Image description
 

যেকোনো জাতির সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ও বাঞ্ছিত ধন স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব। যথার্থভাবেই কবি প্রশ্ন করেছেন, ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?’ ইতিহাসে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে দেখা যাবে, যারা আত্মমর্যাদাহীন, নির্বোধ কিংবা যাদের মনুষ্যবোধের অভাব আছে, শুধু তারাই স্বাধীনতার মতো পরম ধনের মূল্য দেয়নি। তাদের স্বাভাবিক পরিণতি ঘটেছে ঘৃণা ও বিস্মৃতিতে। অন্যদিকে যারা আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন, ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্যকে রক্ষা করা যাদের জীবনবোধ, দায়িত্ব-কর্তব্যের অংশ, তারা জাতি হিসেবে ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়ের নায়ক।

 

শত বাধা-বিপত্তি, হাজারো প্রতিকূলতা ও অন্তরায়ের মধ্যেও যারা দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নিজ নিজ রক্ত ধমনির প্রবাহে অনুভব করেছেন, এই পবিত্র অনুভূতি ও উপলব্ধির জন্য অকুণ্ঠচিত্তে সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের কেউ পরাজিত করতে পারেনি। না কোনো বহিঃশত্রু, না কোনো অভ্যন্তরীণ স্বৈরশাসক। যেকোনো দেশ, যেকোনো জাতি একটি অনন্য সূত্রের ওপর দাঁড়িয়ে এক ও অভিন্ন কণ্ঠ সোচ্চার করে তুলতে পারে এবং সে সূত্রটির নাম জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।

 

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। শোষণ ও লাঞ্ছনা-বঞ্চনায় বহুবিধ সমস্যা এখানে জমে আছে। কিন্তু জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এই দেশ, এই জাতি গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ও কীর্তির ধারক। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এ জাতি কখনো আপস করতে শেখেনি। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেটাই প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরেও এ জাতি সেটাই প্রমাণ করেছে। যে কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আধিপত্যবাদী শক্তির নাগপাশ থেকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবিলায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মুক্তিকামী সিপাহি-জনতা অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে।

মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সমর্থনে দেশপ্রেমিক সিপাহি ও জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে ৭ নভেম্বর রাজপথে নেমে আধিপত্যবাদী শক্তির ইন্দনে খালেদ মোশাররফের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিহত করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল। এরই মধ্য দিয়ে স্বর্ণোজ্জ্বল দলিলে সোনালি অক্ষরে লেখা হয় বীর সেনানীদের নাম। আর দলিলের শিরোনামে শোভা পায় একটি নাম—মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর-উত্তম। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ রাইফেলস, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর বীর সিপাহিদের জাগ্রত চেতনা, বৈপ্লবিক সত্তার প্রকাশ ঘটে সেদিন। প্রমাণ করে, এ জাতির স্বাধীনতা খর্ব করার সাধ্য নেই কোনো চক্রের, কারো ক্ষমতা নেই দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার।

সেদিনের সেই নতুন ভোর জাতির জন্য ছিনিয়ে আনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, পরাভবহীন এক অপূর্ব আত্মপ্রত্যয়। সিপাহি জনতার মিলিত আবেগ, উল্লাস, জয়ধ্বনি, আনন্দের কল-কল্লোল ও সহস্র কণ্ঠের সেই উচ্চকিত নিনাদ সেদিন ঘোষণা করে সৈনিক এবং জনতার একাত্মতা।

১৭ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনে ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লবকে ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছে। এতে অনেকটা সফলও হয়েছিল দুর্বিনীত, প্রতিহিংসাপরায়ণ হাসিনা সরকার। কিন্তু ইতিহাস অমোচনীয় কালিতে লেখা। চাইলেই মুছে ফেলা যায় না। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শাসকের পতনের পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিপ্লবের চেতনায় ৭ নভেম্বর পালিত হয়েছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিপ্লব এবং সংহতি দিবসের গুরুত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

