Image description

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, সরকারে থেকে দলীয় সরকারের অধীনে শেখ হাসিনা নির্বাচন করতে চেয়েছিল। তা রুখে দেওয়ার জন্য আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলাম। সরকারে থেকে নির্বাচন করলে তো নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। এখন এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থেকে যদি তারা (ছাত্ররা) দল গঠন করে তাহলে এটা সরকারি দল হবে। তাহলে আওয়ামী লীগের মধ্যে এবং এই (জাতীয় নাগরিক পার্টি) দলের মধ্যে পার্থক্য কোথায়।

শনিবার বিকালে রাজধানীর বিজয়নগরের আল রাজি কমপ্লেক্সে দলের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নুর বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে যেভাবে গুটিকয়েক ব্যক্তিকেন্দ্রিক গ্লোরিফাই করা হচ্ছে, কিংবা কাউকে বিশেষভাবে ক্রেডিট দেওয়া হচ্ছে সেটা তো বাস্তবতা নয়। এই গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি-জামায়াত বিশেষ করে তরুণরা যে ভূমিকা রেখেছিল ১৮ সাল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছিল। তাদের কথা কোথাও সেভাবে বলা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘অবশ্য আমরা চাই তারা (জাতীয় নাগরিক পার্টি) ভালো রাজনীতি করুক, শুদ্ধ রাজনীতি করুক। কিন্তু সরকারে থেকে সেটা তো সম্ভব নয়। একজন দল গঠন করেছে সে পদত্যাগ করেছে, বাকি দুজন তো সরকারে রয়েছে।’

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ছাত্র উপদেষ্টাদের তদারকি কমিটি রয়েছে। সরকারের সঙ্গে কাজ তিন উপদেষ্টার আজ্ঞাবহ নেক্সাস তৈরি হয়েছে। যদিও একজন পদত্যাগ করে দুজন তো রয়েছে।

‘ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড় দশকের ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হলেও দেশি-বিদেশি অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের কারণে সেটি হয়নি। একটি নির্দিষ্ট বলয়কেন্দ্রীক সরকার গঠিত হয়েছে। যার ফলে গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আজ তাতে ফাটল ধরেছে, বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। যা এই মুহূর্তে জাতির জন্য কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। এমতাবস্থায় সরকারের থাকা তিন ছাত্র উপদেষ্টার মধ্যে একজন পদত্যাগ করে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে।’-যোগ করেন নূর।

তিনি আরও বলেন, তারুণ্যের রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদ রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণকে সবসময় উৎসাহিত করে, নতুন দলকে স্বাগত জানায়। তবে গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গুটিকয়েক ছাত্রনেতা সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অযাচিত হস্তক্ষেপে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনগণের মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। যেহেতু আন্দোলনের পরিচিত মুখ থেকে সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে সেহেতু সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ও জনগণসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আস্থা ধরে রাখতে সরকারে থাকা অন্য দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী সকল ছাত্রদের পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি।’

নুর বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা গণঅভ্যুত্থানের সরকারের ব্যর্থতা জাতিকে নতুন বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে গত ছয় মাসে গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের দুর্বলতায় গণহত্যাকারীদের পুনর্বাসন হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ জনগণের নিরাপত্তা ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়েও সংকট তৈরি হচ্ছে।’

‘গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্রিক নতুন রাজনীতি ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার জরুরি বলে আমরা মনে করছি। আন্দোলনকেন্দ্রিক সেন্টিমেন্টের জায়গায় থেকেও ছাত্রনেতৃবৃন্দ যদিও পুরোনো পথেই হাঁটে সেটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য গত ৬ মাস সেটিই অবলোকন করা গেছে। আন্দোলনকেন্দ্রিক পরিচিত ছাত্রদের তদবির, নিয়োগ, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অসংখ্য ঘটনা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।’— বলেন তিনি।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, গতকালের নতুন আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানেও জেলা প্রশাসকের নোটিশে ঢাকার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মতো বিষয় দেখা গেছে, গাড়ি সরবরাহে মালিক সমিতি ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো একক সংগঠন বা নেতৃবৃন্দের দ্বারা সংগঠিত হয়নি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সময়োপযোগী পদক্ষেপ, ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। কাজেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী চেতনার বয়ানের মতো কোনো অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক ন্যারেটিভ তৈরি না করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এ সময় কিছু দাবি তুলে ধরেন নুর। দাবিগুলো হলো—

১/ জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন।

২/ আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন।

৩/ গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ।

৪/ জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা।