Image description
5

সাধারণত ভুলক্রমে পণ্য এলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমতি নিতে বিভিন্ন শাখায় দিনের পর দিন ঘুরতে হয়; কিন্তু পতিত স্বৈরাচার সরকারের সাবেক এমপিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ি ফেরত পাঠাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে এনবিআর। এরই মধ্যে নীলফামারী-৪ আসনের সাবেক এমপি সিদ্দিকুল আলমের ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ফেরতের অনুমতি দিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া দিনাজপুর-১ আসনের মুহাম্মদ জাকারিয়া ও সংরক্ষিত আসনের নাসিমা জামান ববির গাড়িও ফেরত যাচ্ছে। তবে প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক এমপি কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়িটি। আরও কয়েকজন এমপির গাড়ি ফেরতের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এসব এমপি আত্মগোপনে থাকলেও তাদের প্রতিনিধিরা কাজ করে দিচ্ছেন। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা দিনাজপুরের এক সাবেক এমপির গাড়ি বিদেশে ফেরত পাঠাতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনাপত্তির জন্য আবেদন করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড নবী কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে বিদেশে ফেরত পাঠানো বা পুনরপ্তানির অনুমতি দিয়েছে এনবিআর। এ ছাড়া আরও সাবেক তিন নেতার গাড়ি ফেরতের প্রক্রিয়া শেষ করেছে এনবিআর। এর মধ্যে রয়েছেন দিনাজপুরের সাবেক এমপি মুহাম্মদ জাকারিয়া ও নীলফামারীর সিদ্দিকুল আলম। তবে সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি নাসিমা জামান ববির শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি হওয়া গাড়িটি রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পতিত সরকারের সাবেক এই এমপিদের গাড়ি ফেরতের সুবিধা করে দিতে কেন আগ্রহী এনবিআর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শীর্ষ কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, বিদেশ থেকে কোনো পণ্য বাংলাদেশে আসার পর এটা বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। আর যেসব গাড়ি ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে এই গাড়িগুলোর দাম বাবদ কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। তবে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে ফেরত পাঠানো হলেও পতিত সরকারের সাবেক এমপিদের এই সুবিধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে এই প্রশ্ন উঠতে পারে। গাড়িগুলো নিলামে তোলার পর বিক্রি হচ্ছে না। তাই বিদেশে ফেরতের অনুমতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে এনবিআর। এ ছাড়া দেশের বাইরে এসব গাড়ি না পাঠালে এলসি করা ব্যাংকগুলোর এলসি বিদেশি প্রতিষ্ঠান নেবে না বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

মোংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার ম. সফিউজ্জামান কালবেলাকে বলেন, শুল্কমুক্ত সুবিধায় গত বছরের ১৭ জুলাই জাপান থেকে চারটি প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি আমদানি করা হয়। তার মধ্যে একটি গাড়ি সরবরাহকারী দেশ জাপানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আরও তিন এমপির গাড়ি ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। এরমধ্যে এক নারী এমপির গাড়ি রয়েছে, নিলামে যার বিড হয়েছে। আর বিদেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়টি যাচাই-বাছাই চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপিদের ল্যান্ড ক্রুজার ছাড়িয়ে নিতে দিতে হবে মোটা অঙ্কের শুল্ক। কারণ সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তিন থেকে চার গুণ শুল্ক দিয়ে এসব গাড়ি নিতে কেউ আগ্রহ দেখায়নি বলেও যোগ করেন তিনি।

জানা গেছে, সামরিক সরকার এইচ এম এরশাদ এমপিদের খুশি করতে ১৯৮৭ সালে প্রথম শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা দেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধানটি বাতিল করলে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার চালু করে। এতে গত ১৫ বছরে সরকার রাজস্ব হারায় কয়েক হাজার কোটি টাকা।