৭ নভেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে স্মৃতিতে উজ্জ্বল, চেতনায় ভাস্বর এক অনন্য দিন। তবে এটাও সত্য যে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে এর মূল্যায়ন এক নয়। কারো কাছে নন্দিত, আবার কারো কাছে নিন্দিত। দিনটির মূল্যায়নে দুই পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যের মূলে রয়েছে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থচিন্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মিত্র-অমিত্র নির্বাচনে মতদ্বৈধ। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এ দেশে শুধু সরকারের চরিত্র নয়, রাষ্ট্রের আদর্শগত চরিত্রেরও মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হয়। সেদিন প্রকৃত অর্থেই একটি বিপ্লব সংঘটিত হয়। সেদিনের কাহিনী ছিল সম্পূর্ণ নতুন। একটি বিপ্লবে যেসব বৈশিষ্ট্য থাকে, তার প্রায় সবই তাতে বিদ্যমান ছিল। হ্যানা অ্যারেন্ডটের (Hanna Arendt) মতে, 'বিপ্লবে ইতিহাসের গতিধারা হঠাৎ করে নতুন এক মোড় নেয় এবং সূচনা হয় সম্পূর্ণ এক নতুন কাহিনীর, যে কাহিনী এর আগে জানা যায়নি বা বর্ণিত হয়নি।' ওই বিপ্লবের মাধ্যমেই বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে পাদপ্রদীপের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের 'রাখাল রাজা'খ্যাত জেনারেল জিয়াউর রহমান। জিয়াকে বলা হয় বাংলাদেশের অদৃষ্টের সন্তান। ইতিহাসের সঙ্গে সাক্ষাৎকার যেন তাঁর ললাটের লিখন। ১৯৭১ সালের মার্চে এ দেশের স্বাধীনতাপাগল মানুষের আকাঙ্ক্ষা প্রতিধ্বনিত করে তিনি যখন বললেন, 'আমি মেজর জিয়া বলছি...সেদিন তিনি চট্টগ্রাম সেনা ছাউনির এক অখ্যাত মেজর মাত্র। কিন্তু ওই একটি ঘোষণা তাঁকে অমরত্ব দিল, অন্তর্গত করে নিল ইতিহাসের। বর্তমান লীগ শাসকদের তাঁর প্রতি ক্রোধের কারণ প্রথমত এখানেই। কেননা ওই পবিত্র দায়িত্বটি পালন করার কথা ছিল তাদের, ঘোষিত হওয়ার কথা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠে। ইতিহাসের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার ঘটে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ সালে।
৭ নভেম্বর নিয়ে বিশদ আলোচনা করতে হলে অবশ্যই এর আগে সংঘটিত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের দুটি ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিল মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক। কেন ঘটেছিল ১৫ আগস্টের ঘটনা? এ ব্যাপারেও ক্ষমতাসীনদের বিশ্লেষণের সঙ্গে সবাই একমত নন। ওই ঘটনার বিপক্ষে যাঁরা বলেন, তাঁদের বক্তব্য এখন আমরা নিত্যই শুনি। রেকর্ডের উল্টো দিকটাও শোনা বা শোনানো দরকার। এ সম্পর্কে তখন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করছি। ইত্তেফাক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু 'প্রসঙ্গ : দেশ ও জাতি' শীর্ষক এক উপসম্পাদকীয় নিবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, 'এই নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনটি সাধিত হইয়াছে প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে, সেনাবাহিনী দ্বারা। এই পরিবর্তনে তরুণ সামরিক অফিসারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বলা যায়, দেশের একটা অসম্ভব দুঃসহ অবস্থার বিলোপ ঘটাইয়াছেন তাঁরা এবং জাতির সামনে সৃষ্টি করিয়াছেন চলার উপযোগী পথ ও সুযোগ। এই কাজের জন্য তাঁরাও গোটা জাতিরই অভিনন্দন লাভের যোগ্য।... ব্যক্তিপর্যায়ে কাহারও জন্য দুঃখ-শোক বা সহানুভূতি প্রকাশের চাইতেও জাতীয় স্বার্থের দিকটা বড় করিয়া দেখার যে আবশ্যকতা, সেই বিবেচনায় এই নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনকে স্বাগত জানাইতে হইবে।'
