
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত সাড়ে দশটার দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাটারা থানায় পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ করেছেন উভয়পক্ষ। এর আগে সারজিস আলম বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যান। ঘণ্টা তিনেক সেখানে অবস্থান করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিসহ ওই এলাকার আশপাশের বেশক’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গে আড্ডা দেন। আড্ডা শেষে রাত ১০টার পর ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল নিয়ে সারজিস নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় এনএসইউ এর ৮ নম্বর গেটের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ একদল লোক সারজিসের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া শুরু করে। তার সঙ্গে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিচু মানের দালাল বলে উক্তি করতে থাকেন। এ সময় সারজিসও দাঁড়িয়ে পড়েন। উভয়পক্ষের মধ্যে তখন চিৎকার-চেঁচামেচি ও উত্তেজনা শুরু হয়। সার্জিসের সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীরা দালাল বলা যুবকদের দিকে তেড়ে যান। বলেন- আমাদের ভাইকে অপমান করিস, তোদের এতো বড় সাহস। দু’পক্ষের মধ্যেই শুরু হয় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। তখন সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরা সার্জিস আলম উভয়পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মুহূর্তেই উত্তেজনা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। সার্জিস আলম অবস্থার বেগতিক দেখে তখন কিছু দূর হেঁটে তার গাড়িতে উঠে চলে যান। তখন তার পেছনেও ধাওয়া শুরু করে কয়েকজন। এই ঘটনার ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ ওই ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন- জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠনের পর সার্জিস আলম বসুন্ধরা এলাকায় শোডাউন দিতে এসেছিলেন। তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এরপর বৃহস্পতিবার ভোররাতে সার্জিস আলম তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে লিখেন-‘ইফতারের পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সহযোদ্ধাদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা দিতে এবং তাদের কথা শুনতে যাই।। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা হয়, তাদের কথা শোনা হয়। এনএসইউ, আইইউবি, এআইইউবি, ইউআইইউ এই ৪ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে এনএসইউ’র সামনে দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। আমার সঙ্গে ১৫-২০জন প্রাইভেটের সহযোদ্ধারা ছিল। পরে এনএসইউ’র গেটের সামনে দেখি ১০-১২ জন ঢাবি সিন্ডিকেট নিয়ে স্ল্লোগান দিচ্ছে। এর মধ্যে ছাত্রদলের সেন্ট্রাল নেতা আহমেদ শাকিল ছিল। আমি এগিয়ে যাই তাদের কথা শুনতে। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার সঙ্গে থাকা প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করতে থাকে। ওদের ১০-১২ জনের মধ্যে ১-২জনকে স্টুডেন্ট মনে হলেও বাকিদের দেখে ভাড়া করা টোকাই দুষ্কৃতকারী মনে হচ্ছিলো। বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই এদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আমি দুইপক্ষকে চলে যেতে বলি এবং চলে আসি। পরবর্তীতে ছাত্রদলের শাকিল তার নেতৃত্বে তার সঙ্গে থাকা টোকাই দুষ্কৃতকারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে আগে আমার সঙ্গে থাকা ওই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছেলেদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে এবং সরাসরি মাথায় ও পিঠে আঘাত করে একাধিক জনকে রক্তাক্ত করে। ছাত্রদলের শাকিল সহ বাকি সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। ১৬ বছর ধরে ছাত্রদল টোকাইলীগের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার পর আজকে যদি ছাত্রদলের কেউ একইভাবে টোকাইলীগের সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করে তাহলে তারও পরিণতি টোকাইলীগের মতো হতে খুব বেশিদিন লাগবে না। শিক্ষা নেন, সময় থাকতে নিকট অতীত থেকে শিক্ষা নেন।’
তবে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা মো. শাকিল আহমেদ মানবজমিন’কে বলেন, বুধবার রাতে আমি আমার ভাই-ব্রাদারের সঙ্গে আমার ক্যাম্পাসের (সাবেক ছাত্র) সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন আমাদের সামনে দিয়ে সার্জিস আলম তার দলবল নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এমন সময় আমাদের পাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে-ওই দেখ ঢাবি সিন্ডিকেট যাচ্ছে। তখন সার্জিস আলম তার দলবল নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসে। এমন একটা ভাব মনে হচ্ছিল তারা আমাদের মেরেই ফেলবে। তাদের ওই মারমুখো আচরণের জন্যই দুইপক্ষের মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। এই ঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। একই সঙ্গে দলের কাছেও রিপোর্ট জমা করেছি।
এ বিষয়ে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সামনের রাস্তার ওই ঘটনায় সার্জিস আলম ও ছাত্রদল নেতা শাকিল আহমেদ দুইপক্ষই আমাদের থানায় লিখিত অভিযোগ (জিডি) করেছেন। সার্জিস আলমের পক্ষে অভিযোগটি করেছেন মাহমুদুল হাসান মঈন নামে এক শিক্ষার্থী। আর তাদের বিপক্ষে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল নেতা মো. শাকিল আহমেদ। তারা উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ওসি বলেন, আমরা উভয়পক্ষের অভিযোগই গ্রহণ করেছি ও আমরা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করছি। তদন্ত করছি। তদন্তের পর এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।