এবারের ৭ নভেম্বর অন্যবারের চেয়ে ভিন্ন মেজাজে উদযাপন করেছে বিএনপি। দিনটি উপলক্ষে সারা দেশে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, দলীয় প্রতীক ধানের শীষের পক্ষে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেছেন। যার মধ্য দিয়ে কার্যত বিএনপির নির্বাচনি যাত্রা শুরু হয়েছে। বিভাগীয়, জেলাসহ সারা দেশে আলোচনা অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রার পাশাপাশি জনসভা হয়েছে। এতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারকে প্রাধান্য দিতে দেখা গেছে।

বিএনপি প্রার্থী হিসেবে ২৩৭ জনের প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা করেছে। ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’-এর কর্মসূচি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় নির্বাচনি প্রতীক ‘ধানের শীষ’-এর পক্ষে প্রচার জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয় দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় সমাবেশসহ জনসংযোগের কর্মসূচির মাধ্যমে শোডাউন করেছেন।

ঢাকার সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ধানের শীষের নির্বাচনি পোস্টার, ব্যানার এবং প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়। সমাবেশে কর্মী-সমর্থকদের মুখে ছিল নির্বাচনি স্লোগান, নেতাদের বক্তব্য ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোনো চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।

নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির এই দৃঢ় অবস্থান কিংবা দৃশ্যত দেশ ক্রমেই নির্বাচনের পথে অগ্রসর হলেও নানা শঙ্কা ও সংশয় যেন পিছু ছাড়ছে না। জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি ছাড়াও আরো বেশ কিছু দাবি নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে। ‘সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে’ আঙুল বাঁকা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সরকারকে হাঙ্কি মাঙ্কি না করে তাদের দাবি অবিলম্বে মেনে নিতে বলেছেন তিনি। এমনকি ঢাকায় শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত ও সমমনারা। ঢাকা চলো কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছে।

বিএনপিও এর আগে সরকারের উদ্দেশে হুমকি দিয়ে রেখেছে। গণভোট, পিআরসহ আরো প্রায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জুলাই সনদ ইস্যুতে রাজনীতি শেষ পর্যন্ত সংঘাতে গড়াবে কি না—এমন প্রশ্নের মধ্যে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল। সে সময়ও এরই মধ্যে শেষ হতে চলেছে। সরকার বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা মতৈক্যে উপনীত হতে না পারলে সরকার সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবে। যতটা অনুমান করা যাচ্ছে—সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একদিনে করার দিকে পা বাড়াবে সরকার। এতে বিএনপির মতামত প্রতিফলিত হবে। সে ক্ষেত্রে জামায়াত ও তাদের সমমনারা কী করবে—সেটাই দেখার বিষয়। অবশ্য জামায়াতকে তুষ্ট করতে জুলাই সনদের সুপারিশ অনুযায়ী উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি প্রবর্তন করতে পারে সরকার। সেটি আবার বিএনপি মেনে নেবে কি না—সংশয় রয়ে গেছে।

নির্বাচন নিয়ে আরো চ্যালেঞ্জ আছে। পরিবেশ এখনো নাজুক বলে উঠে আসছে বিভিন্ন মূল্যায়নে। আগামী জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য করতে আট দফা সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)। বুধবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আইআরআইয়ের এক প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। আরআইআইয়ের প্রাক-নির্বাচনি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব প্রচেষ্টার পরও প্রাক-নির্বাচনি পরিবেশ এখনো নাজুক। রাজনৈতিক সহিংসতার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা, স্থানীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাসের প্রবণতা এখনো রয়েছে। জনগণের আস্থা বজায় রাখতে ধারাবাহিক যোগাযোগ এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ অপরিহার্য বলে মনে করছে আইআরআই।

আন্তর্জাতিক নীতি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রাক-নির্বাচনি মূল্যায়ন মিশন বাংলাদেশে পাঠায় সংস্থাটি। বাংলাদেশে ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে। নির্বাচনি পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে তারা নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা ২১টি বৈঠকে ৫৯ জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে আলোচনা করেন। তাদের আট দফা সুপারিশ ও মতামত গুরুত্ব বহন করে বৈকি। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনের নিরাপত্তাব্যবস্থা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে কথা বলছে।

