
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির ভেতরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতারা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে অনুষ্ঠিত দলটির বর্ধিত সভায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা এ অভিযোগ করেন। আগামী নির্বাচনে জরিপের মাধ্যমে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নিজস্ব সেল গঠনেরও পরামর্শ দেওয়া হয়। বর্ধিত সভার ক্লোজডোর সেশনে এসব আলোচনা হয়েছে।
সৈয়দপুরের আলমগীর মাতুব্বর বলেন, যারা আমাদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে, তারাই আজ বিএনপির প্রথম কাতারে। এই হাইব্রিড যেন বিএনপিতে না ঢোকে। তাহলে সৈয়দপুরের তিনটি আসনই বিএনপিকে আমরা উপহার দেবো।
নীলফামারীর মাসুদ চৌধুরী বলেন, দলের ভেতরে এখন বিশৃঙ্খলা দেখতে পাচ্ছি। কিছু সুবিধাবাদী দেখতে পাচ্ছি। এসব সুবিধাবাদীরা ত্যাগীদের বিতাড়িত করতে চায়। দলের অনেক নেতা ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এই ত্যাগীদের কথা যাতে আমরা ভুলে না যাই।
যশোরের আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, প্রত্যেক জায়গায় হাইব্রিড ও গ্রুপিং রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রুপিং দূর করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিতে হবে।
কুষ্টিয়ার জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, আমরা অনেক মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। দলের দুঃসময়ে যারা ছিলেন না, সেসব সুবিধাবাদীরা এখন বিএনপিতে ভালো জায়গায় আছে।
দিনাজপুরের আব্দুস সালাম মিলন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। ৫ আগস্টের পর বিএনপির ভেতরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ত্যাগীদের কোণঠাসা ও বহিষ্কার করা হচ্ছে। পদ স্থগিত করা হচ্ছে। তাদের পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। তৃণমূলকে জাগাতে হবে, হাইব্রিডদের ঠেকাতে হবে।
নওগাঁর মহাদেবপুর এলাকার রবিউল আলম বলেন, আমরা আন্দোলন করে দলকে সংগঠিত করেছি। এখন সেটা এককভাবে দাবি করা হচ্ছে! সেটা আমরা মেনে নিতে চাই না। আর আমরা সেই নেতৃত্ব দেখতে চাই না, যারা আন্দোলন দেখলেই পালিয়ে যেতে চায়।
টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকার জাকির হোসেন সরকার বলেন, যারা গত ১৫ বছর ছিল না তারা এখন আমাদের ঘরে ঢুকে ঐক্য বিনষ্ট করতে চাচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে।
পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুন নাহার খানম বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি টিকে থাকতে পারবে কি না, আমাদের প্রতিপক্ষ যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, সেটা রোধ করার ওপর নির্ভর করছে। প্রতিপক্ষ মসজিদে বসে রাজনীতি করবে, আর আমরা অফিস ভাড়া করে রাজনীতি করবো। সুতরাং মসজিদে বসে রাজনীতি চলবে কি চলবে না- তা অন্তর্বর্তী সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ভোলার মো. মফিজুর রহমান মিলন বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসীর জায়গা হবে না। বিএনপি যাতে আওয়ামী লীগের দোসরদের জায়গা না হয়।
জামালপুরের আতিকুর রহমান সাজু বলেন, জুলাই-আগস্টে যারা আন্দোলন করেছেন তারা আমাদেরই সন্তান। তারা আওয়ামী লীগের দোসরদের কেউ নয়। তাই ছাত্রদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়া উচিত। আর দেশে এখন ষড়যন্ত্র চলছে। এজন্য বিএনপি’র কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগঠনকে চাঙ্গা করতে হবে। যেসব জায়গায় অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি নেই, সেসব জায়গায় কমিটি দিতে হবে। যেসব জায়গায় বিএনপির কমিটি নেই, সেসব জায়গায় বিএনপির কমিটি দিতে হবে।
জামালপুরের জহিরুল ইসলাম পিন্টু বলেন, ৫ই আগস্টের পর নব্য বিএনপি হয়েছে। তাদের জন্যই বিএনপির বেহাল দশা। আর মসজিদ ও মাদরাসার কমিটি নিয়ে ঝগড়া হয়, এগুলো থেকে সরে আসতে হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, দেশে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। সুতরাং আপনি (বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান) নিজস্ব সেল ও জরিপের মাধ্যমে মনোনয়ন দেবেন। তাকেই মনোনয়ন দেবেন যার অবস্থান সবচেয়ে ভালো হবে। আর যারা দলের ক্ষতি করবে, গোপন সেল করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ নিন।