Image description
 

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সামলানো দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তৃণমূলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ‘বিএনপির শত্রু বিএনপি’। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বেশকিছু নির্দেশনা দেন বিএনপির হাইকমান্ড। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশেও থামানো যাচ্ছে না বিরোধ ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত। নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সভা-সমাবেশ, ইফতার মাহফিলসহ জনবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে জনগণের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে এসব কর্মসূচিও পালন করছে।

একদিকে যেমন এসব কর্মসূচি পালন হচ্ছে, অন্যদিকে অবৈধ দখল এবং চাঁদাবাজির কারণে দলটির ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যদিও এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানে রয়েছেন দলটির হাইকমান্ড। এরই মধ্যে দলের উচ্চপর্যায় থেকে নানান নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অপরাধে সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার এবং অনেকের দলীয় পদ স্থগিত ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলমান আছে। অনেক ক্ষেত্রে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূলের বিভিন্ন কমিটি। এরপরও থেমে নেই দখল, চাঁদাবাজি ও হানাহানি। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দলের অন্তর্কোন্দলে সংঘাতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঘটছে অভ্যন্তরীণ সহিংসতার ঘটনাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রের কড়াকড়ি আমলে নিচ্ছে না তৃণমূলের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের একাংশ। তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে ইমেজ সংকটে পড়েছেন বিএনপির অনেক নেতা।

খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, বাস্তবতা এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, ‘বিএনপির শত্রু বিএনপি’। পদপদবি, কমিটি গঠন, দখল, চাঁদাবাজি এবং এলাকায় প্রভাব বিস্তার কেন্দ্র করে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে দলীয় নেতাকর্মীরও মৃত্যু হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি, দখলবাজি কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষে দলীয় নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষসহ অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোনোভাবেই থামছে না অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও গ্রুপিং। সর্বশেষ গত বুধবার এক দিনে সারা দেশে বড় ধরনের চারটি সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। এসব সংঘাতে একজনের প্রাণহানিও হয়েছে।

তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নিরসনকে ‘অনেক কঠিন কাজ’ উল্লেখ করে বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিরোধ সংঘাত নিয়ন্ত্রণ ও শূন্যের কোঠায় আনতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তৃণমূল পুনর্গঠন ও যত দ্রুত সম্ভব নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে।’

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, বিএনপির নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে অতিষ্ঠ ছিল। অনেকে ঘরবাড়ি কিংবা এলাকায় থাকতে পারেনি। দেশে বা দেশের বাইরে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারা সবাই এখন ‘ভালো’ থাকতে চান। এজন্য দখল হয়ে যাওয়া ‘এলাকা’ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে অনেক জায়গায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর কিছু সুবিধাবাদী হাইব্রিড ব্যক্তি বিএনপির সঙ্গে মিশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এসব বন্ধ করতে বিএনপির কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দল থেকে মামলা করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলের ভেতরে প্রতিযোগিতা থাকবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সংঘাত-সংঘর্ষে না জড়ানোর নির্দেশনা রয়েছে। তবু যারা এসব করছে, তাদের বিরুদ্ধে তো দল প্রতিনিয়ত ব্যবস্থাও নিচ্ছে। এরই মধ্যে সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বিএনপির বিরুদ্ধে যেটা ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে, সেটা এক ধরনের অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা। কারণ, যখনই কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, সেটা যত বড় নেতার বিরুদ্ধেই হোক, তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কঠোর।’

বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপির মতো একটি বড় দলে গ্রুপিং ছিল, আছে এবং থাকবে। প্রতিযোগিতাও থাকবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৬ বছর নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছেন। তাদের ন্যায্যতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তো থাকবেই। আর দল থেকে বলা হয়েছে বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে। তাই বলে দলের গ্রুপিংয়ের কারণে কোনো সংঘর্ষ, প্রাণহানি এসব মেনে নেওয়া হবে না। বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কিছু নমুনা:

গত ৭ মার্চ রাজশাহীতে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়ে রিকশাচালক গোলাম হোসেন রকি আহত হন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শঙ্কর কে বিশ্বাস জানিয়েছন, ‘তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল এবং মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। ঘটনার পর থেকেই তিনি অজ্ঞান ছিলেন এবং আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।’ গত ৭ মার্চ সন্ধ্যায় শহরের দরিখারবোনা এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ফ্ল্যাটে পুলিশি অভিযান এবং এক ব্যক্তিকে আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুপক্ষে সৃষ্ট উত্তেজনা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওইদিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ চলতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘বিবদমান পক্ষগুলো পরস্পর ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের মতো ফৌজদারি অপরাধও করেছে।

গত ১২ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে দলটির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান রতন নিহত এবং আহত হন আরও পাঁচজন। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে রাউতি ইউনিয়নের বানাইল বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাঙ্গড্ডা বাজার এলাকায় দলীয় কোন্দল ও বিরোধে হেসাখাল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সেলিম ভূঁইয়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আহত হন আরও পাঁচজন।

গত ৮ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় টিসিবির পণ্যের কার্ড বিতরণ নিয়ে সদর উপজেলা ও দর্শনা থানার তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন নিহত এবং গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। সংঘর্ষে নিহত রফিকুল ইসলাম রফিক তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

এদিকে গত শুক্রবার বিএনপির দুই গ্রুপের বোমাবাজি, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১০ জন আহত হন। নগরীর প্রাণকেন্দ্র রেলগেট, শালবাগান, সপুরা, দড়িখড়বোনা ও উপশহর এলাকার এ সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুরের পাশাপাশি কয়েকটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় নদীর বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের নলচর গ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধসহ অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর।

