Image description

চলতি বছরের ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ধরেই এগোচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। তাই এখন মাঠে গড়াচ্ছে ভোটের প্রস্তুতি। নির্বাচনি জোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা মেরুকরণ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অনেকটা নির্ভার দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলটি এবার ডান-বাম ও ইসলামি দলগুলোকে একসঙ্গে নিতে চায়। এ নিয়ে পর্দার আড়ালেও নানা আলোচনা চলছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী জোট গঠনে বেশ কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।

নতুন করে আলোচনায় তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। দলটি বিএনপি নাকি জামায়াতের সঙ্গে জোট করবে, নাকি এর বাইরে নতুন চমক নিয়ে আসবে তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল রয়েছে। আবার আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদও নতুন বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ দল হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে। সেক্ষেত্রে এর মধ্যে দুটি দল এনসিপির সঙ্গে জোটে দেখা যেতে পারে। তবে সবকিছু দৃশ্যমান হবে জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্রমতে, বিএনপি সমমনা ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিও (কাজী জাফর) সামনে আলোচনায় আসতে পারে। গুঞ্জন রয়েছে, একটি দল যারা জাতীয় সংসদের বিরোধী দল ছিল, তাদের কিছু নেতা জাতীয় পার্টিতে (কাজী জাফর) যোগ দিতে পারেন। বিএনপি অথবা নতুন দল এনসিপির সঙ্গে জোট করার চেষ্টা করবে দলটি। এ নিয়ে নানা মহলে আলোচনাও চলছে। জামায়াত সূত্র জানায়, তারা বেশ কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গে জোট বা নির্বাচনি সমঝোতার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ওই দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছেন। তবে জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আরেকটি সূত্র বলছে, তরুণদের নতুন দল এনসিপি বিএনপির নেতৃত্বে জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে নতুন এই দলকে কিছু আসন ছাড়তে পারে বিএনপি। তবে সেক্ষেত্রে জামায়াতকে এ জোটে নেওয়ার সম্ভাবনা কম। আবার আসন নিয়ে সমঝোতা না হলে জামায়াত, নতুন দল এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দল মিলে জোট বাঁধতে পারে। এবি পার্টি ও গণঅধিকার পার্টির মধ্যে দুটি জোট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একটি বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া। আরেকটি গণ-অভ্যুত্থানে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে তাদের সমন্বয়ে একটা জোট গড়ে তোলা। তবে দলগুলোর নেতারা জানান, এই মুহূর্তে তারা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়েই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। এজন্য ৩০০ আসনে প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে ব্যস্ত দলগুলো। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে এলে সব হিসাব-নিকাশ পরিবর্তন হবে বলেও মনে করেন নেতারা।

এনসিপির একাধিক নেতা জানান, নতুন রাজনৈতিক দল হিসাবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের দল খুব শিগগির প্রতীক চূড়ান্তের পর নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। নির্বাচন হতে এখনো অনেক দেরি। যখন নির্বাচন হবে তখন দেখা যাবে কে কোন জোটে যায়। সে সময় যে কারও সঙ্গেই জোট হতে পারে।

বিএনপি সূত্র জানায়, তারা কোন ফরম্যাটে জোট করবে তা নিয়ে এখনো দলীয় কোনো ফোরামে আলোচনা হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার অপেক্ষায় দলটি। যে কোনো মুহূর্তে নির্বাচন হলেও বিএনপির কোনো সমস্যা নেই। অন্তত ৭০ থেকে ৯০টি আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঠিক করাই আছে। বাকি আসনে একক প্রার্থী ঠিক করারও কাজ চলছে। তবে জোট করেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। সেক্ষেত্রে বিগত আন্দোলনে সঙ্গে থাকা সমমনা দলগুলোকে এ জোটে রাখা নিয়ে বেশি আগ্রহী দলটি। প্রাধান্য দেবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গেও তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাদের সঙ্গে জোট নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। অন্য একটি সূত্র বলছে, নতুন দল এনসিপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারের দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলের শেষে এ নিয়ে দৃশ্যমান কিছু অগ্রগতি দেখা যেতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, দেশের জনগণ জাতীয় নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে আছেন। জনগণ গত ১৫ বছর যে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, সেই অধিকার ফিরে পেতে চান। সবাই আশা করছে, সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দেবে। একক নাকি জোটগতভাবে বিএনপি ভোটে অংশ নেবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। নির্বাচন এলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়, তারপর সিদ্ধান্ত হয়।

ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট বা সমাঝোতার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, জোট বিষয় না, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। সম্পর্কের গভীরতা আছে, অগ্রগতি আছে। জোটের বিষয় নিয়ে এখনো কথা হয়নি। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত আছে। তরুণদের নতুন দলের সঙ্গে তো আছেই।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা চলমান। দিন দিন অগ্রগতি হচ্ছে। সমঝোতা, অর্থাৎ প্রত্যেকটা আসনে স্বতন্ত্রভাবে ইসলামের পক্ষে যেন একটা বাক্স দিতে পারি-সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করি সফল হবে। ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণে যারা দল, রাজনীতি, সংগঠন করবে, দেশের জন্য চিন্তা করবে তাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হতে পারে। বিএনপিও দেখা করেছে, যোগাযোগ আছে। এখন আমরা চেষ্টা করছি ইসলামি দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা।

জোট প্রসঙ্গে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নির্বাচনি জোট নিয়ে আমরা এখনও দলীয় ফোরামে আলোচনা শুরু করিনি। আমাদের নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে দুটি জোট নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা আছে। প্রথমটি হলো বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করা। দ্বিতীয়টি হলো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যে রাজনৈতিক উদ্যোগ ও যে দলগুলো গণ-অভ্যুত্থানে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে তাদের সমন্বয়ে একটা জোট গড়ে তোলা। আশা করি নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এ ব্যাপারে একটা অগ্রগতি দেখতে পাবেন।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, আমাদের এখন পর্যন্ত জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা কোনো জায়গা থেকেই শুরু হয়নি। বিশেষ করে নির্বাচনি জোট নিয়ে। সামনে হয়তো আলোচনা হবে। বিএনপিসহ সবার সঙ্গেই সম্পর্ক আছে। সবাই বিভিন্ন জায়গা থেকে কথাবার্তা বলছে। নতুন দল এনসিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনসিপি গঠিত হওয়ার আগে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাসায় আমাদের দল গণঅধিকার পরিষদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতাদের আলোচনা হয় তাদের দল গঠন নিয়ে। কোন প্রক্রিয়ায় বা একীভূত হয়ে কাজ করা যায় বা জোট গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। তারা আমাদের ডেকেছিল, আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে জোট করলে ভালো হয়। আমরা বলেছি না, জোটের অভিজ্ঞতা আছে, এটি আসলে মনোমালিন্য সৃষ্টি করে। তারা আর আমরা এক সময়ে একই সঙ্গে ছিলাম। সেজন্য বলেছি, তরুণরা এক হতে পারলে ভালো, এতটুকুই। এর বাইরে কোনো আলোচনা হয়নি। নতুন দল এনসিপি গঠনের আগে ধারাবাহিক বৈঠক হয়েছে। তারা ডেকেছে, মতামত নিয়েছে, একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। কিন্তু কিভাবে করবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো পর্যন্ত হয়নি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আমাদের দল থেকে এখন পর্যন্ত অফিশিয়ালি কোনো দলের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। এই মুহূর্তে বিএনপি কিংবা জামায়াত কারও সঙ্গে জোট করার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা পরে দেখা যাবে।