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডটি ছিল নিষ্ঠুর। দুই কন্যা- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের আর কেউ বেঁচে ছিলেন না। শিশু রাসেলকেও বাদ দেওয়া হয়নি। বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে, তেমন একটি নৃশংস ঘটনার পর বঙ্গবন্ধুর কোনো অনুসারী-সমর্থককে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। এখন অনেকে কাঁদেন। জানি না, ১৫ আগস্ট কোথায় ছিল এই কান্না, এত চোখের জল? আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডকে বর্তমানে এভাবেই বিশ্লেষণ করে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে একে একটি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি দালাল ও তাদের অন্যান্য বিদেশি মিত্ররা এ কাজটি করেছে এবং তারা এখনো সক্রিয়।
ভারতীয় লেখক অমিত রায়ের একটি বিশ্লেষণ দিয়ে আমরা অন্য প্রসঙ্গে যাব। ১৯৭৫ সালের ১৭ আগস্ট লন্ডনের সানডে টেলিগ্রাফে প্রকাশিত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি লেখেন, "বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রক হলো শহরের বাসিন্দা মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এদের সমর্থনই মুজিবকে নেতা বানিয়েছিল, ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কিন্তু শাসনতন্ত্র সংশোধনের ফলে মুজিব তাদের সমর্থন হারিয়ে ফেলেন এবং সেদিন থেকেই নিজেকে অতীতের পাতায় তুলে দিয়েছিলেন। চারদিকে চাটুকার বেষ্টিত মুজিব সর্বব্যাপী গণ-অসন্তোষ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বরং উল্টা 'আমার জনগণ আমাকে ভালোবাসে, আমি তাদের ভালোবাসি'- এ কথা আওড়িয়ে মিথ্যা আত্মপ্রসাদ লাভ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর মেরুদণ্ডহীন সমর্থকরা তাঁকে বুঝিয়েছিল যে অর্থনৈতিক দুঃখ-দুর্দশা, শিল্প-কারখানার অচলাবস্থা, অপরিমেয় মজুদদারি ও চোরাকারবার এবং ক্রমাবনতিশীল আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যাদি মুজিবি খ্যাতির মুখে কিছুই না। সমস্যার মোকাবিলা না করে মুজিব ২৫ হাজার লোকের রক্ষীবাহিনী খাড়া করেছিলেন, যাতে সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সাহস না পায়।" আমার মনে হয়, তাঁর এই বিশ্লেষণের মধ্যে প্রাসঙ্গিক সব প্রশ্নেরই জবাব আছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগেরই প্রবীণ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ। তাঁর মন্ত্রিসভার সব সদস্যও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাকশাল মন্ত্রিসভার সদস্য।
(দুই)
ক্ষমতাচ্যুত বাকশালের একটি অংশ প্রতিবাদের সাহস না করলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। পাল্টা আঘাত হানার জন্য তারা সময়-সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সময়টা ছিল সম্পূর্ণ অগোছালো এবং রাজনীতিশূন্য। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল সশস্ত্র বাহিনীকেই তাদের উদ্দেশ্য সাধনের মোক্ষম মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়।
৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না তা স্পষ্ট, অভ্যুত্থানের পূর্বনির্ধারিত কোনো নেতাও ছিলেন না। পরবর্তীকালে জিয়ার ওপর যদিও নেতৃত্ব অর্পিত হয়, তা ছিল চলমান ঘটনার পরিণতি এবং সেনাবাহিনীতে তখন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বের কোনো বিকল্পও ছিল না। ৩, ৪ ও ৫ নভেম্বর- এই তিন দিন বাংলাদেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। খন্দকার মোশতাক তখন নামমাত্র প্রেসিডেন্ট। খালেদ মোশাররফের পছন্দে বিচারপতি সায়েম ৬ নভেম্বর সকাল বেলা প্রেসিডেন্ট পদে অভিষিক্ত হন। এই কয় দিন