জামায়াত দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আগে থেকেই নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছে। বিএনপি ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর মনে করা হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার আগেই দেশ নির্বাচনি ট্রেনে উঠেছে। তবে সহসাই যেন সে ট্রেন হোঁচট খেয়েছে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নির্বাচন যেন প্রচণ্ডভাবে চোখ রাঙাচ্ছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে প্রাণহানির ঘটনা এবং খোদ প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়াকে সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। গত বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর একই রাতে রাউজানে দলের দুই পক্ষে গোলাগুলি করেছে।

সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী রাজনৈতিক বিরোধে চট্টগ্রামে গত ১৩ মাসে খুন হয়েছেন ১৫ জন। এর মধ্যে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই ১০ জন খুন হয়েছেন। রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বেও চট্টগ্রামে খুনোখুনির ঘটনা বেড়েছে। শুক্রবার রাতেও এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। অপরাজনীতির বলি হয়েছেন বলে প্রাথমিক খবরে জানা গেছে।

নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের খুনোখুনি ক্রমাগতভাবে বাড়ার আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ আছে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের দিন চট্টগ্রাম শহরের আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়ি থেকে ৯৪৫টি অস্ত্র লুট হয়েছিল। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৭৮০টি অস্ত্র। সারা দেশে লুট হওয়া বহু অস্ত্র ১৫ মাসেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধার না হওয়া অস্ত্র নির্বাচনকালে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচন ভন্ডুলে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের আশঙ্কা দিন দিন প্রবল হচ্ছে।

সংসদ নির্বাচনের মাত্র তিন-চার মাস আগে এমন পরিস্থিতিতে শঙ্কিত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও। চাউর আছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে তারেক রহমানের দেশে ফেরা বিলম্বিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রার্থী ও কর্মীদের নিরাপত্তার কী উপায়? বিশেষ করে নির্বাচনি জনসংযোগের সময় বিএনপি প্রার্থীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামের ঘটনায় বিবৃতিতে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতকারীরা আবার দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। মির্জা ফখরুলের বক্তব্য উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। কিন্তু নৈরাজ্যবাদীদের জন্য পটভূমি তৈরিতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বর্তমানে সক্রিয় দলগুলো পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে কি না—সেটিও মূল্যায়নের দাবি রাখে। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে মতভিন্নতাকে বিরোধ ও সাংঘর্ষিক পর্যায়ে নিয়ে গেলে পতিত শক্তি তো সুযোগ নেবেই।

স্মরণ রাখা দরকার, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো পঁচাত্তরের সাত নভেম্বর ও চব্বিশের ছত্রিশ জুলাই বা ৫ আগস্টের চেতনাকে ধারণ করে নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে দলগুলোকেই চড়া মূল্য দিতে হবে। এই দেশের গহিন নদী, নীল বিস্তৃত আকাশ, বৈচিত্র্যময় নিসর্গের মতোই স্বাধীনতা এ জাতির প্রিয় উচ্চারণ, বহুল-বাঞ্ছিত প্রাণের ধন। বারবার আগ্রাসী ফ্যাসিস্ট শক্তি এই দেশের ওপর লোভ-লালসার চকচকে সবুজ চোখ রেখেছে। জাতি কখনো তাদের বিরুদ্ধে একমন একপ্রাণ হয়ে রুখে দাঁড়াতে দ্বিধা করেনি। এ জাতির বহমান ইতিহাসের ধারায় সাময়িক ব্যর্থতা হয়তো আছে। জগতের কোনো জাতির ইতিহাসে তা নেই? কিছুকাল দুঃখ-দুর্ভোগের চিহ্নও হয়তো আছে। রাজনীতিকরা দেশের জন্য করেন। দেশের অনেক অর্জনও তাদের হাত ধরে। আবার রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভুলে জাতি বারবার বিপদগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘ স্বৈরশাসনে পিষ্ট হয়েছে। রাজনীতিকরা ঘি খেতে আঙুল বাঁকা করতে পারেন, চামচ দিয়েও খেতে পারেন। সেটি তাদের ব্যাপার। তবে জনগণ শান্তি ও স্বস্তি চায়। ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন চায় না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব আবার ভুল করলে ছাত্র-জনতার কাঠগড়ায় কিন্তু তাদের দাঁড়াতেই হবে।

এম আবদুল্লাহ

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক