Image description
 

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর গাজীপুরের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলায় আহত কাশেম খানের মৃত্যুতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। কাশেমকে হত্যার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাতে ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, ফেনী চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুরসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরে বিক্ষোভ মিছিল করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে এবং সাড়ে ১১টায় গাছা থানার বোর্ডবাজারের আল-হেরা সিএনজি পাম্প স্টেশন মাঠে পৃথক জানাজা শেষে কাশেম খানকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ছয়মাস পরেও শহীদের মিছিল থামেনি। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এতদিনেও ফ্যাসিবাদের কাউকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। যতদিন বিপ্লবীরা বেঁচে থাকবে ততদিন আওয়ামী লীগের কবর না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হবো না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব মহসিন জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় মো. কাসেমসহ গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার সাইন বোর্ড কামারজুরি এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে শুভ শাহরিয়া (১৬), শরীফপুর এলাকার মেহের আলীর ছেলে ইয়াকুব (২৪), টঙ্গী পূর্ব থানার মধুমিতা রোড এলাকার গণেশ ঘোষের ছেলে সৌরভ (২২) এবং সদর থানার জোড়পুকুর এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে হাসান (২২) ও অপর ২জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে মো. কাশেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল ৩টায় মারা যান। মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর আঘাত রয়েছে তার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরীর আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, ৫ আগস্টের পর আজকে এখানে দাঁড়িয়ে বলতে হচ্ছে, আমরা এখনো পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করিনি। আওয়ামী লীগের ইতিহাস রক্তচোষা ইতিহাস । ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা ও গত ১৭ বছর শত শত লাশ হত্যা করেছে এবং গুম করেছে। আমরা মনে করেছিলাম ৫ আগস্টের পরে শেখ হাসিনার রক্তচোষা বন্ধ হয়ে যাবে। লাশের রাজনীতি করা আওয়ামী লীগের স্বভাব। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি ।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে কাশেমের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লিখেছেন, গাজীপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত কাশেম শহীদ হয়ে গেছেন। প্রতিবিপ্লবের প্রথম শহীদ আমার এই ভাই। ওই পোস্টে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে লিখেছেন, ‘ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে কে বা কারা লুটপাট করছে এমন খবর দেওয়া হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। খবর পেয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী লুটতরাজ ঠেকানোর জন্য মোজাম্মেল হকের বাড়িতে যান। এসময় তাদের আটক করে মাইক দিয়ে ডাকাত পড়েছে এমন খবর ছড়ানো হয়। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আটক করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর নির্মম হামলা চালায়। রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ২০ জনকে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় কাশেম খান সিয়ামসহ গুরুতর আহত পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় ।

নিহত কাসেমের বাড়ি গাজীপুর জেলার গাছা থানার ভোটবাজার দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত হাজী জামালের ছেলে। মা-বাবার অবর্তমানে কাশেম সৎ মা এবং ফুফুর কাছে মানুষ হয়েছে।