Image description
 
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, পৃথিবীর কোনো উন্নত ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রে মানবাধিকার অফিস কেউ করতে দেয়নি। আমেরিকাও দেয়নি, ভারত‌ও দেয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যদি কেউ এই বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হয়, বাংলাদেশের মানুষ তাকে কঠোর হস্তে দমন করবে।
 
শুক্রবার (১৪ মার্চ) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।ইফতার মাহফিলে উপস্থিত আমন্ত্রিত মেহমানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
 
রাজধানীর পল্টন ফার্স হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসে রাজনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্টজনদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। 
 
ইফতারে আসা অতিথিদেরকে স্বাগত জানিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। 
 
মামুনুল হক বলেন, আজকে একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন পরিবেশে রমজানুল মোবারক উদযাপন করছি। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে স্বদেশে পরবাসীর মতো আমাদের জীবনযাপন করতে হয়েছে। মুক্ত অবস্থায়‌ও বন্দিত্বের অভিশাপ নিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হয়েছে। অসংখ্য অগণিত রাজনৈতিক নেতাকর্মী গুম খুন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অনেককে দিনের পর দিন মাসের পর মাস ফেরারি জীবনযাপন করতে হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, রাজনীতি করা কতটা অপরাধ।শুধু রাজনীতি করার অপরাধে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের বুকের ওপর চেপে বসা জগদ্দল পাথর স্বৈরাচারী রেজিম ফেরাউনকে উৎখাত করে এই জাতির ওপর মহান নেয়ামত দান করেছেন। মুক্ত বাতাসে আমাদের নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ দান করেছেন।
 
মামুনুল হক বলেন, একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাচ্ছি। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আগামী বিনির্মাণের লক্ষ্যে সংস্কারের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যে উদ্যোগকে দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত সবাই সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে আমরা আশা করছি, আগামী বাংলাদেশে বহুদল ও মতের সম্মিলনে একটি সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে ওঠবে। 
 
তিনি ২০০৯ সালের পিলখানা ট্রাজেডিতে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার শাহাদতবরণ, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে শাহাদতবরণকারী হেফাজতে ইসলামের বীর তৌহিদী জনতা, ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনে শাহাদতবরণকারী অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের কুখ্যাত মুসলিমঘাতক নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে সরকারি বাহিনীর সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হেফাজতে ইসলামের ২৫ জন বীর শহিদান ও সর্বশেষ ২০২৪-এ শাহাদতবরণ করা অসংখ্য বীর শহিদানের মাগফিরাত কামনা করেন।
 
মামুনুল হক বলেন, আজকে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে এমন অবস্থানে এসে উপনীত হয়েছে, আমরা আশাবাদী সম্মিলিতভাবে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। তবে সর্বত্র‌ই একটি আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছে, না জানি পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়ে যায়। একটি বিষয়ে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক পক্ষকে একমত হ‌ওয়ার আহ্বান জানাই যে, এইসময়ে আমরা লক্ষ্য করছি বাংলাদেশে অনেক সংকট আছে। তারপর‌ও এক ধরনের স্বস্তির আবহ সৃষ্টি হয়েছে। এই রমজানে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতা রোধ করা হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে লোডশেডিং একেবারে কম হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি বিষয়ে আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের দেশকে পুনর্গঠনের যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হতে চাই। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা অবস্থা হলো, পুলিশ প্রশাসন এখনো সম্পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে মাঠে কাজ করছে, সে কথা বলার সময় এখনো হয়নি।  
 
মামুনুল হক আরও বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের জনগণ ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এদেশে ইসলামের জন্য অবমাননাকর কোনো বিষয়কে মানুষ মেনে নেবে না। বাংলাদেশ কখন‌ই ইসলামবিরোধী কোনো কালচারকে মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে, সভ্য নাগরিকদের দেশ হিসেবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে মেনে নিতে পারে না। ইতোমধ্যে একজন রূপান্তরিত পুরুষকে অদম্য নারী হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দিয়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি কালচারকে অবমাননা করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ আমাদের কপালে পড়ছে। 
 
শিশু আছিয়াসহ সব ধর্ষণকাণ্ডের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, আইনের অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। অনেক ছোটখাটো বিষয়কে এসব আইনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে কঠোরতর অপরাধকে হালকা করে ফেলা হচ্ছে। নারী-শিশু ও সমাজের দুর্বল মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
 
আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, এবি পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতি মনীর হোসাইন কাসেমী, হাবের সহ-সভাপতি মাওলানা নূর মুহাম্মাদ, মাওলানা রেজাউল করীম আবরার, মাওলানা রুহুল আমীন সাদী প্রমুখ।
 
কূটনৈতিকদের মধ্যে চীন, ইরান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমির মাওলানা রেজাউল করীম জালালী,  মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা হেলালুদ্দীন, মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা কুরবান আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আব্দুল আজীজ, মুফতি শরাফত হোসাইন, খেলাফত যুব মজলিস সভাপতি জাহিদুজ্জামান, খেলাফত ছাত্র মজলিস সভাপতি আব্দুল আজীজ, খেলাফত শ্রমিক মজলিস সভাপতিসহ কেন্দীয়, মহানগর ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা।