Image description

বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দলের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে সম্ভবত ফেব্রুয়ারিতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির হাত ধরে দলটি আত্মপ্রকাশ করবে। প্রথম আলো, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এবং বিবিসি বাংলার মত সংবাদ মাধ্যমের দাবি, নতুন রাজনৈতিক দলের ঠিকানা ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ। ২৬শে ফেব্রুয়ারি সম্ভবত প্রতিষ্ঠা দিবস।

১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশের ভোটে প্রতিদ্বন্দীতা করছে মূলত দুটি দল। আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কমবেশি ৫০ টিরও ওপরে রাজনৈতিক দল থাকলেও, ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে বরাবরই থেকে এসেছে এই দুটি দল। এবারে বাংলাদেশে নতুন যদি কোন দলের আবির্ভাব হয়, তাহলে সেটা হবে ৫৫ তম রাজনৈতিক দল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, “বেসিক স্লোগান হবে, বেসিক থিম হবে, স্টুডেন্ট ফার্স্ট এবং বাংলাদেশ ফার্স্ট।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দীর্ঘ সময় ধরে এখানে ক্ষমতায় ছিল। তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। কিন্তু এর বাইরে গিয়ে জনগণের একটা বিশাল অংশ আছে, যারা বিএনপি-আওয়ামী লীগ-জামায়াত-জাতীয় পার্টি এর বাইরে গিয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তির আবির্ভাব তারা দেখতে চায়।”

সংগঠন কাঠামোটি কেমন হবে! প্রাথমিকভাবে তিনটি দেশের রাজনৈতিক দলের কথা মাথায় রাখা হয়েছে। ভারতের আপ, পাকিস্তানের তেহরিক এ ইনসাফ এবং তুরস্কের জাস্টিস এবং ডেভলপমেন্ট পার্টি, এই তিন দলের মতাদর্শের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হবে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দল।

২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা। এক বছরের মধ্যেই তুরস্কের ক্ষমতায়। ভারত, চীন এবং আমেরিকা বাদে, তুরস্কের জাস্টিস এবং ডেভেলপমেন্ট পার্টি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, তুরস্কের এই দল আসলে একটি ইসলামপন্থী দল। দল গড়তে কথা হয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমী পার্টিকে নিয়েও। আম আদমী পার্টি দিল্লিতে সরকারে বহুদিন ছিল। পাঞ্জাবেও তারা সরকারে ছিলেন। ইমরান খানের দল পাকিস্তানের তেহরিক ই ইনসাফ। এই দলের মতাদর্শকেও মাথায় রাখা হচ্ছে।

 

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন আরো বলেন, “এখনো পর্যন্ত প্রধান নেতা কে হবেন, সেটা আমরা ঠিক করিনি। আমরা যেটা চাচ্ছি, সেটা হলো যে আগে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা হোক। যে আমাদের আদর্শের জায়গাটি কি হবে। আমরা একটি মধ্যমপন্থী, সেন্টিস্ট রাজনীতির কথা আমরা বলছি। আমরা না মধ্য-ডান, না মধ্য-বাম, না ডান, না বাম, এই যে বাইনারি গুলো আছে, বিভাজন গুলো আছে, সেগুলোতে আমরা যেতে চাই না। আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নে এক থাকতে চাই।”

চূড়ান্ত হয়নি নাম। তবে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদে নাহিদ ইসলামের অভিষেক কার্যত পাকা। নাহিদ বর্তমানে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের টেলিকম এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা।

 

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাইরে যারা আছে বৈষম্য বিরোধী নাগরিক কমিটি, তারা একটা রাজনৈতিক দলের উদ্যোগের কথা বলেছে অনেক আগেই। ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেই এবং আমিও আমার জায়গাতে বলেছি যে, সেই দলে হয়তো যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আমার থাকতে পারে। কিন্তু সেটা হলে, আমি সরকার থেকে এটা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেই সেটি করব।”

 

নাহিদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন আখতার হোসেন, আলী এহসান জুনায়েদ, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহর মত ছাত্রনেতারা। দলের নাম এবং প্রতীক ঘোষণা করার আগে, অনলাইনে অন্তত দু লক্ষ লোকের কাছ থেকে জনমত সংগ্রহ করা হয়েছে।

সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে পারে সর্বোচ্চ ২০০ জন। তবে নতুন দল তৈরি হওয়ার পরেও রেখে দেওয়া হতে পারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটির মত সংগঠনকেও। তারা আগামী দিনে বন্ধু সংগঠন হিসেবে সরকারের ছায়ার মতো কাজ করবে।