
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রূপ বদল করে অনেকেই হয়েছেন ছাত্রদলের স্বঘোষিত নেতা। আগে ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিল করলেও এখন তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়মিত ছাত্রদলের স্লোগান দিচ্ছেন। কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য সদস্য ফরম পূরণ করে জমাও দিয়েছেন নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রদলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকলেও শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নিজেকে জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে শোডাউন দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এছাড়াও কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য জেলা বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে রাখছেন নিয়মিত যোগাযোগ।
তবে অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রদলের এসব নতুন নেতৃত্বের অধিকাংশই ইতোপূর্বে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে থাকাকালীন বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো দেখা মিলছে।
এদিকে, গতকাল রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ছাত্রদলের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সদস্য ফরম বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে নির্বাচনের ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে। কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারীরা করছেন বিভিন্ন নেতার কাছে দৌড়ঝাঁপ।
সাম্প্রতিক একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রত্যাশী মাহমুদুল হাসান রাকিবকে ছাত্রলীগের ব্যানারে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে মিছিল করতে। এছাড়াও তাকে ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীর গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে চিনেন সবাই। সে সময়ে তাকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
অন্যদিকে নিজেকে ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী শফিকুল ইসলামকে ইতোপূর্বে ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিলে দেখা যায়। সর্বশেষ টুঙ্গিপাড়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক ইনান আসলে তাদের সঙ্গে দেখা করতে যান কমিটির জন্য।
ছাত্রদলের আরেক সক্রিয় কর্মী শাহজাহানকে ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেখা যায় এবং পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। একইভাবে ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ও বর্তমান ছাত্রদল নেতা জহিরুল ইসলাম জহিরকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে দেখা যায়।
এছাড়াও ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী মেহেদী হাসান সাকিব, সাব্বির হোসেন, হেদায়েতুল সানি সহ বেশ কয়েকজন রূপ বদল করে হয়েছেন এখন ছাত্রদলের কর্মী।
ছাত্রলীগ নেতা চন্দ্রনাথ মজুমদারের ডান হাত হিসেবে পরিচিত মো. জুয়েল হোসেন ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। এমনকি দেখা করছেন ছাত্রদল ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে।
ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ছাত্রদলের সদস্য হওয়ার ফরম পূরণ করেছি। আমি ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মিথ্যা লেখালেখি হচ্ছে।
পূর্বে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশী মাহমুদুল হাসান রাকিব বলেন, আমি যখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হই তখন আমাদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় ছাত্র ছাত্র সংসদ এই ক্যাম্পাসে ভালো একটা অবস্থান ছিল। সেসময় আমি ময়মনসিংহ ছাত্র সংসদের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলাম। তখন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কিছু বড় ভাই ছিল যারা অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ছাত্রলীগের নেতা ছিল। বিভাগীয় সংগঠনে আমার একটি বড় সার্কেল ছিল। প্রথম বর্ষের হওয়ায় বড় ভাইরা মাদকবিরোধী মিছিল বলে আমাদের নিয়ে যায়। মিছিলে এক পর্যায়ে তারা আমাকে সামনে দিয়ে দেয়। আর আমি যদি অরিজিনালভাবে ছাত্রলীগ করতাম তাহলে জীবনের রিস্ক নিয়ে গোপালগঞ্জের মতো জায়গায় আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রদল করতাম? আমিতো নতুন ছাত্রদল করি না। আমি আওয়ামী লীগের আমল থেকে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত আছি।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের ছাত্রদলের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও কমিটিতে পদ পাওয়ার বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেক্ষক মশিউর রহমান সরকার বলেন, আমরা সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই দায়িত্ব দিব। সবকিছু এত সহজেই কেউ পাবে না। এত বছর আমরা কষ্ট করেছি আর কেউ দুইদিন রাজনীতি করে লোকজন দেখিয়ে পদ পাবে তা হবে না। ইতিপূর্বে কেউ কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল কিনা সবকিছু যাচাই করেই দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই ক্ষেত্রে আপনারাও সহযোগিতা করবেন আশা করি।