশয়-সন্দেহের জন্ম দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাতে এখনো রাষ্ট্র থেকে লুণ্ঠন করা হাজার হাজার কোটি টাকা রয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার অর্থ সারা দেশে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।’
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সংস্কার এবং নির্বাচনকে দৃশ্যত যেভাবে মুখোমুখি করে ফেলা হয়েছে এটি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দেখেছি পলাতক স্বৈরাচারের শাসনকালে সিভিল সোসাইটি এবং পেশাজীবীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের সক্রিয় সহযোগী হয়ে উঠেছিল।
তিনি বলেন, ‘বীর জনতার রক্তক্ষয়ী এই অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট মাফিয়া সরকারের পতনের পর দীর্ঘ দেড় দশকের অন্ধকার অতীত থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অপার সম্ভাবনার এক দাঁড় উন্মোচিত হয়েছে।’
বিগত সরকার সংবিধান মানেনি উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের বর্তমান সংবিধান যেটিতে ইচ্ছেমতো কাটাছেড়া করে পলাতক স্বৈরাচার প্রায় তাদের দলীয় সংবিধানে পরিণত করেছিল, সেই সংবিধানের ৬৫ অনুষদের ২য় দফায় বলা হয়েছে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। সংবিধানের সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকার পরেও পলাতক ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে সারা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে, সারা বিশ্ব দেখেছে, বারবার জনগণের ভোট ছাড়া সংসদ গঠন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দেড় দশকের মাফিয়া শাসনকালে তরুণ প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটারসহ কেউ ভোট দিতে পারেননি। সুতরাং এইসব ভোটারদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে উচিৎ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। নাগরিকরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন না হলে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না।’
অনুষ্ঠানে পেশাজীবীদের মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘এখনো ষড়যন্ত্র আছে দেশের মধ্যে এবং দেশের বাইরে। আমাদের মিডিয়া ও ভারতীয় মিডিয়ার মধ্যেও ষড়যন্ত্র আছে। সীমান্তে এখনো রক্ত ঝরছে, এটি কখনো আমরা বরদাস্ত করতে পারি না। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সহায়তা করেছিল এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমরা মাথা বিক্রি করে দেই নাই। ১৮ কোটি মানুষের ইস্পাত কঠিন ঐক্য ও রক্ত ঝরিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যে পথ পেয়েছি সেই পথ দিয়ে অবশ্যই আমরা একটা মুক্তির সোপান অর্জন করব। সেই দৃঢ়তা আমাদের মধ্যে আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেন সংযমের পরিচয় দেই। আমরা যেন অসহিষ্ণু না হয়ে উঠি। আমরা যেন আরো ত্যাগ স্বীকার করি। ৩৬ জুলাই আমাদের প্রাথমিক বিজয়। সামনে বড় চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক ষড়যন্ত্র আছে আমি উল্লেখ করতে চাই না। গত রাত থেকে আরেকটি ষড়যন্ত্র ঘোট পাকাচ্ছে। আমরা যেন সচেতন থাকি। আমরা যেন দেশ প্রেমের পরিচয় দেই। আমরা যেন জাতীয়তাবাদের পরিচয় দেই। সেই অগ্নি পরীক্ষায় আমরা যেন বিজয় অর্জন করতে পারি।’
ইফতার মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, ফরহাদ হালিম ডোনার প্রমুখ।
পেশাজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক এম আজিজ, আবদাল আহমেদ, নূরুদ্দিন আহমেদ, চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, সংগীত শিল্পী মনির খান, কনক চাপা, বেবী নাজনীন প্রমুখ।