Image description
 
 

বর্তমানে দেশে অগ্নিকাণ্ড ব্যাপকভাবে বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট কাজ করেছে সেখানে। এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডে তিনজন ফায়ার ফাইটারসহ ৪ জনের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। মিরপুরের শিয়ালবাড়ির অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং দগ্ধ হয়েছে অনেকে। এ ঘটনায় গুদামের রাসায়নিক পদার্থ পুড়ে ক্লোরিন গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছে। ফুসফুস, ত্বক, নাক, কান গলার জন্য ক্লোরিন গ্যাস ব্যাপক ক্ষতিকর। ফলে সেই এলাকাজুড়ে বিশেষ সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। 
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সারাদেশে ২৬ হাজার ৬৫৯টি এবং দিনে গড়ে ৭৩টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি খুবই স্পর্শকাতর। এটি মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয় এবং চরম মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। অথচ অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশে কোনো উন্নত পরিকল্পনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি অগুনের ঘটনা ঘটে ঢাকা শহরে। এর মূল কারণ হলো অপরিকল্পিত নগরায়ন।

 

শহরের যেখানে-সেখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠেছে রাসায়নিক কারখানা, কাপড়ের মার্কেটসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের গুদাম। ছড়ানো-ছিটানো বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ রাস্তাঘাটে অহরহ দেখা যায়। এজন্য শহরের কোনো স্থানে অগ্নিকা- হলে তা অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটায়। এছাড়া বিড়ি-সিগারেটের আগুন ফেলায় অসতর্কতা, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো, রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যাবহারে অসাবধানতা, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অসতর্কতা, দুষ্কৃতকারীদের দেওয়া আগুন, গ্রামে গৃহস্থালির কাজের আগুন প্রভৃতি কারণে সচারাচর অগ্নিকা- ঘটে থাকে।

অনেক বাসাবাড়িতে এলোমেলোভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকার ফলে অগ্নিকা-ের ঝুঁকি বাড়ে। অনেকে রান্নাঘরে অল্প দামে অনুমোদনবিহীন গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করে থাকে, যা অধিক বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে থাকে। ঢাকা শহরের নগর ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এ ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ না নিলে ঢাকা শহর একসময় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বা কারখানাগুলো সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো দেশের অনুন্নত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। দেশে পর্যাপ্ত ফায়ার স্টেশনের সংকট রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। উন্নত দেশের ফায়ার সার্ভিসে এখন ড্রোন, রোবট ও রিমোট নিয়ন্ত্রিত গাড়ি ব্যবহার করে ঝুঁকিহীনভাবে দ্রুত আগুন নেভানো হয়ে থাকে। আমাদের মতো অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ দেশের ফায়ার সার্ভিসে এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তির সংযোজন অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া ভুল তথ্যের কারণে ফায়ার ফাইটারদের জীবন আরও অনিরাপদ হয়ে উঠছে। গাজীপুরের টঙ্গীতে গুদামের ভেতরে থাকা অজ্ঞাত কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরণে ফায়ার ফাইটারের মৃত্যুতে এটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 
এজন্য দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের সামনে সচেতনতামূলকভাবে সাইনবোর্ডে বিপজ্জনক পদার্থের নাম লেখা থাকা দরকার। শহরের মার্কেটের সকল দোকানপাটে ভালো মানের ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখতে হবে এবং সবাইকে এর সঠিক ব্যবহার শিখতে হবে। এছাড়া অনেক সময় দূরবর্তী স্থানে, কিংবা গ্রামের রাস্তায় ফায়ার ফাইটারদের পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসে বিকল্প গাড়ির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

 

অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে দেশের ফায়ার সার্ভিসে আধুনিক যন্ত্রপাতি (পিপিই) সরবরাহ করা জরুরি। এছাড়া, উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ফায়ার ফাইটারদের বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের উদ্যোগে দেশের সর্বত্র অগ্নিনির্বাপণে করণীয় সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক সেমিনারও আবশ্যক।

 

মো. জাহিদ হাসান

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া