রেডিও-টেলিভিশন বন্ধ ছিল। ফলে দেশে কী ঘটছে, না ঘটছে কিছুই জানতে পারছিল না মানুষ। একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। বঙ্গভবনের 'মেজর গ্রুপের' সঙ্গে আপস করে, তাদের সব বন্দোবস্ত করে নিরাপদে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেও ক্ষমতা সংহত করতে পারেননি খালেদ মোশাররফ। বলতেই হবে, ১৫ আগস্টের ঔরসে এবং ৩ নভেম্বরের গর্ভেই ৭ নভেম্বরের জন্ম। ৭ নভেম্বরকে আজকের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে চলবে না। তাকে দেখতে হবে পঁচাত্তরের চোখ দিয়ে, বিশ্লেষণ করতে হবে তৎকালীন সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং জটিল ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ দিয়ে। ৭ নভেম্বরের বিপ্লবকে সিপাহি বিপ্লবও বলা হয়। আওয়ামী লীগ বলে 'সৈনিক হত্যা দিবস'। ১৮৫৭ সালে এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সিপাহি বিপ্লব হয়েছিল। ঔপনিবেশিক শাসক এবং তাদের অনুগত ইতিহাসবেত্তাদের মতে, সেই সিপাহি বিপ্লব ছিল 'সিপাহি বিদ্রোহ'। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু একে ব্রিটিশ ভারতে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য প্রথম বিপ্লব বলে অভিহিত করেন। কার্ল মার্কসের চোখে তা ছিল Frist India war of Independence.
৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানকে যারা 'সৈনিক-মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস' হিসেবে চিহ্নিত করে, তাদের আহাজারির কারণ মানুষ বোঝে না, তা নয়। ৭ নভেম্বর যে মহানায়ককে ইতিহাস অমরত্ব দিয়েছে তার প্রতি সাবেক গণবাহিনী নেতা হাসানুল হক ইনু গংয়ের বিষোদ্গার যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগানের আড়ালে ভিনদেশি প্রভুর স্বার্থরক্ষার জন্য ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ কিছু বিপথগামীর আর্তনাদ, তাও জনগণ বোঝে।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক, সামরিক বিশ্লেষকদের মতামতের নির্যাস এমনই দাঁড়ায় যে ১৯৭৫ সালে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে সংঘাত সৃষ্টির পেছনে দেশের ভেতর থেকে মহলবিশেষের উসকানি ছাড়াও সীমান্তের বাইরে থেকে ইন্ধন জোগানো হয়েছিল। ব্রিগেডিয়ার খালেদের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বরের কুদেতার সাফল্য নিয়ে সংশয় দেখা দিলে সীমান্তের বাইরের চক্রান্তকারীরা তাদের 'সেকেন্ড ডিফেন্স লাইন'কে সক্রিয় করে তোলে। খালেদের বিরুদ্ধে সাধারণ সৈনিকদের ক্ষোভ আঁচ করতে পেরে জাসদের 'গণবাহিনী' এবং 'বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার' কিছু লোক তাদের অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সঙ্গে ভিড়ে যায়। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মঈন দৈনিক প্রথম আলোয় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত স্মৃতিচারণায় উল্লেখ করেন, '৭ নভেম্বর প্রথম প্রহরে ওপরে উল্লিখিতদের কয়েকজন রেডিও থেকে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালাতে থাকে যে কর্নেল তাহের হলেন সিপাহি-জনতার বিপ্লবের নেতা। কিছুক্ষণের মধ্যে সাধারণ সৈনিকরা গিয়ে তাদের তাড়িয়ে দিলে বিপ্লবের বাণী সত্যিকারভাবে প্রচারিত হতে থাকে। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহের এরপর জিয়াউর রহমানের কাছে গিয়ে তাঁকে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত ব্রিগেডিয়ার আমিনুল হক তৎক্ষণাৎ বাধা দেন। ফলে তখন জিয়াকে আর নেওয়া যায়নি। ব্রিগেডিয়ার হকের আশঙ্কা ছিল, রেডিও স্টেশনে নেওয়ার কথা বলে পথিমধ্যে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পরিকল্পনা এঁটেছিল ওরা।' উল্লেখ্য, জেনারেল জিয়াকে রেডিও স্টেশনে না পাঠিয়ে একটি রেকর্ডিং ইউনিটকে জিয়ার বাসায় নিয়ে আসা হয়। এভাবেই ওই শুক্রবার সকালে তাঁর রেকর্ডকৃত ভাষণ প্রচার করা হয়।
ইতিপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত জাসদ নেতা মেজর (অব.) জলিল, আ স ম আবদুর রব ও মোহাম্মদ শাহজাহান মুক্তি পান ৭ নভেম্বর। মুক্তি পেয়ে তাঁরা জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে শ্রেণী সংগ্রামের উদ্দেশ্যে সৈনিকদের একত্র করার চেষ্টা চালান। এ উদ্দেশ্যে প্রচারপত্র ও লিফলেটে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা প্লাবিত করে দেওয়া হয়। বিপ্লবী 'সৈনিক সংঘর্ষের' ১২ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সৈনিকদের একত্র হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র জমা না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বলেও উল্লেখ করেছেন ম্যাসকারেনহাস তাঁর 'বাংলাদেশ : রক্তের ঋণ' গ্রন্থে। এভাবেই জেনারেল জিয়ার সঙ্গে গণবাহিনী আর বিপ্লবী সৈনিক সংঘর্ষের মোকাবিলার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যায়। সেনা সদরের নিরাপত্তার জন্য জেনারেল জিয়া যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে সপ্তম, নবম, একাদশ ও দ্বাদশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডো দলকে ৯ তারিখের মধ্যেই ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেনাবাহিনীর বেতন বৃদ্ধি, বাসস্থান ও পোশাকের প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবমাননাকর 'ব্যাটম্যান' প্রথা বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন জিয়া। এতে জওয়ানদের মনোভাব সম্পূর্ণ পাল্টে যায় এবং জাসদের হঠকারী রাজনীতি ও ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ড ব্যর্থ হয়ে যায়। এর পরই জাসদের বিরুদ্ধে সরকারি অভিযান শুরু হয় এবং মেজর (অব.) জলিল, আ স ম রব, হাসানুল হক ইনু ও কর্নেল তাহেরের ভাই ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে আত্মগোপন অবস্থা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কর্নেল (অব.) তাহেরকে। এর দুই দিন পরই ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে হাইজ্যাক করে জিম্মি রেখে তাহেরকে মুক্ত করার জন্য ভারতীয় দূতাবাসে হামলা করা হয়। সেই অভিযানে কর্নেল তাহেরের এক ভাই নিহত হন এবং আরেক ভাই গুরুতর আহত হয়ে বন্দি হন। তিনি এখন লীগদলীয় এমপি। এ ধরনের অনেক অশুভ তৎপরতা, সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবিলা করেই ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মূল চেতনাকে অক্ষুণ্ন, অম্লান রাখতে সক্ষম হন জেনারেল জিয়া। সিপাহি-জনতা ছিল তাঁর সঙ্গী-সারথী। জিয়াউর রহমানের ভূমিকার প্রশংসা করে ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন ব্যর্থ অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক ব্রিগেডিয়ার শাফাত জামিল Holiday পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'প্রকৃত প্রস্তাবে জিয়াই জাতিকে সার্বিক নৈরাজ্য থেকে রক্ষা করেছেন। ৭ নভেম্বরে রক্ষা করেছেন ভারতের পুলিশ অ্যাকশন থেকে (Zia in fact saved the nation from total anarchy and a possible police action from India on 7th november.)।
৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক তাৎপর্য সম্পর্কে তৎকালীন বাস্তবতায় এটাই বোধ হয় হতে পারে শেষ কথা বা চুম্বক কথা। অথবা সব ঘটনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার নির্যাস।
লেখক : সাংবাদিক
(কালের কন্ঠ, ০৭/১১/২০১৩)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন