Image description
 

ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দরজা আওয়ামী লীগের নেতাদের জন্য বন্ধ করলেও নতুন হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম কোরিয়া ও মেক্সিকোতে শেখ মুজিব বন্দনায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। কোরিয়া ও মেক্সিকোতে রাষ্ট্রদূত থাকা অবস্থায় তার আওয়ামী প্রীতি এবং শেখ মুজিব বন্দনা নিয়ে ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে শেখ হাাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আবিদা ইসলামকে ব্রিটেনের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয় বর্তমান সরকার। তার মতো একজন শেখ মুজিবপ্রেমি বিতর্কিত ব্যক্তিকে কেন ব্রিটেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার নিয়োগের খবর পেয়ে প্রবাসী অধিকার রক্ষা পরিষদসহ ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের অনেক সামাজিক সংগঠন সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে ই-মেইলও করেছিল। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ এবং ই-মেইলে কাজ হয়নি। আবিদা ইসলামকেই সরকার ব্রিটেনে পাঠিয়েছেন।

কোরিয়া ও মেক্সিকোতে রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন নিজেকে শেখ মুজিব প্রচারণায় নিয়োজিত রেখেছিলেন আবিদা ইসলাম। কোরিয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী সে দেশের ভাষায় প্রকাশ করেছেন তিনি। আরো একধাপ এগিয়েছিলেন মেক্সিকোতে।

মেক্সিকোতে অসমাপ্ত আত্মজীবনী স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন মেক্সিকোতে। দেশটির মিউজিয়ামে স্থাপনের নিরন্তর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মেক্সিকো সরকারের অনুমতি পেতে ব্যর্থ হয়ে চেষ্টা করেছিলেন স্থানীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থাপন করতে। এতেও অনুমতি পেতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের বাসার সামনেই স্থাপন করেছিলেন সেই মূর্তি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে আওয়ামী লীগের নেতারা গেলে তাদের হাইকমিশনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমন কী এক পর্যায়ে পুলিশ ডেকে হাইকমিশনের সামনে থেকে আওয়ামী লীগের নেতাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূত থাকা অবস্থায় একই আবিদা ইসলাম ভিন্ন মতের রাজনীতিক চিন্তার লোকদের জন্য অ্যাম্বাসির দরজা বন্ধ রাখতেন। আওয়ামী লীগের দলীয় বৈঠকেও যোগ দিতেন নিয়মিত। আওয়ামী লীগের অনেক জুম মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার ছবি এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে। অথচ, এখন তিনি আবার লন্ডনে আওয়ামী লীগের জন্য দরজা বন্ধ করে কী বার্তা দিচ্ছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। তিনি কি রাতারাতি খোলস পাল্টে স্রোতে গা ভাসাতে চাচ্ছেন, এমন প্রশ্ন উঠছে কমিউনিটির বিভিন্ন মহলে।

হাইকমিশনে গিয়ে আবিদা ইসলামের সঙ্গে দেখা করে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল কোরিয়া ও মেক্সিকোতে শেখ মুজিব বন্দনা এবং মুজিব মূর্তি প্রসঙ্গে। জবাবে তিনি বলেন, তিনি নিজের ইচ্ছায় কিছু করেননি।

সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন। পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন তার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ আনছেন তারা কেন তখন সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা প্রতিবাদ করেনি। শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি বাংলাদেশ থেকে নিয়ে মেক্সিকোতে স্থাপনের প্রসঙ্গেও তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, এটা কোন বছর নিয়েছি? সময়টা কী ছিল? তখন বলা হয়েছিল, আপনিই বলুন সময়টা কখন ছিল।

তিনি জানান, সময়টা ছিল মুজিববর্ষ, এটা বুঝতে হবে। এ প্রসঙ্গে আরো জানালেন, মেক্সিকোতে বাংলাদেশ সম্পর্কে স্থানীয় মানুষের ধারণা নেই। তারা মনে করেন বাংলাদেশ আফ্রিকা মহাদেশের কোনো একটি রাষ্ট্র। বাংলাদেশ কোন জায়গায় অবস্থিত সেটাও মেক্সিকোর বেশিরভাগ মানুষ জানে না। বাংলাদেশকে মেক্সিকোর মানুষের সামনে পরিচিত করতে মুজিববর্ষে শেখ মুজিবের মূর্তি নিয়ে স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন।

তিনি জানান, মেক্সিকোর মেমোরিয়াল একটি জায়গায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাতীয় নেতাদের ম্যুরাল রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের গান্ধী, পাকিস্তানের জিন্নাহ, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলাসহ বিভিন্ন জাতীয় নেতার ম্যুরাল রয়েছে। তাই বাংলাদেশকে পরিচিত করতে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল সেখানে স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই জায়গায় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এমন কি লোকাল কাউন্সিলের কোনো একটি দৃশ্যমান জায়গায় স্থাপনের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, সেটাও মিলেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাই এক পর্যায়ে তার বাড়ির সামনেই স্থাপন করা হয়েছিল।

কোরিয়ায় আওয়ামী বিরোধী লোকদের অভিযোগ হচ্ছে, তিনি দূতাবাসকে ব্যবহার করে ওই দেশের পুলিশের কাছে তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করতেন। পুলিশকে জানানো হতো ওরা বিএনপির সন্ত্রাসী। কোরিয়ান প্রবাসী ছিলেন জাহিদ। তিনি আমার দেশকে বলেন, কোরিয়ান পুলিশ তাকে আটক করেছিল সন্ত্রাসী হিসেবে। তিনি এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন তাকে আটক করা হলো। তখন পুলিশ তাকে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তাদেরকে জানানো হয়েছে জাহিদ বিএনপির সন্ত্রাসী। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবিদা ইসলাম পাল্টা প্রশ্ন করেন, কোরিয়ার পুলিশ আমাদের কথা শুনবে কেন?

হাইকমিশনের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের

ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরাই এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। অনেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও হাইকমিশনের পক্ষ থেকে তাদের রেখে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অনুরোধ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে পাসপোর্ট নবায়ন ও নতুন পাসপোর্ট আবেদন নিয়ে বিড়ম্বনার অন্ত নেই। ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করে রেফারেন্স নম্বর নিতে হয় পাসপোর্ট নবায়ন ও নতুন পাসপোর্টের জন্য। কিন্তু অনলাইনে আবেদন করলে দেখা যায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার কোনো তারিখ খোলা নেই। জুন পর্যন্ত ওয়েবসাইটে তারিখ নেওয়ার সময় দেখানো হয়। কিন্তু দিনের পর দিন চেষ্টা করেও জুনে সময় পাওয়া যায় না। অনেকে বাধ্য হয়ে চেষ্টা করেন জুনের পর সময় নিতে। কিন্তু জুনের পর আর সামনের মাসগুলোতে প্রবেশ করাই যায় না ওয়েবসাইটে।

পাসপোর্টের ক্ষেত্রে এটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা কি না, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। পাসপোর্টের এই বিড়ম্বনায় ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের মধ্যে। একই অবস্থা বিরাজ করছে এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রেও। প্রশ্ন উঠেছে, সাধারণ মানুষের পাসপোর্ট ও এনআইডিসহ জরুরি প্রয়োজনে কাজে না এলে হাইকমিশনের দায়িত্বটা কি! অনেকে অনলাইনে কোনো সুরাহা না পেয়ে সরাসরি হাইকমিশনে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করারও সুযোগ পাচ্ছেন না।

এসব সমস্যার বিষয়ে আবিদা ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, এখানে লোকবল ও লজিস্টিকের অভাব রয়েছে।