
নতুন রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজকে অনেকে দল করছেন। এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সবাই ভালো ভালো কথা বলেছেন। কিন্তু রাষ্ট্র সম্পর্কে কোনো পলিটিক্যাল ফিলোসফি (রাজনৈতিক দর্শন) পাইনি।’
আজ শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এক আলোচনা সভায় রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন। ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এনআরএফ)।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ মাসের (মার্চ) মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার (অন্তর্বর্তী সরকারের) পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খালেদা জিয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন করা ছিল তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। সেটি চালু থাকলে হয়তো চব্বিশের রক্তপাত ঘটত না। আওয়ামী লীগ আবার রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করতে পারলে সেটা হবে আমাদের রাজনৈতিক কৌশলের ব্যর্থতা। তাই আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে হবে ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে।’
তরুণদের নেতৃত্বে আসা নতুন দলকে অভিনন্দন জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নতুন দলকে অভিনন্দন জানাই। আমরা চাই, গণতন্ত্রের শত ফুল ফুটুক। তবে তাদের গণপরিষদ গঠনের দাবির বিষয়টি প্রশ্নবোধক বলে মনে করি। গণপরিষদ ও সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের কথা যাঁরা বলেছেন, রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘায়িত করাই তাঁদের উদ্দেশ্য।’
স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যাঁরা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলছেন, তাঁদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। কারণ, তাঁরা জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান নিয়ে ভয় পান। চব্বিশের আন্দোলন তো স্থানীয় নির্বাচনের দাবিতে হয়নি। বিষয়টি বিবেচনা করে সবাইকে কথা বলা উচিত।’
সভায় নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজকে অনেকে দল করছেন। এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সবাই ভালো ভালো কথা বলেছেন। কিন্তু রাষ্ট্র সম্পর্কে কোনো পলিটিক্যাল ফিলোসফি (রাজনৈতিক দর্শন) পাইনি।’
এ সময় দেশের কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবীর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আজকে দু-একজন বুদ্ধিজীবী বলেন, ক্ষমতায় থেকেই তো বিএনপির জন্ম হয়েছে। তাঁরা ভুলে গেছেন, তাঁরা রাজনীতিতে একটা নতুন ন্যারেটিভ তৈরি করছেন। জিয়া অন্য মাত্রার, জিয়া একটি নতুন দর্শন দিয়েছেন। বিএনপির জন্মের সঙ্গে অন্য দলের জন্মের হাজার পার্থক্য আছে। বিএনপি একটি আলোচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করেছে। নব্বইয়ের দশকে গণতন্ত্র সংকটের মুখে পড়লে খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মশাল জ্বালিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র করেছেন।’
রাজনৈতিক মতবাদ সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃতিত্বের বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘শেখ মুজিবুর যেমনই হোক, সে সময় তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদকে পশ্চিমের পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে বাঙালি স্বায়ত্তশাসনের একটা ন্যারেটিভ তৈরি করেছিলেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোরুল্লাহ চৌধরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন রুনুসহ অনেকে বক্তব্য দেন।