বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাই সাম্প্রতিক আন্দোলনে ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছেন দলের ওপর। তারা বলছেন, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩'র 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি সাধারণ মানুষের মধ্যে সাড়া থাকার পরও সফল হয়নি। সাম্প্রতিক কথাবার্তা শুনে মনে হয়, বেগম খালেদা জিয়াও এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তাই তিনি নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার আগে দল গোছানোর কথা বলেছেন প্রকাশ্যে। বিএনপি নেতারা এই কথাগুলো বুঝে বলছেন, না কি না বুঝে বলছেন? তারা কি ভেবে দেখেছেন যে, তাদের বক্তব্য শাসক দল আওয়ামী লীগের বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে? সরকার ও সরকারি দলের পক্ষ থেকে অবিরাম বলা হচ্ছে, সরকারি বা সরকারি দলের কোনো কৌশল বা বাধার কারণে নয়, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অক্ষমতার জন্যই বিএনপি আন্দোলনে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তারা উঁচু গলায় বলছেন, সক্ষমতা ও যোগ্যতার অভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পেরে আন্দোলনে অসফল বিএনপি পরাজয়ের ভয়ে নির্বাচন থেকেও পালিয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা তো এটা নয়। এ দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস বেশ প্রেরণাদায়ক। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই এই ভূ-খণ্ডের জনগণ তাদের রুটি-রুজির অধিকারসহ অনেক গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে এনেছে। আবার এটাও ঠিক যে, যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্ব এবং ত্যাগ-তিতিক্ষা ছাড়া কোনো আন্দোলন সফল হয়নি। অনেক জীবন বিসর্জন ও রক্তের পলিতে উর্বর হয়েছে এই গাঙেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের আন্দোলনের ক্ষেত্র। বিএনপিতে এ রকম যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্ব এখন নেই বলে জনগণের মধ্যে যেমন ধারণা আছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তা না হলে পুরনো দল নতুন করে গোছানোর কথা তিনি বলবেন কেন? এটা ঠিক যে, বিএনপির বিভিন্ন জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। অনেক জেলায় বছরের পর বছর কোনো সম্মেলন হয় না। কালে-ভদ্রে কোথাও কোনো সম্মেলন হলেও ওই সব সম্মেলনে রাজনৈতিক দলের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কোনো কমিটি হয় না। বিএনপিসহ সব দলের গঠনতন্ত্রে কিন্তু কাউন্সিলর-ডেলিগেটদের, অর্থাৎ তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি করার কথা বলা আছে_ ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। কিন্তু বড় দলগুলো গঠনতন্ত্রের কেয়ারই করে না। আরও লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, যে ইউনিয়ন, থানা বা জেলার কিমিটি তা কিন্তু স্ব স্ব এলাকায় হয় না। যেখানে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, সেখানে নেতারা যান, এক-দেড় ঘণ্টা বক্তৃতাবাজি হয়, কারও মতামত নেওয়া হয় না, স্থানীয় নেতারা বক্তৃতা দেওয়ারও সুযোগ পান না। অতিথি নেতারা ভীষণ ব্যস্ত! এই বুঝি ওনাদের ট্রেন হুইসেল দিয়ে ফেলল। বেগম জিয়া যেন ঢাকায় বসে আছেন ওই নেতাদের থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ নেওয়ার জন্য; সময়মতো পেঁৗছতে না পারলে সর্বনাশ! তাদের ছাড়া যে নেত্রীর একদমই চলে না- ভাবখানা এমন। জরুরি কাজের তাড়া, তাই কমিটিটা আর করে যেতে পারেন না। থানা কমিটিও ঘোষণা হয় ঢাকা থেকে- কেন্দ্র থেকে। দ্বিতীয় যে অভিযোগটি প্রায়শ শোনা যায়, তা হচ্ছে কমিটি বেচাকেনার অভিযোগ। টাকা দিয়ে নাকি নেতা হওয়া যায়। এমন দুর্বলতা বিএনপিতে যেমন আছে, আওয়ামী লীগেও আছে; এমনকি জাতীয় পার্টিতেও। ফলে বিরোধী দল হিসেবে আন্দোলন শানানোর ক্ষেত্রে বিএনপির জন্য এটা একটা দুর্বলতা তো বটেই। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগেও এ দুর্বলতা ছিল। ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে কত এঙ্পেরিমেন্টই না তারা করেছে। কিন্তু সরকারবিরোধী আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতা এই একটি কারণের ওপরই নির্ভর করে না। যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নীতি ও কৌশল থানা, জেলা বা মহানগর কমিটি বা নেতৃত্ব নির্ধারণ করেন না। এটা নির্ধারিত হয় জাতীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। আমাদের দেশে জাতীয় ভিত্তিক যে কোনো আন্দোলনের সাফল্য নির্ভর করে রাজধানী ঢাকায় এর সফলতার ওপর। ঢাকায় সব দলেরই একটি কমিটি থাকে। কেন্দ্রের মূল নেতৃত্বও থাকেন ঢাকায়। রাজনৈতিক দল কোনো ঠিকাদারি ফার্ম নয় যে, আন্দোলনের কন্ট্রাক্টটা বিভিন্ন স্থানীয় ফার্মের (কমিটি) কাছে সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়ে দেওয়া যায় এবং কাজ ভালো না হলে কন্ট্রাক্ট বাতিল করে বা জরিমানা করে পুষিয়ে নেওয়া যায়! একটি দলের জাতীয় বা গণস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দাবির আন্দোলন, গণতন্ত্রের সংগ্রাম, সুশাসনের জন্য লড়াই কোনো কমিটি বিশেষের একার লড়াই নয়- এটা সমগ্র দলের লড়াই। যে লড়াই-সংগ্রাম সফল করার দায়িত্ব জাতীয় নেতৃত্বের কোনো অংশেই কম নয়- যারা ঢাকায় থাকেন।
এ প্রসঙ্গে আমার লেখার শেষ প্রান্তে আবার কিছুটা আলোকপাত করব। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে কোনো ভুল ছিল বলে আমি মনে করি না। এ ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সঙ্গে দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই একমত বলে বোঝা যায়। উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের ফলাফলের উদাহরণ টেনে কেউ কেউ বলছেন, দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েও বিএনপি-জামায়াত উপজেলা নির্বাচনের মতোই ফলাফল করত! উপজেলা নির্বাচন এখনো শেষ হয়নি। এই লেখা যখন তৈরি করছি তখন তৃতীয় ধাপ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। ভয়ানক হাঙ্গামার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। শাসক লীগ কোথাও কোথাও যা খুশি তা করছে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সহায়তায়। এর আগে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে সরকারের যে অসহিষ্ণু ভাব লক্ষ্য করা গেছে, এই তৃতীয় ধাপে তার চেয়েও বেশি অসহিষ্ণুতা সরকার দেখাবে ইতোমধ্যে সে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই নির্বাচনে সব উপজেলায় হেরে গেলেও লীগ সরকার ক্ষমতা হারাবে না। তারপরও তারা চর দখলের মতো যাবতীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন কাজ করছে সরকারের 'পালের গোদার' মতো। সরকারের কু-কর্মের সাক্ষী না থাকার জন্যই বোধহয় অনেকটা পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিরোধী দল তো অভিযোগ করছে 'উপজেলা দখলের জন্য' সরকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে যেখানে ক্ষমতা হারানোর ষোলআনা ভয় ছিল, লীগ সরকারের অধীনে সেই নির্বাচনে অংশ নিলে বিরোধী দল দাঁড়াতে পারত ভোটকেন্দ্রে? বিশ্বাস হয় না।
কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সেই নীলনকশার নির্বাচন বন্ধ করতে পারেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা বটে। তবে এই ব্যর্থতা বিশেষ কোনো কমিটির নয়, এই ব্যর্থতা সমগ্র দলের। দলের কোনো প্রাণ নেই। এটা নির্জীব। দলের প্রাণ দলের নেতৃত্ব। সেই অর্থে এই ব্যর্থতার দায় দলের নীতিনির্ধারকদের, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এবং সর্বোপরি বেগম খালেদা জিয়ারও। কিন্তু আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য দলের দুর্বলতাই একমাত্র কারণ নয়, প্রধান কারণ তো নয়-ই। প্রধান কারণ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে লীগ সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রশক্তির ব্যবহার কিংবা অপব্যবহার। আওয়ামী লীগ এর আগেরবার যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে এতটা নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেনি- এবার যা করছে। এর আগের সরকারবিরোধী আন্দোলনে গুম-আতঙ্ক ছিল না, বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ডের ভয় ছিল না। এবার আন্দোলনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটকে এর স্বাদ নিতে হচ্ছে। আর মামলা? বিএনপির কাছেও এর সঠিক হিসাব নেই। বাংলাদেশে এর আগে কোনো সরকারের আমলেই প্রতিপক্ষ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এত হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে বলে কারও জানা নেই। সরকার তার প্রতিপক্ষ দলনে-দমনে যে কৌশল প্রয়োগ করছে, সেই নিষ্ঠুর কৌশলের রাজনৈতিক মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের মনে রাখা ভালো যে, আওয়ামী লীগ যেমন কর্মীনির্ভর দল, বিএনপি তেমন দল নয়। বিএনপি হচ্ছে সমর্থকনির্ভর দল। বিএনপির সমর্থকরা আবার নিরীহ প্রকৃতির, মারদাঙ্গা মার্কা নয়। কিন্তু এই সমর্থক গোষ্ঠী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যখন বেপরোয়া হয়ে যায়, অজানা সাহসে জেগে ওঠে, তা হয় ভয়ঙ্কর! এই শক্তিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বা অন্য কোনো শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা যায় না এবং তখন আন্দোলন সাফল্যের আলো দেখে। বিএনপি সেই জনশক্তিকে জাগাতে পারেনি, তাদের যন্ত্রণাবিদ্ধ ক্রোধকে উসকে দিতে পারেনি। বিএনপি এ পর্যন্ত যত আন্দোলন করেছে তার মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, আরাফাত রহমান ইস্যু যত ছিল, জনগণের সমস্যা-সংকট, দেশের সমস্যা-সংকটের ইস্যু তত ছিল না। পর্যবেক্ষকরা বলেন, গণস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে বৃহত্তর কোনো আন্দোলন গড়ে উঠলে বেগম জিয়ার বাড়ির ইস্যু, তারেক-কোকোর মামলার ইস্যু আলাদা করে আনার দরকার হয় না_ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এসব ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বলেই আন্দোলনের চেহারা সরকারের কাছে ভীতিকর স্তরে উন্নীত করা যায়নি। একটি দল যখন সরকারে যেতে চায়, বহুদিক তাকে নিবেচনায় নিতে হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের জাতীয় নির্বাচন সামনে। প্রধান দুই জোটই তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে। এর কারণ জনগণ এবং বিশেষ করে একটি সরকার পরিচালনায় রাষ্ট্রের যেসব শক্তিকেন্দ্র ওতপ্রোতভাবে জড়িত বা গুরুত্বপূর্ণ- তারা এবং বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রসমূহ ও উন্নয়ন সহযোগী যারা আছে, তারা ওই দলের সম্ভাব্য নেতৃত্বকে কীভাবে গ্রহণ করছে তা যাচাই করে তার পক্ষে সহানুভূতি আদায় করা। বিএনপি এমন একটা ধারণা সর্বত্র ছড়িয়েছে যে, তারা এবার ক্ষমতায় এলে বেগম খালেদা জিয়া নন, তারেক রহমান সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। মনে হয় এই বার্তাটি ভুল বার্তা ছিল। এতে বিএনপি বোধ হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের প্রচ্ছন্ন বা মৌন সমর্থন এই ব্যাপারে ম্যাটার করে তারা বোধহয় এখনো তারেক রহমান বা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অধীনে থেকে কাজ করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। তাদের কাছে বোধহয় এটা এখনো স্বস্তিদায়ক নয়। এর পেছনে অব্যক্ত কিছু কারণও আছে। বিএনপিকে বোধহয় এ কথাটি ভাবতে হবে যে, জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে আর তারেক রহমান বিলাত থেকে এসে প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন, তেমনটা নাও হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাকে দেশে আসতে হবে, সব বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, একদিকে গণআন্দোলন ও অপরদিকে আইন-আদালতের মাধ্যমে তাকে অভিযোগমুক্ত বীরের মর্যাদা লাভ করতে হবে। যেসব স্তাবক-মোসাহেব তার বন্দনায় বেহুঁশ হচ্ছে তারা তার প্রকৃত বন্ধু নয়, তারা ক্ষতি করছে তার। বেগম খালেদা জিয়াকে এই বিভ্রম দূর করতে হবে যে, তিনি মারাত্দক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তিনি আর পারছেন না, পারবেন না, এই প্রচারটা সত্য নয়। কেননা, মনে হয় নানা অসুবিধা-দুর্বলতার পরও দেশ-বিদেশের সর্বমহলে বেগম জিয়াই বিএনপির একমাত্র এবং একমাত্র গ্রহণযোগ্য নেতা।
পাঁচ সিটি নির্বাচন এবং সাম্প্রতিক দুই ধাপ উপজেলা নির্বাচন প্রমাণ করেছে, বিএনপি জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক বেশি সমাদৃত। বাড়াবাড়ি না করলে ইতোমধ্যে দুই ধাপ নির্বাচনের যে ফলাফল জানা গেছে সেই ২১২ উপজেলায় ৩০-৩৫টির বেশিতে তারা জিততে পারত না। কিন্তু জনগণ পক্ষে থাকলেও অদক্ষ, অরাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, বিত্তশালী, পেশিবাজ এবং গণবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক মেধাহীন অবসরপ্রাপ্ত কিছু আমলার হাতে দল বন্দী হয়ে যাওয়ায় বিএনপি এখন পথহারা পাখি। কোনো কমিটি নয়, কার্যত এদের হাতে দলের নাটাই তুলে দিয়ে এখন হাবুডুবু খাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক অতীত সমৃদ্ধ বিচক্ষণ নেতৃত্বই 'ঢেউয়ের সাগর' পাড়ি দিতে বেগম জিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। একসময় দেখা গেছে, বেগম জিয়া সামনে দিয়ে হেঁটে যেতেন, দল তার পেছনে হাঁটত। যে-ই স্বার্থবাজরা দল দখল করল এবং বেগম জিয়া পেছনে হাঁটতে লাগলেন, সে-ই পেছাল দল, পেছালেন তিনিও। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চালবাজদের কথা না শুনে আবারও তাকেই গিয়ে দাঁড়াতে হবে সামনে। তার পেছনে এগিয়ে যাবে দল, দলের নিবেদিতপ্রাণ মাঠকর্মীরা, সমর্থকরা, তাকে ভালোবাসে তেমন অগণিত জনতা। বিএনপির এখন জেগে ওঠার দিন। মড়ার ঘুম না ভাঙলে জনগণের কী এমন ঠেকা তাদের খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জাগিয়ে তোলার? জনগণই যদি সব করবে তো বিএনপিকে তাদের কীসের প্রয়োজন?
টীকা : সম্প্রতি বিএনপি ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে তার পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দলের দুই নীতিনির্ধারক বলছেন, ব্যর্থতার কারণেই নাকি তাকে সরে যেতে হচ্ছে। জনমনে প্রশ্ন, যারা এ কথা বলছেন তারা কি সফল? সাদেক হোসেন খোকা তো ছোট নেতা। যারা দলের হর্তাকর্তা, নীতিনির্ধারক, তারা সবাই সফল হলে একজন খোকার ব্যর্থতায় কি আসে যায়? বলেছেন, খোকা নাকি তৃণমূল নেতাদের দ্বারা নির্বাচিত নন। হান্নান শাহ আর গয়েশ্বর রায় কি নির্বাচিত?
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট। (বাংলাদেশ, ১৬/০৩/২০১৪)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন