Image description

তিন মুখ্য ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মতভিন্নতা প্রকটিত হচ্ছে। স্পস্ট হচ্ছে টানাপড়েন। সংস্কারের সময়সীমা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং আনুপাতিক হারে ভোটের প্রসঙ্গে কার্যত বিপরীত অবস্থান নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাক্যুদ্ধ চলছে একসময়ের রাজনৈতিক মিত্র দুই দলের নেতাদের মধ্যে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি কোনোভাবেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচন চায় না। তারা মনে করে, এই মুহূর্তে জাতীয় অগ্রাধিকার হচ্ছে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। স্থানীয় সরকার নির্বাচন এই মুহূর্ত বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। অতি জরুরি কিছু সংস্কার করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া উচিত। অন্যদিকে জামায়াত চায়, জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হোক। তাদের মতে, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা বেশি জরুরি। এরই মধ্যে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে অব্যাহত চাপ দিয়ে এলেও জামায়াত এগোচ্ছে ভিন্ন কৌশলে। দলটি প্রয়োজনীয় ও অতি জরুরি সংস্কার প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচন চায় জাতীয় সংসদের ভোট। এজন্য জামায়াত প্রয়োজনীয় সময় দিতে চায় সরকারকে। এছাড়া সংখ্যানুপাতের ভিত্তিতে আসন নির্ধারণের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে জামায়াত। বিএনপি এই ব্যবস্থার বিপক্ষে। বৃহস্পতিবার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক।

তাই জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী জামায়াত চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। অন্যদিকে, এ বিষয়ের একেবারে উলটো বক্তব্য বিএনপির। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, যত দ্রুত নির্বাচন ততই রাজনীতি সহজ হবে। বাংলাদেশ স্থিতিশীল হয়ে আসবে। ইসির সঙ্গে সাক্ষাতে জামায়াত সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চেয়েছে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফখরুল বলেন, এটা (সংখ্যানুপাতিক ভোট) আমরা পুরোপুরি বিরোধী, একেবারে জোরালোভাবে বিরোধী। আনুপাতিকভাবে নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থাকে আমরা সমর্থন করব না। কারণ এখানকার মানুষ এটাতে অভ্যস্ত না। এরকম ভোটের প্রশ্নই উঠতে পারে না। তবে সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ চায় না বিএনপি। তাদের দাবি, সংস্কার নির্বাচনের পরেও করা যাবে, আগেও করা যাবে। সংস্কার একবারে সম্ভব নয়। সংস্কার কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। তাই সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ না করে নির্বাচনের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে সংস্কার করতে হবে। সেই সঙ্গে সংস্কার কমিশনের কোনো প্রস্তাব যেন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়েও নির্বাচন কমিশনের পাশে থাকবে বিএনপি। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ৩০০ আসনে নির্বাচন করার সক্ষমতা জামায়াতে ইসলামীর আছে। আমরা প্রার্থী প্রস্তুত করে ফেলেছি। প্রাথমিকভাবে প্রার্থীও চূড়ান্ত করা হয়েছে। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর); আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হারের নির্বাচনব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেছি। বিশ্বের ৬০টি দেশে এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত রেখে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই পদ্ধতিটি উপযোগী। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ৯১ (এ) অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের দাবিও করা হযেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল। এছাড়া রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নিবন্ধন আইনে কঠিন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এ কঠিন শর্ত পূরণ করে (নিবন্ধন করা) রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। এ আইনটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা বাতিল করতে হবে। দল ও রাজনীতি করার অধিকার সবার।