Image description

ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন এবং জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এই দুইয়ের মধ্যে সরকারের উপদেষ্টারা বিভাজন রেখা তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের যে চূড়ান্ত আন্দোলন এটাতো, গত ১৫ বছর গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বে যে আন্দোলন করা হচ্ছে তার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই ১৫ বছরের মধ্যে ইলিয়াস নেই, চৌধুরী আলম নেই, সুমন নেই, অদৃশ্য করা হয়েছে, এদের কেনো করা হয়েছে। কারণ এরা সোচ্চার ছিল অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি ঘটানো। এই কারণে ওরা জীবন দিয়েছে, সেই জীবনের একটা চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ দেখলাম শিশু-তরুণ-কিশোররা জুলাই-আগস্টে তারা জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে।’

 

‘আমি উপদেষ্টা সাহেবদের বলব, আপনারা এই ১৫ বছর ১৬ বছরের আন্দোলন আর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মধ্যে বিভাজন রেখা তৈরি করছেন কেন? এটা তো সব রক্তস্রোত একই সমুদ্রের মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়েছে এবং মোহনার এই মিলিত স্রোতেই শেখ হাসিনা আজকে পালিয়ে গেছে।’

 
 

রিজভী বলেন, ‘আপনাদের বলব, আপনারা যে কদিন আছেন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করুন। এখন তো মিনিকেট চালের কেজি ৮৫ টাকা সেদিকে আপনারা নজর দিন, পাইজাম আর ঝরনা চাল- একেবারে মোটা চাল সেটার দাম ৫৬/৫৭ টাকা, বিআর-২৮ সেটার দাম ৬২ থেকে ৬৫ টাকা-এগুলোর দিকে নজর দিন।’

 

তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনি প্রধান উপদেষ্টা মানুষের বিশ্বাস আপনার ওপর। আমরা চাই, আপনার হাত দিয়ে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হবে। আপনি যে কদিন ক্ষমতায় থাকবেন, আপনি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এই ধরনের গভীর বিশ্বাস জনগণের। কিন্তু যদি গড়িমসি হয় তাহলে তো ভিন্ন মাত্রা নেবে। ছাত্রদের কী সবক দিচ্ছেন’

রিজভী বলেন, ‘আপনারা এক উপদেষ্টা ছাত্রদের বলছে তোমরা যেভাবে তোমরা চালাচ্ছ আমাদের… এভাবে পাঁচ বছর চললে পরে দেশ আরও সুন্দর হবে। তার মানে নির্বাচনের দরকার নাই। আইনের শাসন, ন্যায় বিচার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা- এটা তো গণতন্ত্রের উপাদান। গণতন্ত্রের এসব উপাদানগুলো কি শেষ হয়ে যাবে? আমি সেই উপদেষ্টাকে বলতে চাই, এটার জন্যই তো লড়াই। কি সবক দিচ্ছেন? তাদেরকে তো ফ্যাসিবাদ অথবা ডিটটেটরশিপের দিকে আপনারা প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এটা তো ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘আজকে যে জনপদের পর জনপদে যে অসন্তোষ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেটা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের ফসল। এই দুঃশাসনের বিকৃত ফসলের মূল উৎপাটন করে আমাদের সমাজকে পবিত্র সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

‘সেই ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল একটি অগ্রগণ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে এই প্রত্যাশা আমি করছি।’

নয়া পল্টনে বিএনপির মহিলা সংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে সারাদেশে ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নয়া পল্টন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, নুসরাত পারুল থেকে শুরু করে গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে একের পর এক নারীরা ধর্ষিতা হয়েছে- যারা ধর্ষণকারী তাদের কোনো বিচার হয়নি, এমনকি হত্যাকারী যারা তাদের কোনো বিচার হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘কারণ যারা গুম-খুন-হত্যা করেছিলো তারাই কিন্তু সেই সময়ে রক্ষক হিসেবে অন্যদের দিয়ে কাজগুলো করাত। আজকে আমরা এমন একজনের কাছে দায়িত্ব তুলে দিয়েছি যাকে আমরা মনে করি শান্তির প্রতীক। আমরা ড. ইউনূস তার কাছে আশা করছি আমাদের দেশ নিরাপদে থাকবে, আমাদের মা-বোনরা নিরাপদে থাকবে, সবাই মুক্ত স্বাধীন কথা বলতে পারবে।’

গত ৪ বছরে ৭ হাজার শিশুসহ ৪৩ হাজার নারী ধর্ষণে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এগুলোর কোনো বিচার হয়নি। আমরা দেখেছি মাগুরার শিশু আছিয়া হত্যার পরে এক সপ্তাহের মধ্যে যেন মনে হয় মহোৎসব লেগেছে এক সপ্তাহের মধ্যে ১১ জন মহিলা-শিশু ধর্ষিতা হয়েছে। এই ধর্ষিতা হওয়ার কারণটা কী?’

মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, জেবা খানসহ মহিলা দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।