
বরগুনা পৌর শহরের এক মেয়েকে অপহরণের পরে ধর্ষণ করা হয়। এমন অভিযোগ এনে ওই মেয়ের বাবা মন্টু চন্দ্র দাস থানায় মামলা করলে তাকে হত্যা করা হয়। নিহত মন্টু চন্দ্র দাসের মেয়েকে মোবাইল ফোনে ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রোববার (১৬ মার্চ) রাতে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কালিবাড়ি করইতলা এলাকার মন্টুর বাড়িতে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান ফোন দিয়ে ওই মেয়েকে বলেন, ‘বোন আমি তারেক বলছি। আপনাদের পাশে বিএনপি সবসময় আছে, থাকবে। ন্যায়বিচার পেতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
তারেক রহমান আরো বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশের নাগরিক। তাই বিএনপি আপনাদের পাশে থাকবে। আপনারা যাতে ন্যায়বিচার পান সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাটি করব। ভয় পাবেন না, দেশের মানুষ তথা বিএনপি আপনাদের পাশে আছে। আমি আমার নেতৃবৃন্দকে বলেছি, আমার নেতৃবৃন্দ আপনার ওখানে যাচ্ছেন। এছাড়াও আমান ওখানে আছে। আমাদের দলের আরো সিনিয়র নেতাদেরকে আমরা বলেছি, আপনার ওখানে যাবে এবং আপনাদের সাথে কথা বলবে। আপনার কী কী সহযোগিতা প্রয়োজন বলবেন। কতটুকু পারবো জানি না, তবে আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব আপনার পাশে দাঁড়াতে। আপনি যাতে আইনের শাসন পান, ন্যায়বিচার পান সেজন্য আমার দলের যারা উকিল আছেন তাদেরকে আমরা সেভাবেই নির্দেশনা দেব।’
‘নিহতের ঘটনার ছয় দিন পার হলেও কোনো আসামি ধরা পড়েনি’ এমন কথার জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনি টেনশন করবেন না। আমরা দেখি, আপনার জন্য কী ব্যবস্থা করতে পারি। ইনশাআল্লাহ আমরা একটা ব্যবস্থা করব আপনার জন্য।’
মিন্টু চন্দ্র দাস খুন হওয়ার পরে তার স্ত্রী অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনার দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করা হলেও অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত আসামি সৃজীব চন্দ্র রায়ের বাবা শ্রীরাম রায়, সৃজীবের সহযোগী কালু ও রফিক। এ মামলার একমাত্র এজাহারভুক্ত আসামি সৃজীব রায়সহ গ্রেফতার সবাই আদালতের নির্দেশে বর্তমানে কারাগারে আছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার ১১ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে বরগুনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কালিবাড়ি করইতলা নামক এলাকার নিজ বাড়ির পেছন থেকে মন্টু চন্দ্র দাসের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে বুধবার বিকেলে বরগুনা সদর থানায় নিহতের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেন।
অপরদিকে, মেয়েকে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে বিচার চেয়ে দায়েরকৃত মামলার বাদি বাবাকে হত্যার অভিযোগ ওঠায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত মন্টুর বাড়িতে দেখা যায়, দেড় মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে নির্বাক হয়ে বসে আছেন মন্টুর স্ত্রী। চার বছর ও ১০ বছর বয়সী দুই মেয়ের চোখে বাবাকে হারানোর শোক।
নিহতের স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েকে ধর্ষণের পর আমার স্বামী বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। পরে যে দিন মামলার তারিখ তার আগের রাতে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সন্দেহ হয় ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তের স্বজনরা এ হত্যাকাণ্ড করেছে। স্বামীকে হারিয়ে এখন সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি। কীভাবে আমাদের সংসার চলবে জানি না।