
আত্মপ্রকাশের পর এবার দল গোছাতে মন দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের এই দলের লক্ষ্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, যেটি ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয়। এই কারণে কেন্দ্রের পর এবার তৃণমূলে কমিটি গঠনের দিকে নজর দিয়েছে দলটি।
এনসিপির নেতারা জানিয়েছেন, রমজান মাসজুড়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলো থেকে নেতা- কর্মীদের সমন্বয়ে দলের জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিগুলো গঠন করা হবে। ইতিমধ্যে ২১৭ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিভিন্ন জেলায় দলকে সংগঠিত করতে মুখ্য ভূমিকা রাখবেন। চলতি মাসে ‘ইফতার’ ও স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে দলের কার্যক্রম। তবে এপ্রিলে বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথের আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটু তাড়াহুড়ো করে দল তৈরি করতে হলো। অনেক কিছুই এখনো বাকি। এই মাসে আমরা সারা দেশে সংগঠন গোছানোর কাজ করব।’
জানা গেছে, দল সংগঠিত করার লক্ষ্যে চলতি রমজান মাসে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্য, কূটনীতিকদের নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কয়েকটি ইফতার পার্টি করবে এনসিপি। জেলা, উপজেলা পর্যায়েও স্থানীয়ভাবে
ইফতারের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি পালন করবে দলটি। দলের নেতারা জানিয়েছেন, ১০ রমজানের মধ্যে এনসিপির নতুন কমিটি জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এরপরই দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ২৬ মার্চকে কেন্দ্র করেও দলটির রাজধানীতে সমাবেশের চিন্তা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিটি গঠন নিয়ে আমাদের সংগঠক টিম ধারাবাহিক বৈঠক করছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলো কীভাবে দলের কমিটিতে আনা যায়, সে পলিসি ঠিক করছে তারা। সেটা চলতি রমজান মাসের মধ্যেই শেষ হবে। দলের গঠনতন্ত্র তৈরির কাজও এ মাসের মধ্যে শেষ করব।’
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের শর্তপূরণকে টার্গেট করে সংগঠন গোছানো শুরু করেছে এনসিপি। নেতারা জানিয়েছেন, নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালার শর্তসমূহ মার্চের মধ্যে পূরণ করতে চায় নতুন রাজনৈতিক দলটি। এ লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠনের জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের সংগঠক টিম শনিবার থেকেই নিয়মিত বৈঠক করছে। কমিটিতে বিতর্কিত কেউ যাতে আসতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ অনুসারে, নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য যেকোনো সময়ে গণবিজ্ঞপ্তি দ্বারা দরখাস্ত আহ্বান করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তবে অতীতে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরুর পরেই নতুন দলের নিবন্ধনের আহ্বান করত ইসি। দলগুলো নিবন্ধনের জন্য ইসির কাছে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয়, অন্তত ১০০টি উপজেলায় কার্যালয় এবং প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তত ২০০ জন ভোটারের তালিকাভুক্তি থাকতে হবে। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্র, লোগো এবং পতাকার ছবি, দলের তহবিলের উৎস, ব্যাংক হিসাব জমা দিতে হয়।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন দলের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হয়, যদি দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়। তাহলে তারা আবেদন করবে বা নির্বাচন কমিশন নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন চাইতে পারে। আবেদনের ক্ষেত্রে তাদের গঠনতন্ত্রটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের গঠনতন্ত্রে অনেকগুলো জিনিস থাকতে হবে। যেমন সংবিধানপরিপন্থী কিছু থাকতে পারবে না, দলের প্রতিটি স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী থাকতে হবে, নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে হবে।
তবে নতুন দল নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম আপাতত নেই জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা যখন প্রয়োজন মনে করি, তখন নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকি। এটা নিয়ে কাজ করা শুরু করিনি এখনো।’
এনসিপির আহ্বায়ক কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দল আত্মপ্রকাশের আগে থেকেই গঠনতন্ত্রসহ দলের স্লোগান, লোগো, নির্বাচনী প্রতীক ও কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে পুরোদমে কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে দলের প্রতীক হিসেবে কলম, বই, বাঘ ও ইলিশ নিয়ে আলোচনা রয়েছে। দলের জেলা, উপজেলা কমিটি গঠন ও অফিস প্রতিষ্ঠা করে চলতি মাসের মধ্যেই নিবন্ধনের আবেদন করতে চায় দলটি বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
দলের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে দল গুছিয়ে উঠতে পারলে এপ্রিলেই স্থানীয় নির্বাচন, গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধানের দাবি ছাড়াও বিভিন্ন জনদাবিতে রাজপথে নামবে এনসিপি। বিভাগীয় সমাবেশ, লংমার্চসহ বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে দলটির মধ্যে।