একই দিনে ভোলার মনপুরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হাজিরহাট বাজারে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন। স্থানীয়রা জানান, ভোলা-৪ (মনপুরা-চরফ্যাশন) আসনের সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের সমর্থকদের মধ্যকার সংঘর্ষে উভয়পক্ষের লোকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত বুধবার নোয়াখালীর কবিরহাটে বাজারের ইজারার দরপত্র মূল্যায়ন শেষে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন।

গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষে মোহাম্মদ আলী নামে একজন নিহত হয়েছেন। উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের মহিষখলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের অভিযোগ তাহিরপুর থেকে কয়লাসহ বিভিন্ন মালবাহী লরিগাড়ি মহিষখলা বাজারের ওপর দিয়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় যাতায়াত করে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোক্তার হোসেন ও বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি হযরত আলীর নেতৃত্বে এসব লরিগাড়ি থেকে চাঁদা তোলা হতো। মোক্তার হোসেন ও হযরত আলী একে অপরের চাচাতো ভাই এবং দুজনই বিএনপির কর্মী।

এ ছাড়া গত মঙ্গলবার রাজশাহীর তানোরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত গানিউল হক (৫০) নামের এক কর্মী পরদিন বুধবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গানিউল পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মমিনুল হক মমিনের ছোট ভাই। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের পাঁচজন আহত হন।

ওদিকে গত ৮ মার্চ বরিশালের বাকেরগঞ্জে মো. আসাদুল্লাহ নামে এক ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে দেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। উপজেলার নিয়ামতি বাজারের ভিআইপি মিষ্টির দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত মো. আসাদুল্লাহ নিয়ামতি ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি। এ ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর তারা হলেন, নিয়ামতি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম মৃধা ও যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন ফরাজী। অভিযুক্ত দুজনকেই দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

৭ মার্চ জামালপুর সদর উপজেলায় ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে বিএনপির তিন নেতাকর্মীকে মেষ্টা ইউনিয়নের হাজিপুর বাজার এলাকা থেকে আটক করে যৌথ বাহিনী। আটককৃত মো. পলাশ মিয়া, মো. সিরাজুল ইসলাম ও মো. ফরমান হাজীপুর বাজারের মাসুদ রানা নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। এ নিয়ে ওই ব্যবসায়ী অভিযোগ করলে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। আটকরা তিনজনই বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

অন্যদিকে ময়মনসিংহের নান্দাইলে উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি ও কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইয়াসের খান চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও এনামুল কাদিরকে সদস্য সচিব করে নান্দাইল উপজেলা বিএনপির ১১২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া সাবেক মেয়র আজিজুল ইসলাম পিকুলকে আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর রফিকুজ্জামান মনিরকে সদস্য সচিব করে নান্দাইল পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা পরদিন থেকেই শুরু করেন লাগাতার আন্দোলন। ক্ষোভে ফেটে পড়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কমিটি ঘোষণার এক মাসেও নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। কমিটি বাতিলের দাবিতে লাগাতার প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ করছেন তারা। আন্দোলনের মুখে উপজেলায় আনন্দ মিছিল কিংবা যৌথসভা করতে পারেননি নতুন কমিটির নেতারা। একপর্যায়ে গত ১ মার্চ সংবর্ধনা নিতে এসে স্থানীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটির আহ্বায়ক ইয়াসের খান চৌধুরী। ওইদিন সকালে নান্দাইলের নিজ বাড়ির সামনে বহিরাগত এনে অস্ত্রের মহড়া দেন তিনি। এ সময় স্থানীয় এলাকাবাসী ও পদবঞ্চিত বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন। এতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি টিম। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাহারায় নান্দাইল ত্যাগ করেন তিনি।

নান্দাইল থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আকরাম খান ফেরদৌস বলেন, নতুন কমিটি ঘোষণার পর তিন সপ্তাহ পার হলেও এলাকায় আসতে পারেননি ইয়াসের খান। তিনি ১ মার্চ ভোররাতে মোয়াজ্জেমপুরের নিজ বাড়িতে সংবর্ধনা নেওয়ার জন্য আসেন এবং বাড়ির সামনে সন্ত্রাসী ভাড়া এনে মহড়া দেন। এ খবর পেয়ে সংক্ষুব্ধ বিএনপির কর্মীরা সেখানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করলে একপর্যায়ে ইয়াসের খানের সহযোগী কামরুল রিভলবার দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি ছোড়ে। এতে মো. মিলন ভূঁইয়া, মো. আল আমিন, মো. আব্দুল জলিল, মো. আসাদুল, মো. রাকিব আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এলাকা ত্যাগ করেন ইয়াসের খান।

যা বললেন মির্জা আব্বাস:

বিএনপির চলমান হামলা সংঘর্ষসহ নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অবৈধ দখলসহ যে কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘একদল লোক দলের অনেক বদনাম করছে। অপকর্ম, চাঁদাবাজি ও দুষ্কর্ম করে তারা, চাপিয়ে দেয় বিএনপির ওপর। এ সমস্ত চাঁদাবাজকে প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিহত করতে হবে মুখের কথা অথবা কাজে। না হলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার বলেছেন, যদি জনগণের মন থেকে উঠে যাও, তাহলে আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে তার চেয়ে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। সাবধান থাকবেন। দুই একজন লোকের জন্য আমার সমস্ত দল বা দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের গায়ে কালিমা লিপ্ত হবে এটা হতে দেওয়া যাবে না। যদি কোনো চাঁদাবাজ ঢুকে পড়ে কিংবা আসে ওইসব সুযোগ সন্ধানী হাইব্রিডকে চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেন অথবা পুলিশকে সোপর্দ করেন। বিএনপিতে কোনো অপকর্মকারী, কোনো দুষ্কৃতকারী ও চাঁদাবাজির জায়গা বিএনপিতে নেই, হবে না।